জেম কারাচার নাম
শুনেছো ?
উঁহু
আনাতোলিয়ার পপ সিংগার ।
কি রকম বলতো ? রোম্যান্টিক
রেভেল্যুশনারি ।
একটা গাছের নিচে সবুজ
মলমলে ঘাসের গালচে । দুটো সুনটুনি মুনটুনি হলুদ ফুল ঘাসের ভেতর থেকে মাথা তুলে চোখ
পিটপিট করে আমাদের বন্ধু মেসুট এরজানের গপ্প শুনছে । গাছের ছায়া ধীরে ধীরে লম্বা
হচ্ছে । আলসেমি জড়িয়ে ধরছে বেসামাল । গরমগরম কাবলি ছোলা ভাজা কাগজের ওপর । বে-ফিকর
বসে আছি । যেন অনন্ত সময় । কোনো তাড়া নেই । সবুজের গোলা রঙে ডুবে গেছি কখন !
জেম কারাচা প্রোগ্রেসিভ
সং গাইত বুঝলে ? পোয়েটিক
প্রোগ্রেসিভ । বুঝলে তো ?
মেসুট এরজানকে কী করে বোঝাই ?আমি আমার দেশের
যে অঞ্চলের বাসিন্দা এগুলো সেখানে নেহাতই ক্লিশে ?
হ্যাঁ , একটু একটু জানি
বটে !
মেসুট কিঞ্চিত আশ্বস্ত ।
জেম কারাচা ,নানান দল টল
বানিয়েছিল , শেষে দেরভিশ নামে
একটা ব্যান্ড খোলে । সেটাও বন্ধ হয়ে যায় । আমাদের দেশে এক টালমাটাল সময়ে জেমকে
সরকারের চাবুক খেতে হয়েছিল । দেশছাড়া হয়ে জার্মানি চলে গেল । গ্রেপ্তারের ওয়ারেন্ট
ছিল । দেশে কিছুতেই ফিরতে পারেনি । অনেক পরে সরকার ওকে ফিরিয়ে আনে । কি জানো ? ওতো খুব পপুলার
ছিল । যখন দেশে এলো সেই প্রজন্মের লোকজনও এরমধ্যে বদলে গেছে ।
জেম প্রথম দিকে কার গান
গাইতো জানো ?
কার ?
নাজিম হিকমতের । সেও তো
আমাদের হৃদয়ের কবি , রোম্যান্টিক
রেভল্যুশনারি । নাজিম কতদিন জেল খেটেছিলেন , দেশের বাইরে ছিলেন ।
মেসুটকে সুভাষ
মুখোপাধ্যায়ের অনুবাদের কথা , জেলখানার চিঠি, সব বলে দি ।
রিয়ালি ? প্রাউদ ! তোমরা
নাজিমকে জানো !!
তোমাকে তো একটা দারুণ কথা
বলার ছিল । আরে কী আশ্চর্য ! এই যে আমরা ফুলহাম গুলহানে পার্কে বসে আছি জানো এখানে
কী হয়েছিল ?
কী হয়েছিল মেসুট ?
“My head foaming clouds, sea inside me and out
I am a walnut tree in Gulhane Park
An Walnut tree knot by knot, shred by shred
Neither you are aware of this , nor the police …
Give me a break, erase the smile of my eyes
I am a Walnut tree in Gulhane park ….”
নাজিম গুলহানে পার্কে
একটা ওয়ালনাট গাছের নিচে দাঁড়িয়ে তার বান্ধবীর জন্য অপেক্ষা করতেন । সেদিনও
এসেছিলেন । তখন তিনি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন । গ্রেপ্তারের পরোয়ানা । পুলিশ
ঘুরঘুর করে সর্বত্র । তা,
তিনি সেদিন এলেন , কিন্তু দেখলেন
পুলিশ এসে গেছে । আরো দেখলেন বিকেলের আলো মেখে বান্ধবীও এসে গেছে । নাজিম সঙ্গে
সঙ্গে আখরোট গাছে লুকিয়ে পড়লেন । বান্ধবী , হতাশ ভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চলে গেল । পুলিশ ও
চলে গেল কিছুক্ষণ পরে । সেই আখরোট গাছ নাজিমকে জড়িয়ে লুকিয়ে রাখলো । কবি একটা আস্ত
গাছ হয়ে একরাশ কষ্ট নিয়ে বেবাক দাঁড়িয়ে রইলেন ।
দেখেছিলাম , একদিন গায়িকা
সুভদা পরাদকর শুধু গান গাইছিলেন না , নিজেই একটা গান হয়ে উঠছিলেন ধীরে ধীরে আমাদের
সামনে । একটা মূর্তিমান গান চোখের সামনে । দেহাতীত । তাই হঠাৎ আমার প্রিয় কবি কেমন
গাছ হয়ে গেলেন তার কবিতার ভেতর দিয়ে , আজো হয়ত দাঁড়িয়ে আছেন , মেঘলা মাথা , এক সমুদ্র উথাল
বুক । ভালোবাসার কাঙাল ।
শোনো আরো মজার কথা , এই কবিতাতে সুর
দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে কে শুনিয়েছিলো জানো ? ওই জেম কারাচা ।
আরে ! এতো ইত্তেফাক !
জীবনের জাদু ।
সুপর্ণা , চেভিজ আআজ চেভিজ
আআজ ! মেসুট চেঁচায় ।
আমি তড়াক করে লাফিয়ে উঠি
। সাপ খোপ নয় তো ! কেউ বেমক্কা চেঁচালেই আমার আবার সাপের কথা প্রথমে মনে আসে ।
লুক আপ ! এটা একটা আখরোট
গাছ ! আমরা এতক্ষণ বসে আছি !এর নিচে !
কোত্থেকে একরাশ মেঘ করে
এলো । ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি এলো । কোত্থেকে উথাল সমদ্রের হাওয়ায় ভেসে ভেসে গুলহানে
পার্ক থেকে বেরিয়ে আসতে আসরে আমি বল্লাম্ এই যা ! কোন ছবি নেওয়া হল না যে ।
ডোন্ট ক্যাপচার মোমেন্টস
অলয়েস !
শনশন পায়ে চলতে চলতে
মাথায় জোনাকিরা ফুরফুরিয়ে উঠল ।
বলো তো , কবি যখন গাছ হয়ে
যায় তখন কী হয় !
শাওন আতা হ্যাঁয় , ঘুমর ঘুমর ঘুম
ঘুম ।