Wednesday 19 June 2019

স্মৃতিগন্ধ ঃ পেত্রা ।।





নিশিগন্ধ


রোমাঞ্চকর রাত । অন্ধকার রাত সহোদরারা মত জড়িয়ে ধরেছে মাথার ওপর খোলা আকাশ সে আকাশও পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমস্ত নক্ষত্ররা জেগে উঠছে একে একে   তারা থেকে ঝরে পড়ছে বিন্দু বিন্দু সুগন্ধ । সে সুগন্ধ আমাদের সমস্ত শরীরে ।  তারার ভেজা  ভেজা  গন্ধ হংসধ্বনি রাগ হয়ে ঝরে পড়ছে   অঙ্গ সুগন্ধন চন্দন মাথে । অন্ধকারে পথ চলছি ।  অন্ধকারের একটা নিজস্ব আলো আছে সেই আলোয় পথ চলছি একা পথিক আমি নই সঙ্গে চলেছে অনেক অনেক সহযাত্রী
পায়ের নিচে পাথুরে পথ কখনো বেশ সমতল ,কখনো  এবড়ো খেবড়ো কখনো উঁচু নিচু অন্ধকারে ভালো ঠাহর হয় না কখনো দিশেহারা লাগে , কিন্তু এই যে বয়ে যাচ্ছে  জনস্রোত তার  একটা বেবাক ঢেউ হয়ে ভেসে চলেছি অন্ধকারের সেই আবছা আলো দেখিয়ে দিচ্ছে চারদিকে ঘিরে আছে বিশাল  বিশাল পাথুরে পাহাড় মাথার ওপর পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশে  জ্বল জ্বল করছে তারা  অন্ধকারের শুধু নিজস্ব আলোই নয় তার  একটা সুবাসও আছে । পথ চিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেও ।

খাতায় কলমে  লেখা আছে দু’কিলোমিটারের মতো রাস্তা কিন্তু মনে হচ্ছে এ এক অনন্ত পথ কখনো মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে নিচ্ছে কেউ কিন্তু সমস্ত পরিবেশে বড় বেমানান সেই কৃত্রিম আলো নিভিয়ে দিচ্ছে সবাই সঙ্গে সঙ্গে মাঝে মাঝে জ্বলে  উঠছে ক্যামেরার আলো যে ছড়ানো খোলা  পথ দিয়ে দল বেঁধে সবাই হাঁটছিলাম সে পথ সরু হচ্ছে ক্রমশ অন্ধকারেও বোঝা যাচ্ছে একটা প্রশস্ত জায়গা ছেড়ে সঙ্কীর্ণ পথে ঢুকে পড়ছি ধীরে ধীরে  

অন্ধকারে পথ নির্দেশ দিচ্ছে  মায়া লন্ঠনের আলো ।  ব্রাউন পেপারের ঠোঙার মধ্যে বালি , সেই বালিতে মোমবাতি বসানো তার অদ্ভুত নরম হালকা  আলো আমাদের পথ ফলক সারা পথ জুড়ে এঁকে বেঁকে চলে গেছে  অজস্র অগুনতি আলোঠোঙা সে কী মায়াময় অনুভূতি অন্ধকার চরাচর পাথুরে প্রকৃতি আকাশ ভরা তারার মেহফিল নিচে কাগজমোড়া আলোর নিশানা  স্তব্ধ চরাচরে দল বেঁধে আধুনিক মানব মানবী চলেছে কাদের  ফেলে আসা পথে ?  কতগুলো অক্ষম শব্দ দিয়ে সেই শিহরণ আর অনুভূতিকে   বোঝানো  কি যায়  ?





পথ সরু হয়ে এলো হঠাৎ নিশিগন্ধ হলো তীব্র । অতি বিশাল আকারের  দুটি পাথরের পাহাড়ের ভেতর দিয়ে সরু পথ গিরিখাত  ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষ জন এখন লাইন করে চলছে এতক্ষণ বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা খোলামেলা থেকে গুমোট হয়ে আসছে চারপাশ সরু ফাটলের ভেতর দিয়ে মাথা তুলে চিলতে আকাশ চোখে পড়ে পায়ের তলার পথ এখন অনেকটা মসৃণ কিন্তু দুই পাহাড়ের মধ্যে হাওয়া চলছে না
আমরা ঢুকে যাচ্ছি কবেকার সেই প্রাচীন ইতিহাসের রানি পেত্রা শহরের পেটের মধ্যে বড় নাটকীয় সেই প্রবেশ ভূমিকম্পে দু ভাগ হয়ে যাওয়া এই সরু পথটিকে বলা হয় “সিক “ এই সিক হল জর্ডানের একসময়ের রানিমৌমাছি   পেত্রার প্রবেশ পথ চারদিকে বিশাল দৈত্যের মতো পাহাড়ের পাঁচিল আর এই লম্বা সরু গিরিখাত । তাই রানি ছিলেন বড়ই সুরক্ষিত । এই প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা পথকেই একটি নিরাপদ প্রবেশ সরণি বানিয়েছিল সেইসব  আশ্চর্য মানুষগুলো , খ্রিস্টের জন্মের অনেক  আগে থেকেই   



এখন আমাদের দুই পাশে পাহাড় মায়া লন্ঠনের আলোর নিশানা দেখে  দেখে এগিয়ে চলেছি আঁকা বাঁকা পথ অচেনা লোক অথবা শত্রু কেউ ই খুব সহজে সেই সুরম্য নগরীতে ঢুকে যেতে পারতো না  বানিজ্যে বসত লক্ষ্মী । ধনী সদাগরদের অট্টালিকা ছিল এখানে  সভ্যতার প্রাণ ভোমরা ছিল ধন , অর্থ । একটি বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতা আগাগোড়া।
নেশাড়ুর মতো কত টা যে পথ হেঁটেছি বুঝতে পারছি না মাঝে মাঝে কাদের যেন গলা শুনতে পাচ্ছি মনে হচ্ছে এই বোধহয়  পথ শেষ হয়ে এলো , ওই বাঁক টা ঘুরলেই আমরা পৌঁছে যাব , যেখানে যাবার কথা আবার কারা যেন কথা বলে   একটা গুমগুমে হালকা প্রতিধ্বনি “হেবা , হেবা , হেবা তুমি কোথায় কোথায়  কোথায় ? “ কেউ যেন হেবা নামের কোনও মেয়ের জন্য অপেক্ষা করেছে আবার শুনি ,কথা গুলো কেটে কেটে যাচ্ছে “ আজ এসেছি এসেছি এসেছি “ “ দুশারার মন্দির মন্দির মন্দির “
ভাবলাম , পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে নানান ভাষায় কথা কইছে , সেগুলোই  জড়িয়ে পাকিয়ে অমন শোনাচ্ছে

হঠাৎ  ঠাণ্ডা ফুরফুরে  হাওয়া গায়ে এসে লাগলো  দুই পাহাড়ের মধ্যে এই সরু পথ এবারে খোলা জায়গায় এসে পড়বে মনে হচ্ছে   আচমকাই সেই পথ,  বাঁক ঘুরে শেষ হল   ঠোঙা লন্ঠনের আলো এবারে সারি সারি বসানো আছে একটা ছড়ানো জায়গা জুড়ে মাটিতে  বসে আছে অনেক লোক হাতড়ে হাতড়ে আমরাও  গিয়ে বসি বুঝতে পারি অসমান জমি   ধুলোবালির মধ্যেই বসে পড়ি কার্পেট পাতা আছে কিন্তু লোক তার থেকে অনেক বেশি আবছায়ায় দেখলাম  কিছু বেদুইন ছেলে লোকজন বসানোর দায়িত্বে আছে নির্বাক লোকজন আর টিমটিমে লন্ঠন বিস্ময় নামে এক অদৃশ্য জাদুকর সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে চুপচাপ অন্ধকার টুপটাপ নিশিগন্ধ ।
হঠাত  ভেসে এলো জাদু বাঁশির আওয়াজ মরুভূমির যাযাবর সুর , অন্ধকারের গভীর  থেকে কেউ একজন গান ধরল সেই বাঁশি বাজনা আর গান থেমে গেলে এক গমগলে গলা বলে উঠল , “নাবাতিয়েনদের ভূমিতে স্বাগত , পেত্রায়  স্বাগত এই আমাদের বহু প্রাচীন সভ্যতা “    আরও কত কথা সে বলেছিল , কিছু শুনেছি, কিছু শুনিনি যেই তার  কথা শেষ হল অমনি ঝাঁ করে জ্বলে উঠলো আলো  




আমাদের সামনে অন্ধকার ফুঁড়ে জেগে উঠল প্রথম শতাব্দীর ক্যারাভান শহর পেত্রার” এল খাজনেহ বা ট্রেজারি” বিরাট এক সৌধ ,  পাথর কেটে  যারা বানিয়েছিল তারা কি দানব ছিল ? আধুনিক মানদন্ডে  পৃথিবীর সপ্তম  আশ্চর্যের একটি সে এক অদ্ভুত রাত  জীবনের এক অবিস্মরণীয়  অভিজ্ঞতা  
এ হল , রাতের পেত্রা সপ্তাহে তিনদিন দেশ বিদেশের অগণিত পর্যটক এই জাদুসময়ের শরিক হয়ে থাকে  
ছোট অনুষ্ঠানটি শেষ হবার পরে ট্রেজারির ওপর নানান আলোর খেলা বিস্ময়ের ঘোর কেটে এখন উল্লাসের পেখম নাচ ছবির পর ছবি উঠছে
এরই মধ্যে দেখি আলো মাখা সেই প্রাচীন সমাধি সৌধের সামনে একটি মেয়ে ভারতের ইয়োগা শুরু করেছে আহা ! soak up the atmosphere এমনই তো হওয়া উচিত ! মুগ্ধতা কাটতে আমার বিন্দুমাত্র সময় লাগলো না পেছনে তাক করা ক্যামেরা তার ইয়োগার নানা ভঙ্গি টুকে রাখছে ,আর দু মিনিটের মধ্যেই ফেসবুকে  ইন্সটাগ্রামে ঢুকে যাবে দুদিন আগেই দেখেছি ডেড সি তে একটি মেয়ে ভেসে ভেসে একহাতে বই আরেক হাতে সরু সরবতের গেলাস নিয়ে ছবি তুলবে উফ , সে কি তোড়জোড় বারবার উল্টে পড়ে যাচ্ছে কিন্তু ছাড়ান নেই   সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি উঠবে লাইকের বন্যা বয়ে যাবে    মুহূর্তে বাঁচো , মুহূর্তে শেষ হও

ফিরে যাবার সময় মাথার  ওপর মস্ত বড় চাঁদ
নিশিগন্ধ আর চাঁদের আলোর প্রতিধ্বনি  বলে গেল, “ হেবা হেবা হেবা আরিয়ন আরিয়ন আরিয়ন কোথায় কোথায় কোথায় ? দুশারা, দুশারা দুশারা



সেই গিরিপথ বেয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম , তখন রাত ঢলে পড়েছে ।
প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে ইফতার চলছে এতোটা পথ হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত সবাই রেড কেভ হোটেল তো এখন আমাদের বন্ধুর বাড়ির মত মিন্ট লেমন হাঁক দিই পুদিনা লেবুর বরফ দেওয়া শরবত আর রাতের খানা, তোওফা   গরম লেন্টিল স্যুপ , সোজা কথায় মুসুর ডাল ।  মোটা মোটা আলুভাজা ,  চিজ ভরা সম্বুসক মানে সামোসা , পিটা রুটি , ভাত । মরুশহরে রাত ঝিমঝিমি   ঠান্ডি হাওয়া ইয়ে চাঁদনি সুহানি , অ্যায় মেরে দিল সুনা কোই কাহানি

  
জাদুগন্ধ


পরদিন সকালবেলা পেত্রা আরকিওলজিকাল পার্কে হাজির হলাম দস্তুর মতো তৈরি হয়ে অনেক হাঁটতে হবে যেই ঢুকে গেলাম , ওমা , একীই ? পর্দার পেছনে জাদুকর তখন নতুন এক মঞ্চ হাজির করেছেন কোথায় গেল রাতের অন্ধকারের টিমটিমে ঠোঙা লন্ঠনের আলোয় পথ চিনে চিনে আলো আঁধারি মায়াবী অভিযান ! দস্তুর মতো গায়েব !
আমাদের চারদিক জুড়ে হলুদ সোনালি পাথরের বিশাল বিশাল পাহাড় ফিকে গোলাপি রঙ উঁকি মারছে । কটকটে  নীল আকাশ   আমরা হাঁটতে শুরু করলাম পেত্রার দিকে , প্রাচীন পেত্রা , বনিকদের ক্যারাভানসরাই পেত্রা , সদাগরদের আড়তখানা, নাবাতিয়েনদের রাজধানী পেত্রা পেত্রা একটা গ্রিক শব্দ , এসেছে পেত্রস থেকে , মানে পাথর ।  
রাস্তা সেই একই রকম এবড়ো খেবড়ো  , পাথর কাঁকর বালিমাখা , কোথাও মসৃণ কোথাও উঁচু  নিচু , ঠিক রাতের বেলা যা অনুভব করছিলাম সকালের আলোয়  তাকে দেখা গেল  

রাতে ছিল মগ্ন যাত্রীদের প্রায় নিঃশব্দ পদচারনা আর  এখন গাধা , খচ্চর উট ঘোড়া আর তাদের ঘন কাজল পরা  বেদুইন মালিকদের তুমুল ফিরিওয়ালাগিরি নানা রঙের জ্যামিতিক নকশার কাপড় দিয়ে বসার ব্যাবস্থা এর সঙ্গে আছে টাঙা   টাইম মেশিন ঘুরিয়ে পিছিয়ে গেলাম কয়েক শতাব্দী একেবারে গল্পের বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা বায়োস্কোপ
সেই বায়োস্কোপ দেখতে দেখতে চলেছি নিজেকে মনে হচ্ছে সিন্দবাদের সদাগর ! পেছনে পেছনে আসছে  আমার ক্যারাভান । উটের পিঠে বোঝাই রেশমি কাপড় , জাফরান , দারুচিনি , গোল মরিচ, লবঙ্গ , কাপড় রাঙ্গানোর নীল , টারকোয়েজ আর লাপিজ লাজুলি ।এখুনি দর কষাকষি শুরু হবে । গ্রিক আর রোমানদের কাছ থেকে চার গুণ বেশি দাম নেবো । গতবার মরু দস্যুদের হাতে লুঠ হয়েছিল অনেক পশরা , তাছাড়া বেদুইন গুলোও বিস্তর ঝামেলা করে

স্বপ্ন দেখবো কী ?

গাইড সুলেইমানের তাগাদা । “আপনি বড় পিছিয়ে পড়ছেন কিন্তু ! আমাদের কত কিছু দেখা বাকি এখোনো”  !
এই যে এসে গেলো সেই শহরে ঢোকার পথ সিক ।


গাইড সুলেমান বলেই  চলেছে , বলেই চলেছে   এদিকে আমি, সিন্দবাদ সদাগর , স্বপ্নে ঘি ঢালছি   আমরা জেনে  গেছি মূল শহরে ঢুকতে হবে লম্বা সরু এক রাস্তা উজিয়ে   সেই পাহাড় ভাঙা রাস্তা , গিরিখাত ।  সে পথও  শেষ হবে এক সময়
দুদ্দাড় করে প্রচণ্ড গতিতে ঝড়ের মত শাঁ করে চলে গেলো একটা টাঙা টগবগ করে দুটো বেদুইন কিশোর পাশ কাটিয়ে দুলকি চালে চলে যাচ্ছে   সুলেইমান বলছে এই পাথুরে পথে ঘোড়া ছুটত , রথ ছুটত .আর আমি শুনছি ঘোড়ার খুর বলছে “ হেবা হেবা হেবা   আরিওরন আরিওন আরিওন দুশারা দুশারা দুশারা  

চোখ ঝলসে যায় সেই পাহাড়ের  উজ্জ্বল হলুদ রঙে
 এ পথে একদিন নাবাতিয়েনরা এসে ছিল আরব মরুভূমির যাযাবর এক টুকরো সবুজ জমি , এক আঁজলা জলের সন্ধানে দল বেঁধে ঘুরত এ সব কথা যিশুর জন্মেরও আগে   যা কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে মনে করা হয় এরা এসেছিল ইয়েমেন থেকে পেত্রায় পাওয়া গেছে অসংখ্য শিলালিপি আর গ্রাফিত্তি আরামিক , তাদের ভাষা ও লিপি অর্থাৎ তারা লিখতে পড়তে জানতো যাযাবর হয়ে ঘুরে বেড়ালে কী হবে ? তাদের কাছেই ছিল সেই মায়াজাদুর সন্ধান সেই যাযাবরেরা ছিল সুগন্ধি  পথের পথিক  রেশম পথের মতোই  ভারত, দূর প্রাচ্য ,  আরবদুনিয়া গ্রিস রোম মিলিয়ে ছিল এক বিস্তীর্ণ সুগন্ধি  পথ নাবাতিয়েন যাযাবরেরা ছিল  আদতে বনিক , সৌরভের সদাগর  
লবান , ফ্রাঙ্কিন্সেন্স, মাঢ় (myrrh)

শেষ পর্যন্ত এই যাযাবর থিতু হল এমন দেশে যেখানে তারা পেয়েছিল  বৃষ্টির গন্ধ  মরুভূমির মধ্যে সেই সুবাস তাদের অভ্যস্ত নাক চিনে নিতে দেরি করলো না বৃষ্টির জল ধরে রাখার কৌশল রপ্ত হল তারা বানিয়েছে বাঁধ , জলাধার , সিরামিকের পাইপ লাইন , বিস্ময়ের পর বিস্ময় ।মরু অঞ্চলে জলধারাকে তারা ইচ্ছেমত ব্যাবহার করেছে অতুলনীয় মেধা আর দক্ষতা দিয়ে । পাইপ দিয়ে , নালা দিয়ে , পাহাড়ের গায়ে ধাপ বানিয়ে সারা শহরকে জলসিক্ত করে গেছে ।  পেত্রা আরো রহস্যময় এই কারণে যে এখনো অনেক কিছু আবিষ্কার করা  বাকি ! শিলালিপি আর গ্রাফিত্তি কতটুকুই বা ধরে রাখে ? রোমান এবং গ্রিকদের লেখা থেকে অনেক তথ্য জানা যায় , বিশেষ করে ইতিহাসবিদ ডিওডোরাস আর ভূগোলবিদ স্ট্র্যাবোর লেখা থেকে । তবে এই কৌশল তারা বেশ ভালো করে  গোপন রাখত বলে ডিওডোরাস  লিখে গেছেন । শহরটিতে জলের খুব চাহিদা  ছিল , কারণ পেত্রা ছিল বিশাল এক বানিজ্য কেন্দ্র ।প্রচুর লোক আনাগোনা করতো ।     অসামান্য দক্ষতায় সেই জল তারা কাজে লাগাতে শুরু করল পেত্রা শহরেই দুশোটার বেশি জল জমিয়ে রাখার” স্টোরেজ” পাওয়া গেছে । শুরু হল মরুর বুকে চাষ বাস আঙুর  , বেদানা , তরমুজের রসে ভিজে ভিজে ততদিনে এক জীবন থেকে আরেক  জীবনের দিকে হেঁটে গেছে তারা বনিকের মানদণ্ড , রাজদণ্ড হল রেকেম হল তাদের রাজধানী রেকেম , পেত্রার আদি নাম দুই পাহাড় ফেটে গিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে যে রাস্তা তৈরি হয়েছে ,যাকে সিক বলা হয় সেখানে দেওয়ালে খোদাই করা আছে এই আদি নাম সুগন্ধি  , মশলা , রেশম আর বিলাস দ্রব্যের রমরমা লেনদেনই বলে দেয় সমকালীন সভ্যতা কোন স্তরে উঠেছিল আরব ও ভূমধ্যসাগর জুড়ে নাবাতিয়েনদের এই মুনাফার বাণিজ্য,  খ্রিস্ট পূর্ব  তৃতীয় শতাব্দী থেকে দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জ্বলজ্বল করেছিল
খ্রিস্ট জন্মের এক শতাব্দী আগে স্ট্র্যাবো লিখেছেন , পেত্রা একটি ধনাঢ্য মেট্রোপলিস ।তাদের সুন্দর খেত খামার আছে , প্রচুর খাবার আছে , কী ভালোভালো সুগন্ধি দ্রব্য আছে !
প্রত্ন প্রমাণ দেখিয়েছে ধনীদের বাড়ি লাগোয়া বাগান , তাদের শৌচাগারে কী সুন্দর জলের ব্যাবস্থা , আর বর্জ্য জল বের করে দেবার জন্য সিস্টারন !

আমরা এবারে সিক বা সরু রাস্তায় ঢুকে পড়েছি এতো গাধা ,  উট, ঘোড়া চালানো সুদীর্ঘ পথ টি কী চমৎকার পরিচ্ছন্ন
পাথরের গায়ে কুলুঙ্গি তাতে প্রদীপ জ্বলত খোদাই করা বাহারি আঙ্গুর লতা প্রচুর আঙুর ফলতো ,আঙুর পেষাই করে বানানো হতো মদ । আকন্ঠ মদ্যপান করতো এরা , দেবতারও প্রসাদ চড়াত ।  মৃৎ শিল্পের বাহার ছিল খুব । অনেক ঠাকুর দেবতা  ছিল তাদের সরু পথের দুই ধারের পাথরের গায়ে নিপুণ হাতে বানানো গভীর  জল সরবরাহ নালা আজও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে
   
পাথরের গায়ে  গায়ে দেব স্থান   “এই যে দেখুন,  নাবাতিয়েনদের সব চেয়ে বড় ঠাকুর দেখুন দুশারার  মন্দির







আমার ক্যারাভান তখন দুশারার মন্দির পেরিয়ে যাচ্ছে , ধীরে ধীরে ।
আমার বিহ্বল চোখের সামনে খ্রিস্ট আসার আগে , হজরত মোহম্মদ আসার আগে নাবাতিয়েন আরবদের দেবতা দুশারা   এই দুশারাই  গ্রিক প্রভাব  বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে জিউস এর সঙ্গে মিশে গেছিলেন । এ ছাড়াও তিনটি দেবীরও পুজো করতো তারা ।
 আর ঠিক এই সময়েই দুশারার মন্দিরের পাশ দিয়ে আমি নেমে আসতে  দেখলাম হেবা কে সুন্দরী হেবা । তার কালো রঙের চুল , নিচের দিকটা কোঁকড়া কোঁকড়া , একটি বুনো গোলাপের লতা চুলে লাগানো তার গায়ে অনেক গয়না । হাতে ধরা একটা মাবখারা , লবান জ্বলছে তার ভেতরে , গলগল  করে সুগন্ধি ধোঁয়া বেরুচ্ছে । মন্দিরের চাতালে জ্বলন্ত লবান সমেত মাবখারা রেখে আকুলি বিকুলি হেবা  প্রায় বাতাসের মত উড়েই চলে গেলো আমাদের সামনে দিয়ে  আমি তাকে দেখেই চিনতে পারলাম এ হল হেবা আরিয়েনের হেবা গ্রিক সদাগর আরিয়ন । গতবার তার সঙ্গে মশলার সওদা নিয়ে আমার তুমুল বচসা হয়েছিল । 
গ্রিক আর রোমানদের কাছে সুগন্ধির প্রচন্ড চাহিদা ছিল ।নাবাতিয়েনরা এই ব্যবসাকে ট্যাঁকে পুরে রাখতো তো বটেই পুরো সুগন্ধি বানিজ্য পথে তাদের দাদাগিরি চলতো । ভিনদেশি প্রতিটি ক্যারাভানকে শুল্ক দিয়ে হত । ধনসম্পদ ছিল তাদের সভ্যতার মেরুদণ্ড ।
সেই সরু রাস্তা দুম করে যেখানে শেষ হয়েছে সেখানেই সেই পাথর কাটা বিস্ময় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ট্রেজারি বা আল খাজনেহ কাল রাতে উতরোল রোমাঞ্চ তৈরি করেছিল সে নিপুণ হাতে কিন্তু আজ যে এনে ফেলেছে একেবারে গল্পের বই এর পাতায় এর সময় প্রথম খ্রিস্টাব্দ আরব বেদুইনরা এক সময় মনে করত এর মধ্যে প্রচুর সোনাদানা  লুকোনো আছে তাই এর নাম খজানা টিনটিনের কমিক্স থেকে হলিউড , এল খাজনেহ দাপিয়ে বেরিয়েছে এমনই এর আকর্ষণ ইন্ডিয়ানা
জোন্স অ্যান্ড দ্য লাস্ট ক্রুসেড আরও কতো এটি আদতে একটি সমাধি   কাল রাতে সব ছিল অন্যরকম আর আজ সকালে এর চারদিকে যে মেলা আর হই হট্টগোল চলছে তা দেখলে মনে হয় যেন কোনও সিনেমা হলে বসে থ্রিলার দেখছি   চারদিকে উটের ভিড় , টাঙ্গা , প্রচুর ট্যুরিস্ট উটের মুখের পাশে মুখ নিয়ে ফিলিপিনো সেলফি রকমারি চকমকি আর রঙিন পাথরের দোকান , বেদুইন সুর্মা , মনোহারি সুগন্ধি , সদ্য পেষাই কমলা লেবুর রসে ফুর্তির তুফান  





এবারে তাকে পেছনে রেখে সামনে এগিয়ে যাই
এটা একটা বিশাল বড়   জায়গা একটা পুরো শহর তার নানান দিকে নানান দেখার জিনিস পুরো অঞ্চল টা নানা রকম ভাবে ভাগ করে নিয়েছে এরা পর্যটকদের সামনে অনেকগুলো পছন্দের তালিকা ইচ্ছে করলে সারাদিন এখানে কাটানো যায় খুব কম করে হলেও পাঁচ ছ কিলো মিটার হাঁটতেই হবে যে এরপর আছে হরেক রকমের উঁচু উঁচু পাহাড় নাবাতিয়েনরা মনের সুখে  পাহাড়ের টঙে , বিপজ্জনক উচ্চতায় তাদের মৃত্যুকে মহীয়ান করে সমাধি বানিয়েছে কোথাও মন্দির সাজিয়েছে , কোথাও দেবতার উদ্দেশ্যে পশুবলি দেবার জায়গা নির্দিষ্ট করেছে সব তো আর মাথায় ওপর এই তেতে ওঠা রোদ্দুর  আর নড়বড়ে শরীর নিয়ে ঘোরা যায় না যারা হাইকিং ভালোবাসে তারা অনেক অনেক দূর চলে যেতে পারে
এই শহরটা মানে রেকেম মানে পেত্রাকে গোলাপ শহর বলে একসময় ডাকা হত পাথরগুলোর মধ্যে একটা হালকা গোলাপি আভাস রয়েছে

বাড়িঘর গুলো বেশির ভাগই ধ্বংস হয়েছে ঘর বাড়ির সেরকম চিহ্ন পাওয়াও  যায় না কিন্তু ধর্ম আর মৃত্যু   টিকে  গেছে কারণ সমাধি আর মন্দির বানানো হয়েছে পাথর কেটে আর সেগুলোই এখনো বেঁচে আছে ভাবতে অবাক লাগে এই বিশাল বিশাল সৌধগুলো এরা বানালো কী ভাবে ? এই খসখসে কঠিন মরুভূমিতে ।
আমরা জেনে গেছি পেত্রায় এসে জমায়েত হত অগুনতি ক্যারাভান ক্যারাভান শহর ছিল এটা বহু মানুষের সমাগম ডোবার জলে শ্যাওলা ধরে কিন্তু নাবাতিয়েনদের জলে শ্যাওলা ধরেছে অনেক অনেক পরে   নিজেদের নগরী পেত্রা ছিল সমস্ত আরব ও ভূমধ্যসাগর পারের বনিকদের আড্ডাখানা ও আড়ত
এই মেলামেশাই তাদের জলধারাকে বয়ে নিয়ে গেছে অনেক দূর
আমাদের গাইড সুলেইমান দেখাচ্ছিল কেমন ভাবে মিশে গেছে গ্রিস রোম আর ইজিপ্টের শিল্প ও গঠন শৈলী



“এই শিলালিপিটা লক্ষ করুন দেখুন দুধরনের লিপির ব্যাবহার
নাবাতিয়েনরা আরামিক লিপি ব্যাবহার করত এর সঙ্গে অনেক আরবিক শব্দের মিল রয়েছে কিন্তু প্রথম খ্রিস্টাব্দ নাগাদ  গ্রিকদের  দাপটে  তাদের সম্ভ্রমের চোখে দেখতে শুরু করে নাবাতিয়েনরা   তাই একটি পোশাকি ভাষারও  ব্যাবহার শুরু হল লিপিগুলো হয়ে গেলো দ্বি ভাষিক আরামিক এবং গ্রিক নাবাতিয়েনদের  টাঁকশাল ও ছিল তৈরি হত ধাতুর মুদ্রা আর ছিল উন্নত মানের মৃৎ শিল্প সমাজে ভালোরকম শ্রেণী ভেদ ছিল , প্রত্নতত্ত্ব অন্তত তাই বলে । বড়লোকদের কবর আর সাধারণ ছাপোষা দের কবর একেবারেই আলাদা । মন্দিরগুলো বিপুলাকার । রাজা , পুরোহিত , বণিক এরাই সমাজের মাথা ছিল । দাস প্রথা অবশ্যই ছিল ।
প্রত্নতত্ত্ব  এবং অসংখ্য লিপি বলেছে মেয়েরা বেশ স্বাধীনতা ও সম্মানের মধ্যেই ছিল রাজনীতি ধর্ম ও সংসার , তিনটি জায়গাতেই বেশ ভালো ছিল মেয়েদের স্থান  শিল্প সৌন্দর্যের ভক্ত ছিল তারা । টেরাকোটার প্রত্ন নিদর্শন গুলো বড় সুন্দর ।
  হেবার সাজ দেখলেই তা বোঝা যায়  , তার চলন , ঠাট বাট  ভিনদেশি প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করবে হয়তো এই শহরের কোথাও



এখানে রোমান থিয়েটার আছে , আছে হাই প্লেস অফ স্যাক্রিফাইস, মনাস্টেরি । সবচেয়ে উঁচুতে মনাস্টেরি । প্রচুর ওঠা নামা । গাধা খচ্চর ঘোড়া সবই মজুত আছে । সওয়ারির অপেক্ষায় ।  পেত্রায় ঘোরা, সারাজীবনের সঞ্চয় । সাহেবদের থ্রিলার মুভিতেই এরকম দৃশ্য দেখা যায় কেবল ।

মায়াগন্ধ


গাছ যখন কাঁদে বা তার যখন রক্ত ঝরে সেই রক্ত বা চোখের জল জমে জমে রেসিন তৈরি হয় । যত দুঃখ আর ব্যথা গন্ধ হয়ে পুড়তে থাকে । সুরভি ছড়ায় । ওষুধ তৈরি করে , মলম তৈরি করে । রোগ নিরাময় করে , যন্ত্রণা সারায় । নাবাতিয়েনদের গল্প লবান আর মাঢ় এর গল্প ।
লবান , ফ্রাঙ্কিন্সেন্স আর মাঢ় (myrrh), একদম সাইমন গারফাঙ্কেল এর পারস্লে , সেজ , রোজমারি , থাইমের গান । এই সুরভিই নাবাতিয়েনদের ব্যাবসার প্রাণ ভোমরা । নাবাতিয়েনরা এসেছিল ইয়েমেন থেকে । ইয়েমেন এই সুগন্ধের আঁতুড় ঘর । যাযাবর হয়ে সুগন্ধ বেচতে বেচতে নাবাতিয়েনরা এক বিস্ময়কর জায়গায় পৌঁছে গেছিল । ইওরোপ , প্রাচ্য থেকেই সুগন্ধির ব্যাবহার শিখেছিল । আলেকজান্দারের অভিযান ও পারস্য দখলের ফলে পশ্চিমি দুনিয়ায় গন্ধ দ্রব্যের চাহিদা হুহু করে বাড়তে থাকে । নাবাতিয়েনরা সুযোগ বুঝে খুব চড়া দাম হাঁকত । দূর প্রাচ্য আর রোমের মধ্যে বিস্তৃত বানিজ্য পথ তারা নিজেদের কব্জায় রেখেছিল আর কিছুতেই কাউকে জানতে  পর্যন্ত দিত না তাদের বানিজ্য সামগ্রীর জায়গাগুলো কোথায় লুকোনো আছে  মশলা আর সুগন্ধি , বহুকাল  তারা একচেটিয়া ধরে রেখে ছিল । ডিওডোরাস এমনও লিখেছেন যে গ্রিসে এই সব সুগন্ধির দাম এতো চড়া ছিল যে বড়বড় রাজপুরুষদের মাথা পিছু বরাদ্দ বেঁধে দেওয়া হত অর্থাৎ রেশন ।




 পেত্রা এখন ইউনেস্কোর অন্যতম হেরিটেজ কেন্দ্র । কিন্তু দুনিয়ার সামনে পেত্রা আসে  ১৮১২ সালেজোহান লাডুইগ বারখহারড একজন সুইস প্রাচ্যবিদ ও অভিযানকারী । বহু কাঠখড় পুড়িয়ে তিনি পেত্রা আবিষ্কার করেন । লুপ্ত নগর পেত্রা আবিষ্কারের জন্য সিরিয়া , লেবানন এইসব জায়গায় থাকতে শুরু করেন   সে কাহিনিও পেত্রার নিজের গল্পের মত কম আকর্ষণীয় নয় । বারখহারড আরবি শিখেছিলেন , লম্বা দাড়ি রাখতেন , নিজেকে পরিচয় দিতেন শেখ ইব্রাহিম ইবন আব্দাল্লা নামে । স্থানীয় লোকজনদের রীতিমত তোষামোদ করে চলতেন নিজের নিরাপত্তার জন্য । বহুবার চোর ছিনতাইবাজরা তাঁকে নাস্তানাবুদ করেছে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সেই গিরিখাত পেরিয়ে পেত্রায় ঢুকতে পেরেছিলেন । বলাই বাহুল্য তখন জায়গাটা ভয়াবহ দুর্গম  ছিল ।

পেত্রার রমরমা রোমানদের সহ্য হবে কেন ? পেত্রা শেষ পর্যন্ত  রোমান আধিপত্য মেনে নিয়েছিল   শহরটি পুরোপুরি জলপথ বর্জিত , এদিকে সমুদ্রপথে বানিজ্য সহজ হয়ে যাবার ফলে  পেত্রা তার গুরুত্ব হারাতে থাকে ।
 ৩৬৩ খ্রিস্টাব্দে এক ভয়ানক ভূমিকম্পে এই শহরের অপরিসীম  ক্ষতি হয় সপ্তম শতাব্দীতে পেত্রা তখন প্রায় জনহীন আর এখন রয়ে গেছে স্থানীয় বেদুইনরা পাথর কাটা গুহার মধ্যে কেউ কেউ আবার থাকেও শুনলাম ।

চারদিকে চক্কোর কাটছে উট ঘোড়া গাধা খচ্চরতাদের উপোসী রোজা রাখা মালিক , মালিকের বাচ্চা শাগরেদ , নানান পশরা , দরদস্তুর । এসবের মধ্যে  কখন বেলা পড়ে এলো ।  নাসিরুদ্দিন মোল্লার মত গাধার পিঠে উঠে চলার ইচ্ছে হল এলো সুজু আর সুজানা তার ওপর কর্তা গিন্নি চেপে বসলুম দুজনা আর গাইতে গাইতে চললুম তৃতীয় সুর ষষ্ঠ  সুর / গুপী চলল অনেক দূর
চলি চলি চলি চলি পথের নাইকো  শ্যাষ




গাধার পিঠে দুলকি চালে চলতে চলতে  চলতে চলতে এসে পড়েছি আবার সেই এল খাজনেহ গাধার পিঠ থেকে নেমে টাঙা  নিলাম ওই পাথুরে পথে  দুধারে হলুদ দানব পাহাড় আর এক আকাশ নীল রঙ নিয়ে হুড়মুড়িয়ে ছুটে চলছে  আমার ঘোড়ায় টানা  টাঙা  

ব্যাবসায় লাভ হয়েছিল  , অনেক লাভ । আর আরিয়নকে , নাহ বলেই ফেলি । হেবাকে খুব পছন্দ ছিল আমারো ।পয়সাকড়ি আমারো কিছু কম ছিল না । ছিল না শুধু দুটি নীল চোখ , একমাথা সোনালি কোঁকড়া চুল  আর লম্বা নাক ।  হেবা  আমার দিকে তাকিয়ে দেখেই নি কোনোদিন । আরিয়নকে তাই , হাই প্লেস অফ স্যাক্রিফাইসে  নিয়ে গিয়েছিলাম , রাতের দিকে ,অ্যা ম্ফোরা ভর্তি জম্পেশ   মদ নিয়ে  বলেছিলাম ভালো রেশম আছে , চলো নিরিবিলিতে কথা বলি । চাঁদ তখন মাথার ওপর , নিচে দুশারার মন্দিরে আলো জ্বলছিল , নিশিগন্ধ ঝরছিল আকাশের তারাগুলো থেকে , আমি পেছন থেকে একটা ধাক্কা দিলাম মাত্র ।

রেড কেভ হোটেলে ঢুকে বেশ খোশ মেজাজেই  বললাম ,
কীফ হালাক ?  অলহমদুলিল্লাহ ।বিদ্দি অরেঞ্জ জুস ।আর মাকলুবা ।  অলিভ , লেবু , জাতার মাখা মুরগি আর ভাত ।

কেমন আছেন ভাই ? কমলা লেবুর রস চাই আমার । আর একটা মাকলুবা ।


মেরে দিল তু সুনা কোই অ্যায়সি দাস্তান ...
মঞ্জিল হ্যাঁয় অনজানি  




.