নিশিগন্ধ
রোমাঞ্চকর রাত । অন্ধকার রাত সহোদরারা মত জড়িয়ে ধরেছে । মাথার ওপর খোলা আকাশ । সে আকাশও পথ দেখিয়ে
নিয়ে যাচ্ছে । সমস্ত নক্ষত্ররা জেগে উঠছে একে একে । তারা থেকে ঝরে পড়ছে বিন্দু বিন্দু সুগন্ধ । সে সুগন্ধ আমাদের সমস্ত শরীরে
। তারার ভেজা ভেজা গন্ধ হংসধ্বনি রাগ হয়ে ঝরে পড়ছে ।অঙ্গ সুগন্ধন চন্দন মাথে । অন্ধকারে পথ চলছি । অন্ধকারের একটা নিজস্ব আলো আছে । সেই আলোয় পথ চলছি । একা পথিক আমি নই । সঙ্গে চলেছে অনেক অনেক সহযাত্রী ।
পায়ের নিচে পাথুরে পথ
। কখনো বেশ সমতল ,কখনো এবড়ো খেবড়ো । কখনো উঁচু নিচু । অন্ধকারে ভালো ঠাহর
হয় না । কখনো দিশেহারা লাগে , কিন্তু এই যে বয়ে যাচ্ছে জনস্রোত তার একটা বেবাক ঢেউ হয়ে ভেসে চলেছি । অন্ধকারের সেই আবছা আলো দেখিয়ে দিচ্ছে চারদিকে ঘিরে আছে বিশাল বিশাল পাথুরে পাহাড় । মাথার ওপর পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশে জ্বল
জ্বল করছে তারা । অন্ধকারের শুধু নিজস্ব আলোই নয় তার একটা সুবাসও আছে । পথ চিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেও ।
খাতায় কলমে লেখা আছে দু’কিলোমিটারের মতো রাস্তা । কিন্তু মনে হচ্ছে এ এক অনন্ত পথ । কখনো মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে নিচ্ছে কেউ । কিন্তু সমস্ত পরিবেশে বড় বেমানান সেই কৃত্রিম আলো । নিভিয়ে দিচ্ছে সবাই সঙ্গে সঙ্গে । মাঝে মাঝে জ্বলে উঠছে ক্যামেরার আলো । যে ছড়ানো খোলা পথ দিয়ে দল বেঁধে সবাই
হাঁটছিলাম সে পথ সরু হচ্ছে ক্রমশ । অন্ধকারেও বোঝা
যাচ্ছে একটা প্রশস্ত জায়গা ছেড়ে সঙ্কীর্ণ পথে ঢুকে পড়ছি ধীরে ধীরে ।
অন্ধকারে পথ নির্দেশ
দিচ্ছে মায়া লন্ঠনের আলো । ব্রাউন পেপারের ঠোঙার মধ্যে বালি , সেই বালিতে
মোমবাতি বসানো । তার অদ্ভুত নরম হালকা
আলো আমাদের পথ ফলক । সারা পথ জুড়ে এঁকে
বেঁকে চলে গেছে অজস্র অগুনতি আলোঠোঙা । সে কী মায়াময় অনুভূতি । অন্ধকার চরাচর । পাথুরে প্রকৃতি । আকাশ ভরা তারার
মেহফিল । নিচে কাগজমোড়া আলোর নিশানা । স্তব্ধ চরাচরে দল বেঁধে আধুনিক মানব মানবী চলেছে কাদের ফেলে আসা পথে ? কতগুলো অক্ষম শব্দ দিয়ে সেই শিহরণ আর
অনুভূতিকে বোঝানো কি
যায় ?
পথ সরু হয়ে এলো হঠাৎ । নিশিগন্ধ হলো তীব্র । অতি বিশাল আকারের দুটি পাথরের পাহাড়ের ভেতর দিয়ে সরু পথ ।গিরিখাত । ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষ জন এখন লাইন করে চলছে । এতক্ষণ বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা খোলামেলা থেকে গুমোট হয়ে আসছে চারপাশ । সরু ফাটলের ভেতর দিয়ে মাথা তুলে চিলতে আকাশ চোখে পড়ে । পায়ের তলার পথ এখন অনেকটা মসৃণ কিন্তু দুই পাহাড়ের মধ্যে
হাওয়া চলছে না ।
আমরা ঢুকে যাচ্ছি কবেকার
সেই প্রাচীন ইতিহাসের রানি পেত্রা শহরের পেটের মধ্যে । বড় নাটকীয় সেই প্রবেশ । ভূমিকম্পে দু ভাগ
হয়ে যাওয়া এই সরু পথটিকে বলা হয় “সিক “। এই সিক হল জর্ডানের
একসময়ের রানিমৌমাছি পেত্রার প্রবেশ পথ । চারদিকে বিশাল দৈত্যের মতো পাহাড়ের পাঁচিল আর এই লম্বা
সরু গিরিখাত । তাই রানি ছিলেন বড়ই সুরক্ষিত । এই প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা পথকেই
একটি নিরাপদ প্রবেশ সরণি বানিয়েছিল সেইসব আশ্চর্য মানুষগুলো , খ্রিস্টের জন্মের অনেক আগে থেকেই ।
এখন আমাদের দুই পাশে
পাহাড় । মায়া লন্ঠনের আলোর
নিশানা দেখে দেখে এগিয়ে চলেছি । আঁকা বাঁকা পথ । অচেনা লোক অথবা
শত্রু কেউ ই খুব সহজে সেই সুরম্য নগরীতে ঢুকে যেতে পারতো না । বানিজ্যে বসত লক্ষ্মী । ধনী সদাগরদের অট্টালিকা ছিল এখানে ।সভ্যতার প্রাণ ভোমরা ছিল ধন , অর্থ । একটি
বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতা আগাগোড়া।
নেশাড়ুর মতো কত টা যে
পথ হেঁটেছি বুঝতে পারছি না । মাঝে মাঝে কাদের যেন গলা শুনতে পাচ্ছি । মনে হচ্ছে এই বোধহয় পথ শেষ হয়ে এলো , ওই বাঁক টা ঘুরলেই আমরা পৌঁছে
যাব , যেখানে যাবার কথা । আবার কারা যেন কথা বলে । একটা গুমগুমে হালকা প্রতিধ্বনি “হেবা , হেবা ,
হেবা। তুমি কোথায় কোথায়
কোথায় ? “। কেউ যেন হেবা নামের কোনও মেয়ের জন্য অপেক্ষা করেছে । আবার শুনি ,কথা গুলো কেটে কেটে যাচ্ছে “ আজ এসেছি এসেছি এসেছি “। “ দুশারার মন্দির মন্দির মন্দির “
ভাবলাম , পৃথিবীর
বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে নানান ভাষায় কথা কইছে , সেগুলোই জড়িয়ে পাকিয়ে অমন শোনাচ্ছে ।
হঠাৎ ঠাণ্ডা ফুরফুরে হাওয়া গায়ে এসে লাগলো । দুই পাহাড়ের মধ্যে এই সরু পথ এবারে
খোলা জায়গায় এসে পড়বে মনে হচ্ছে । আচমকাই সেই পথ, বাঁক ঘুরে শেষ হল । ঠোঙা লন্ঠনের আলো
এবারে সারি সারি বসানো আছে একটা ছড়ানো জায়গা জুড়ে । মাটিতে বসে আছে
অনেক লোক । হাতড়ে হাতড়ে আমরাও গিয়ে বসি । বুঝতে পারি অসমান জমি । ধুলোবালির মধ্যেই বসে পড়ি । কার্পেট পাতা আছে কিন্তু লোক তার থেকে অনেক বেশি । আবছায়ায় দেখলাম কিছু বেদুইন ছেলে
লোকজন বসানোর দায়িত্বে আছে । নির্বাক লোকজন আর টিমটিমে
লন্ঠন । বিস্ময় নামে এক অদৃশ্য জাদুকর সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে
রেখেছে । চুপচাপ অন্ধকার । টুপটাপ নিশিগন্ধ ।
হঠাত ভেসে এলো জাদু বাঁশির আওয়াজ । মরুভূমির যাযাবর সুর , অন্ধকারের গভীর থেকে কেউ একজন গান ধরল । সেই বাঁশি বাজনা আর গান থেমে গেলে এক গমগলে গলা বলে উঠল , “নাবাতিয়েনদের
ভূমিতে স্বাগত , পেত্রায় স্বাগত । এই আমাদের বহু প্রাচীন সভ্যতা “। আরও কত কথা সে বলেছিল , কিছু শুনেছি, কিছু
শুনিনি। যেই তার কথা
শেষ হল অমনি ঝাঁ করে জ্বলে উঠলো আলো ।
আমাদের সামনে অন্ধকার
ফুঁড়ে জেগে উঠল প্রথম শতাব্দীর ক্যারাভান শহর পেত্রার” এল খাজনেহ বা ট্রেজারি” । বিরাট এক সৌধ , পাথর কেটে যারা বানিয়েছিল তারা কি দানব ছিল ? আধুনিক
মানদন্ডে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি । সে এক অদ্ভুত রাত । জীবনের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা ।
এ হল , রাতের পেত্রা । সপ্তাহে তিনদিন দেশ বিদেশের অগণিত পর্যটক এই জাদুসময়ের শরিক হয়ে থাকে ।
ছোট অনুষ্ঠানটি শেষ
হবার পরে ট্রেজারির ওপর নানান আলোর খেলা । বিস্ময়ের ঘোর কেটে
এখন উল্লাসের পেখম নাচ । ছবির পর ছবি উঠছে ।
এরই মধ্যে দেখি আলো
মাখা সেই প্রাচীন সমাধি সৌধের সামনে একটি মেয়ে ভারতের ইয়োগা শুরু করেছে । আহা ! soak
up the atmosphere । এমনই তো হওয়া উচিত !
মুগ্ধতা কাটতে আমার বিন্দুমাত্র সময় লাগলো না । পেছনে তাক করা ক্যামেরা তার ইয়োগার নানা ভঙ্গি টুকে রাখছে ,আর দু মিনিটের
মধ্যেই ফেসবুকে ইন্সটাগ্রামে ঢুকে যাবে । দুদিন আগেই দেখেছি ডেড সি তে একটি মেয়ে ভেসে ভেসে একহাতে বই আরেক হাতে সরু
সরবতের গেলাস নিয়ে ছবি তুলবে । উফ , সে কি তোড়জোড় । বারবার উল্টে পড়ে যাচ্ছে । কিন্তু ছাড়ান নেই । সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি উঠবে । লাইকের বন্যা বয়ে যাবে । মুহূর্তে বাঁচো , মুহূর্তে শেষ হও ।
ফিরে যাবার সময় মাথার
ওপর মস্ত বড় চাঁদ ।
নিশিগন্ধ আর চাঁদের
আলোর প্রতিধ্বনি বলে গেল, “ হেবা হেবা
হেবা । আরিয়ন আরিয়ন আরিয়ন । কোথায় কোথায় কোথায় ? দুশারা, দুশারা দুশারা। “
সেই গিরিপথ বেয়ে
বাইরে বেরিয়ে এলাম , তখন রাত ঢলে পড়েছে ।
প্রায় সাড়ে এগারোটা
বাজে । ইফতার চলছে । এতোটা পথ হেঁটে
হেঁটে ক্লান্ত সবাই । রেড কেভ হোটেল তো
এখন আমাদের বন্ধুর বাড়ির মত । মিন্ট লেমন । হাঁক দিই । পুদিনা লেবুর বরফ দেওয়া শরবত আর রাতের খানা, তোওফা । গরম লেন্টিল স্যুপ ,
সোজা কথায় মুসুর ডাল । মোটা মোটা আলুভাজা
, চিজ ভরা সম্বুসক মানে সামোসা , পিটা
রুটি , ভাত । মরুশহরে রাত ঝিমঝিমি । ঠান্ডি হাওয়া ইয়ে
চাঁদনি সুহানি , অ্যায় মেরে দিল সুনা কোই কাহানি ।
জাদুগন্ধ
পরদিন সকালবেলা
পেত্রা আরকিওলজিকাল পার্কে হাজির হলাম । দস্তুর মতো তৈরি হয়ে
। অনেক হাঁটতে হবে । যেই ঢুকে গেলাম , ওমা , একীই ? পর্দার পেছনে জাদুকর তখন নতুন এক মঞ্চ হাজির
করেছেন । কোথায় গেল রাতের অন্ধকারের টিমটিমে ঠোঙা লন্ঠনের আলোয়
পথ চিনে চিনে আলো আঁধারি মায়াবী অভিযান ! দস্তুর মতো গায়েব !
আমাদের চারদিক জুড়ে
হলুদ সোনালি পাথরের বিশাল বিশাল পাহাড় । ফিকে গোলাপি রঙ উঁকি মারছে । কটকটে নীল আকাশ । আমরা হাঁটতে শুরু করলাম পেত্রার দিকে
, প্রাচীন পেত্রা , বনিকদের ক্যারাভানসরাই পেত্রা , সদাগরদের আড়তখানা, নাবাতিয়েনদের
রাজধানী পেত্রা । পেত্রা একটা গ্রিক শব্দ , এসেছে পেত্রস থেকে
, মানে পাথর ।
রাস্তা সেই একই রকম
এবড়ো খেবড়ো , পাথর কাঁকর বালিমাখা , কোথাও
মসৃণ কোথাও উঁচু নিচু , ঠিক রাতের বেলা যা
অনুভব করছিলাম সকালের আলোয় তাকে দেখা গেল ।
রাতে ছিল মগ্ন
যাত্রীদের প্রায় নিঃশব্দ পদচারনা । আর এখন গাধা , খচ্চর উট ঘোড়া আর তাদের
ঘন কাজল পরা বেদুইন মালিকদের তুমুল
ফিরিওয়ালাগিরি । নানা রঙের জ্যামিতিক নকশার কাপড় দিয়ে বসার ব্যাবস্থা । এর সঙ্গে আছে টাঙা । টাইম মেশিন ঘুরিয়ে পিছিয়ে গেলাম কয়েক শতাব্দী । একেবারে গল্পের বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা বায়োস্কোপ ।
সেই বায়োস্কোপ দেখতে
দেখতে চলেছি । নিজেকে মনে হচ্ছে
সিন্দবাদের সদাগর ! পেছনে পেছনে আসছে আমার
ক্যারাভান । উটের পিঠে বোঝাই রেশমি কাপড় , জাফরান , দারুচিনি , গোল মরিচ, লবঙ্গ ,
কাপড় রাঙ্গানোর নীল , টারকোয়েজ আর লাপিজ লাজুলি ।এখুনি দর কষাকষি শুরু হবে । গ্রিক
আর রোমানদের কাছ থেকে চার গুণ বেশি দাম নেবো । গতবার মরু দস্যুদের হাতে লুঠ হয়েছিল
অনেক পশরা , তাছাড়া বেদুইন গুলোও বিস্তর ঝামেলা করে ।
স্বপ্ন দেখবো কী ?
গাইড সুলেইমানের
তাগাদা । “আপনি বড় পিছিয়ে পড়ছেন কিন্তু ! আমাদের কত কিছু দেখা বাকি এখোনো” !
এই যে এসে গেলো সেই
শহরে ঢোকার পথ । সিক ।
গাইড সুলেমান বলেই চলেছে , বলেই চলেছে । এদিকে আমি, সিন্দবাদ সদাগর , স্বপ্নে
ঘি ঢালছি । আমরা জেনে গেছি মূল শহরে ঢুকতে হবে
লম্বা সরু এক রাস্তা উজিয়ে । সেই পাহাড় ভাঙা রাস্তা , গিরিখাত । সে পথও
শেষ হবে এক সময় ।
দুদ্দাড় করে প্রচণ্ড
গতিতে ঝড়ের মত শাঁ করে চলে গেলো একটা টাঙা। টগবগ করে দুটো
বেদুইন কিশোর পাশ কাটিয়ে দুলকি চালে চলে যাচ্ছে । সুলেইমান বলছে এই পাথুরে পথে ঘোড়া
ছুটত , রথ ছুটত .আর আমি শুনছি ঘোড়ার খুর বলছে “ হেবা হেবা হেবা । আরিওরন আরিওন আরিওন । দুশারা দুশারা দুশারা । “
চোখ ঝলসে যায় সেই
পাহাড়ের উজ্জ্বল হলুদ রঙে ।
এ পথে একদিন নাবাতিয়েনরা এসে ছিল । আরব মরুভূমির যাযাবর । এক টুকরো সবুজ জমি ,
এক আঁজলা জলের সন্ধানে দল বেঁধে ঘুরত । এ সব কথা যিশুর
জন্মেরও আগে । যা কিছু প্রমাণ
পাওয়া গেছে তাতে মনে করা হয় এরা এসেছিল ইয়েমেন থেকে । পেত্রায় পাওয়া গেছে অসংখ্য শিলালিপি আর গ্রাফিত্তি । আরামিক , তাদের ভাষা ও লিপি । অর্থাৎ তারা লিখতে
পড়তে জানতো । যাযাবর হয়ে ঘুরে বেড়ালে কী হবে ? তাদের কাছেই ছিল সেই
মায়াজাদুর সন্ধান । সেই যাযাবরেরা ছিল সুগন্ধি
পথের পথিক । রেশম পথের মতোই ভারত, দূর প্রাচ্য , আরবদুনিয়া গ্রিস রোম মিলিয়ে ছিল এক বিস্তীর্ণ
সুগন্ধি পথ । নাবাতিয়েন যাযাবরেরা ছিল আদতে বনিক ,
সৌরভের সদাগর ।
লবান ,
ফ্রাঙ্কিন্সেন্স, মাঢ় (myrrh) ।
শেষ পর্যন্ত এই
যাযাবর থিতু হল এমন দেশে যেখানে তারা পেয়েছিল বৃষ্টির গন্ধ
। মরুভূমির মধ্যে সেই
সুবাস তাদের অভ্যস্ত নাক চিনে নিতে দেরি করলো না । বৃষ্টির জল ধরে রাখার কৌশল রপ্ত হল । তারা বানিয়েছে বাঁধ , জলাধার , সিরামিকের পাইপ লাইন , বিস্ময়ের পর বিস্ময় ।মরু
অঞ্চলে জলধারাকে তারা ইচ্ছেমত ব্যাবহার করেছে অতুলনীয় মেধা আর দক্ষতা দিয়ে । পাইপ
দিয়ে , নালা দিয়ে , পাহাড়ের গায়ে ধাপ বানিয়ে সারা শহরকে জলসিক্ত করে গেছে । পেত্রা আরো রহস্যময় এই কারণে যে এখনো অনেক কিছু আবিষ্কার
করা বাকি ! শিলালিপি আর গ্রাফিত্তি
কতটুকুই বা ধরে রাখে ? রোমান এবং গ্রিকদের লেখা থেকে অনেক তথ্য জানা যায় , বিশেষ
করে ইতিহাসবিদ ডিওডোরাস আর ভূগোলবিদ স্ট্র্যাবোর লেখা থেকে । তবে এই কৌশল তারা বেশ
ভালো করে গোপন রাখত বলে ডিওডোরাস লিখে গেছেন । শহরটিতে জলের খুব চাহিদা ছিল , কারণ পেত্রা ছিল বিশাল এক বানিজ্য কেন্দ্র
।প্রচুর লোক আনাগোনা করতো । অসামান্য দক্ষতায় সেই জল তারা কাজে লাগাতে শুরু
করল । পেত্রা শহরেই দুশোটার
বেশি জল জমিয়ে রাখার” স্টোরেজ” পাওয়া গেছে । শুরু হল মরুর বুকে চাষ বাস । আঙুর , বেদানা ,
তরমুজের রসে ভিজে ভিজে ততদিনে এক জীবন থেকে আরেক জীবনের দিকে হেঁটে গেছে তারা । বনিকের মানদণ্ড , রাজদণ্ড হল । রেকেম হল তাদের
রাজধানী । রেকেম , পেত্রার আদি নাম । দুই পাহাড় ফেটে গিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে যে রাস্তা তৈরি হয়েছে ,যাকে সিক বলা হয়
সেখানে দেওয়ালে খোদাই করা আছে এই আদি নাম । সুগন্ধি , মশলা , রেশম আর বিলাস দ্রব্যের রমরমা লেনদেনই বলে
দেয় সমকালীন সভ্যতা কোন স্তরে উঠেছিল । আরব ও ভূমধ্যসাগর জুড়ে
নাবাতিয়েনদের এই মুনাফার বাণিজ্য, খ্রিস্ট
পূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে দ্বিতীয়
খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জ্বলজ্বল করেছিল ।
খ্রিস্ট জন্মের এক
শতাব্দী আগে স্ট্র্যাবো লিখেছেন , পেত্রা একটি ধনাঢ্য মেট্রোপলিস ।তাদের সুন্দর
খেত খামার আছে , প্রচুর খাবার আছে , কী ভালোভালো সুগন্ধি দ্রব্য আছে !
প্রত্ন প্রমাণ
দেখিয়েছে ধনীদের বাড়ি লাগোয়া বাগান , তাদের শৌচাগারে কী সুন্দর জলের ব্যাবস্থা ,
আর বর্জ্য জল বের করে দেবার জন্য সিস্টারন !
আমরা এবারে সিক বা
সরু রাস্তায় ঢুকে পড়েছি । এতো গাধা , উট, ঘোড়া চালানো সুদীর্ঘ পথ টি কী চমৎকার
পরিচ্ছন্ন ।
পাথরের গায়ে কুলুঙ্গি
। তাতে প্রদীপ জ্বলত । খোদাই করা বাহারি
আঙ্গুর লতা । প্রচুর আঙুর ফলতো
,আঙুর পেষাই করে বানানো হতো মদ । আকন্ঠ মদ্যপান করতো এরা , দেবতারও প্রসাদ চড়াত
। মৃৎ শিল্পের বাহার ছিল খুব । অনেক ঠাকুর
দেবতা ছিল তাদের । সরু পথের দুই ধারের পাথরের গায়ে নিপুণ হাতে বানানো গভীর জল সরবরাহ নালা । আজও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে ।
পাথরের গায়ে গায়ে দেব স্থান । “এই যে দেখুন, নাবাতিয়েনদের সব চেয়ে বড় ঠাকুর । দেখুন দুশারার মন্দির ।“
আমার ক্যারাভান তখন
দুশারার মন্দির পেরিয়ে যাচ্ছে , ধীরে ধীরে ।
আমার বিহ্বল চোখের
সামনে খ্রিস্ট আসার আগে , হজরত মোহম্মদ আসার আগে নাবাতিয়েন আরবদের দেবতা দুশারা । এই দুশারাই গ্রিক প্রভাব বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে জিউস এর সঙ্গে মিশে গেছিলেন
। এ ছাড়াও তিনটি দেবীরও পুজো করতো তারা ।
আর ঠিক এই সময়েই দুশারার মন্দিরের পাশ দিয়ে আমি
নেমে আসতে দেখলাম হেবা কে । সুন্দরী হেবা । তার কালো রঙের চুল , নিচের দিকটা কোঁকড়া
কোঁকড়া , একটি বুনো গোলাপের লতা চুলে লাগানো ।তার গায়ে অনেক গয়না । হাতে ধরা একটা মাবখারা , লবান জ্বলছে তার ভেতরে , গলগল করে সুগন্ধি ধোঁয়া বেরুচ্ছে । মন্দিরের চাতালে
জ্বলন্ত লবান সমেত মাবখারা রেখে আকুলি বিকুলি হেবা প্রায় বাতাসের মত উড়েই চলে গেলো আমাদের সামনে
দিয়ে । আমি তাকে দেখেই চিনতে পারলাম । এ হল হেবা । আরিয়েনের হেবা । গ্রিক সদাগর আরিয়ন । গতবার তার সঙ্গে মশলার সওদা নিয়ে আমার তুমুল বচসা হয়েছিল
।
গ্রিক আর রোমানদের
কাছে সুগন্ধির প্রচন্ড চাহিদা ছিল ।নাবাতিয়েনরা এই ব্যবসাকে ট্যাঁকে পুরে রাখতো তো
বটেই পুরো সুগন্ধি বানিজ্য পথে তাদের দাদাগিরি চলতো । ভিনদেশি প্রতিটি ক্যারাভানকে
শুল্ক দিয়ে হত । ধনসম্পদ ছিল তাদের সভ্যতার মেরুদণ্ড ।
সেই সরু রাস্তা দুম
করে যেখানে শেষ হয়েছে সেখানেই সেই পাথর কাটা বিস্ময় । মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ট্রেজারি বা আল খাজনেহ । কাল রাতে উতরোল রোমাঞ্চ তৈরি করেছিল সে নিপুণ হাতে । কিন্তু আজ যে এনে ফেলেছে একেবারে গল্পের বই এর পাতায় । এর সময় প্রথম খ্রিস্টাব্দ । আরব বেদুইনরা এক সময়
মনে করত এর মধ্যে প্রচুর সোনাদানা লুকোনো
আছে । তাই এর নাম খজানা ।টিনটিনের কমিক্স থেকে হলিউড , এল খাজনেহ দাপিয়ে বেরিয়েছে । এমনই এর আকর্ষণ । ইন্ডিয়ানা
জোন্স অ্যান্ড দ্য
লাস্ট ক্রুসেড আরও কতো । এটি আদতে একটি সমাধি
। কাল রাতে সব ছিল অন্যরকম । আর আজ সকালে এর চারদিকে যে মেলা আর হই হট্টগোল চলছে তা দেখলে মনে হয় যেন কোনও
সিনেমা হলে বসে থ্রিলার দেখছি । চারদিকে উটের ভিড় , টাঙ্গা , প্রচুর ট্যুরিস্ট । উটের মুখের পাশে মুখ নিয়ে ফিলিপিনো সেলফি । রকমারি চকমকি আর রঙিন পাথরের দোকান , বেদুইন সুর্মা , মনোহারি সুগন্ধি , সদ্য
পেষাই কমলা লেবুর রসে ফুর্তির তুফান ।
এবারে তাকে পেছনে
রেখে সামনে এগিয়ে যাই ।
এটা একটা বিশাল
বড় জায়গা । একটা পুরো শহর । তার নানান দিকে নানান দেখার জিনিস । পুরো অঞ্চল টা নানা
রকম ভাবে ভাগ করে নিয়েছে এরা । পর্যটকদের সামনে
অনেকগুলো পছন্দের তালিকা । ইচ্ছে করলে সারাদিন
এখানে কাটানো যায় । খুব কম করে হলেও পাঁচ ছ কিলো মিটার হাঁটতেই হবে যে । এরপর আছে হরেক রকমের উঁচু উঁচু পাহাড় । নাবাতিয়েনরা মনের সুখে
পাহাড়ের টঙে , বিপজ্জনক উচ্চতায় তাদের
মৃত্যুকে মহীয়ান করে সমাধি বানিয়েছে । কোথাও মন্দির
সাজিয়েছে , কোথাও দেবতার উদ্দেশ্যে পশুবলি দেবার জায়গা নির্দিষ্ট করেছে । সব তো আর মাথায় ওপর এই তেতে ওঠা রোদ্দুর
আর নড়বড়ে শরীর নিয়ে ঘোরা যায় না । যারা হাইকিং
ভালোবাসে তারা অনেক অনেক দূর চলে যেতে পারে ।
এই শহরটা মানে রেকেম
মানে পেত্রাকে গোলাপ শহর বলে একসময় ডাকা হত । পাথরগুলোর মধ্যে একটা হালকা গোলাপি আভাস রয়েছে ।
বাড়িঘর গুলো বেশির
ভাগই ধ্বংস হয়েছে । ঘর বাড়ির সেরকম চিহ্ন পাওয়াও যায় না । কিন্তু ধর্ম আর
মৃত্যু টিকে গেছে । কারণ সমাধি আর
মন্দির বানানো হয়েছে পাথর কেটে । আর সেগুলোই এখনো
বেঁচে আছে । ভাবতে অবাক লাগে এই
বিশাল বিশাল সৌধগুলো এরা বানালো কী ভাবে ? এই খসখসে কঠিন মরুভূমিতে ।
আমরা জেনে গেছি পেত্রায়
এসে জমায়েত হত অগুনতি ক্যারাভান । ক্যারাভান শহর ছিল
এটা । বহু মানুষের সমাগম । ডোবার জলে শ্যাওলা ধরে । কিন্তু নাবাতিয়েনদের
জলে শ্যাওলা ধরেছে অনেক অনেক পরে । নিজেদের নগরী পেত্রা ছিল সমস্ত আরব ও
ভূমধ্যসাগর পারের বনিকদের আড্ডাখানা ও আড়ত ।
এই মেলামেশাই তাদের
জলধারাকে বয়ে নিয়ে গেছে অনেক দূর ।
আমাদের গাইড সুলেইমান
দেখাচ্ছিল কেমন ভাবে মিশে গেছে গ্রিস রোম আর ইজিপ্টের শিল্প ও গঠন শৈলী ।
“এই শিলালিপিটা লক্ষ
করুন । দেখুন দুধরনের লিপির ব্যাবহার । “
নাবাতিয়েনরা আরামিক
লিপি ব্যাবহার করত । এর সঙ্গে অনেক আরবিক
শব্দের মিল রয়েছে । কিন্তু প্রথম খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গ্রিকদের দাপটে
তাদের সম্ভ্রমের চোখে দেখতে শুরু করে নাবাতিয়েনরা । তাই একটি পোশাকি ভাষারও
ব্যাবহার শুরু হল । লিপিগুলো হয়ে গেলো দ্বি ভাষিক । আরামিক এবং গ্রিক । নাবাতিয়েনদের টাঁকশাল ও ছিল । তৈরি হত ধাতুর মুদ্রা । আর ছিল উন্নত মানের
মৃৎ শিল্প । সমাজে ভালোরকম শ্রেণী
ভেদ ছিল , প্রত্নতত্ত্ব অন্তত তাই বলে । বড়লোকদের কবর আর সাধারণ ছাপোষা দের কবর
একেবারেই আলাদা । মন্দিরগুলো বিপুলাকার । রাজা , পুরোহিত , বণিক এরাই সমাজের মাথা
ছিল । দাস প্রথা অবশ্যই ছিল ।
প্রত্নতত্ত্ব এবং অসংখ্য লিপি বলেছে মেয়েরা বেশ স্বাধীনতা ও
সম্মানের মধ্যেই ছিল ।রাজনীতি ধর্ম ও সংসার
, তিনটি জায়গাতেই বেশ ভালো ছিল মেয়েদের স্থান । শিল্প
সৌন্দর্যের ভক্ত ছিল তারা । টেরাকোটার প্রত্ন নিদর্শন গুলো বড় সুন্দর ।
হেবার সাজ দেখলেই
তা বোঝা যায় , তার চলন , ঠাট বাট । ভিনদেশি প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করবে হয়তো এই
শহরের কোথাও ।
এখানে রোমান থিয়েটার আছে , আছে হাই প্লেস অফ স্যাক্রিফাইস,
মনাস্টেরি । সবচেয়ে উঁচুতে মনাস্টেরি । প্রচুর ওঠা নামা । গাধা খচ্চর ঘোড়া সবই
মজুত আছে । সওয়ারির অপেক্ষায় । পেত্রায়
ঘোরা, সারাজীবনের সঞ্চয় । সাহেবদের থ্রিলার
মুভিতেই এরকম দৃশ্য দেখা যায় কেবল ।
মায়াগন্ধ
গাছ যখন কাঁদে বা তার
যখন রক্ত ঝরে সেই রক্ত বা চোখের জল জমে জমে রেসিন তৈরি হয় । যত দুঃখ আর ব্যথা গন্ধ
হয়ে পুড়তে থাকে । সুরভি ছড়ায় । ওষুধ তৈরি করে , মলম তৈরি করে । রোগ নিরাময় করে ,
যন্ত্রণা সারায় । নাবাতিয়েনদের গল্প লবান আর মাঢ় এর গল্প ।
লবান ,
ফ্রাঙ্কিন্সেন্স আর মাঢ় (myrrh), একদম সাইমন
গারফাঙ্কেল এর পারস্লে , সেজ , রোজমারি , থাইমের গান । এই সুরভিই নাবাতিয়েনদের
ব্যাবসার প্রাণ ভোমরা । নাবাতিয়েনরা এসেছিল ইয়েমেন থেকে । ইয়েমেন এই সুগন্ধের
আঁতুড় ঘর । যাযাবর হয়ে সুগন্ধ বেচতে বেচতে নাবাতিয়েনরা এক বিস্ময়কর জায়গায় পৌঁছে
গেছিল । ইওরোপ , প্রাচ্য থেকেই সুগন্ধির ব্যাবহার শিখেছিল । আলেকজান্দারের অভিযান
ও পারস্য দখলের ফলে পশ্চিমি দুনিয়ায় গন্ধ দ্রব্যের চাহিদা হুহু করে বাড়তে থাকে ।
নাবাতিয়েনরা সুযোগ বুঝে খুব চড়া দাম হাঁকত । দূর প্রাচ্য আর রোমের মধ্যে বিস্তৃত
বানিজ্য পথ তারা নিজেদের কব্জায় রেখেছিল আর কিছুতেই কাউকে জানতে পর্যন্ত দিত না তাদের বানিজ্য সামগ্রীর
জায়গাগুলো কোথায় লুকোনো আছে । মশলা আর সুগন্ধি ,
বহুকাল তারা একচেটিয়া ধরে রেখে ছিল । ডিওডোরাস
এমনও লিখেছেন যে গ্রিসে এই সব সুগন্ধির দাম এতো চড়া ছিল যে বড়বড় রাজপুরুষদের মাথা
পিছু বরাদ্দ বেঁধে দেওয়া হত অর্থাৎ রেশন ।
পেত্রা এখন ইউনেস্কোর অন্যতম হেরিটেজ কেন্দ্র ।
কিন্তু দুনিয়ার সামনে পেত্রা আসে ১৮১২
সালে। জোহান লাডুইগ বারখহারড একজন সুইস প্রাচ্যবিদ ও অভিযানকারী । বহু কাঠখড় পুড়িয়ে
তিনি পেত্রা আবিষ্কার করেন । লুপ্ত নগর পেত্রা
আবিষ্কারের জন্য সিরিয়া , লেবানন এইসব জায়গায় থাকতে শুরু করেন । সে কাহিনিও পেত্রার নিজের গল্পের মত কম আকর্ষণীয়
নয় । বারখহারড আরবি শিখেছিলেন , লম্বা দাড়ি রাখতেন , নিজেকে পরিচয় দিতেন শেখ
ইব্রাহিম ইবন আব্দাল্লা নামে । স্থানীয় লোকজনদের রীতিমত তোষামোদ করে চলতেন নিজের
নিরাপত্তার জন্য । বহুবার চোর ছিনতাইবাজরা তাঁকে নাস্তানাবুদ করেছে । কিন্তু শেষ
পর্যন্ত তিনি সেই গিরিখাত পেরিয়ে পেত্রায় ঢুকতে পেরেছিলেন । বলাই বাহুল্য তখন
জায়গাটা ভয়াবহ দুর্গম ছিল ।
পেত্রার রমরমা
রোমানদের সহ্য হবে কেন ? পেত্রা শেষ পর্যন্ত রোমান আধিপত্য মেনে নিয়েছিল । শহরটি পুরোপুরি জলপথ বর্জিত , এদিকে সমুদ্রপথে বানিজ্য সহজ হয়ে যাবার ফলে পেত্রা তার গুরুত্ব হারাতে থাকে ।
৩৬৩ খ্রিস্টাব্দে এক ভয়ানক ভূমিকম্পে এই শহরের অপরিসীম
ক্ষতি হয় । সপ্তম শতাব্দীতে পেত্রা তখন প্রায় জনহীন । আর এখন রয়ে গেছে স্থানীয় বেদুইনরা । পাথর কাটা গুহার মধ্যে কেউ কেউ আবার থাকেও শুনলাম ।
চারদিকে চক্কোর কাটছে
উট ঘোড়া গাধা খচ্চর।তাদের উপোসী রোজা রাখা মালিক , মালিকের বাচ্চা শাগরেদ ,
নানান পশরা , দরদস্তুর । এসবের মধ্যে কখন বেলা
পড়ে এলো । নাসিরুদ্দিন মোল্লার মত গাধার পিঠে উঠে চলার
ইচ্ছে হল । এলো সুজু আর সুজানা । তার ওপর কর্তা গিন্নি চেপে বসলুম দুজনা । আর গাইতে গাইতে চললুম তৃতীয় সুর ষষ্ঠ সুর / গুপী চলল অনেক দূর
চলি চলি চলি চলি পথের
নাইকো শ্যাষ ।
গাধার পিঠে দুলকি
চালে চলতে চলতে চলতে চলতে এসে পড়েছি আবার
সেই এল খাজনেহ । গাধার পিঠ থেকে নেমে টাঙা নিলাম । ওই পাথুরে পথে দুধারে হলুদ দানব পাহাড় আর এক আকাশ নীল রঙ নিয়ে হুড়মুড়িয়ে
ছুটে চলছে আমার ঘোড়ায় টানা টাঙা ।
ব্যাবসায় লাভ হয়েছিল , অনেক লাভ । আর আরিয়নকে , নাহ বলেই ফেলি ।
হেবাকে খুব পছন্দ ছিল আমারো ।পয়সাকড়ি আমারো কিছু কম ছিল না । ছিল না শুধু দুটি নীল
চোখ , একমাথা সোনালি কোঁকড়া চুল আর লম্বা
নাক । হেবা আমার দিকে তাকিয়ে দেখেই নি কোনোদিন । আরিয়নকে
তাই , হাই প্লেস অফ স্যাক্রিফাইসে নিয়ে
গিয়েছিলাম , রাতের দিকে ,অ্যা ম্ফোরা ভর্তি জম্পেশ মদ নিয়ে বলেছিলাম ভালো রেশম আছে , চলো নিরিবিলিতে কথা
বলি । চাঁদ তখন মাথার ওপর , নিচে দুশারার মন্দিরে আলো জ্বলছিল , নিশিগন্ধ ঝরছিল আকাশের তারাগুলো থেকে , আমি পেছন থেকে
একটা ধাক্কা দিলাম মাত্র ।
রেড কেভ হোটেলে ঢুকে বেশ
খোশ মেজাজেই বললাম ,
কীফ হালাক ? অলহমদুলিল্লাহ ।বিদ্দি অরেঞ্জ জুস ।আর মাকলুবা
। অলিভ , লেবু , জাতার মাখা মুরগি আর ভাত
।
কেমন আছেন ভাই ? কমলা
লেবুর রস চাই আমার । আর একটা মাকলুবা ।
মেরে দিল তু সুনা কোই
অ্যায়সি দাস্তান ...
মঞ্জিল হ্যাঁয় অনজানি
.