Tuesday 28 April 2015

ডিডগেরিডুর সুর

নীল পাহাড়ের কোলে এলিয়ে আছে কাটুম্বা গ্রাম । যতদূর তাকানো যায় চোখে লেগে থাকে নীল পাহাড়ের সারি আর স্বপ্নকুহেলী মাখা  ঘন সবুজ বন বৃষ্টির জল ধুয়ে নিয়েছে তাকে । ভেজা বাতাস ,নীল পাহাড় আর সবুজ বন । রোদ্দুরে  ভেসে যাচ্ছে চারদিক অকৃপণ আলো । আলো তো নয় । আলোর ঝরনা । আর সেই রোদের রামধনু রঙ মেখে  বনের গভীরে ঝরঝর বয়ে যায় কাটুম্বা ঝোরা আর কাদুম্বা  নদী   ।  পাহাড় ঘেঁষা সবুজ বনে ঝিমঝিমে নীলচে  ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশা জড়িয়ে থাকে সব সময় । কান পাতলেই শোনা যায় ঝরনার গান আর লায়ার পাখির ডাক ।


Lyre Bird
  রিনরিনে । সুরেলা । তীব্র । আর কোন শব্দ নেই সেখানে। লায়ার পাখি তার ঝলমলে পাখা নিয়ে বনের মধ্যে কোথায় লুকিয়ে লুকিয়ে ডাকে এ পাখি আবার অন্যের ডাক নকল করতে পারেপাখি সুর করে ডাকে “ মিনহি ইইই, উইমলাআআহ , গুন্নেডুউউউ” অমনি তিন বোন  খিল খিল হেসেহেসে এ ওর গায়ে ঢলে ঢলে পড়েযেন একরাশ বুনো ফুলের বনে বাতাস বয়ে গেল । সঙ্গে সঙ্গে  কুহেলী পাহাড়ে প্রতিধ্বনি ভেসে এল -  “মিনহিইইই, উইমলাআআহ , গুন্নেডু উউউ”ওরা গাঁয়ের ডাক্তার মানে  বদ্যির তিন মেয়ে । বদ্যির চোখের মণি ।পাহাড়ের এক গভীর  গর্তে থাকত বুন্যিপ । একটা ভয় দেখানো বিটকেল জন্তু



প্রতিদিন তিন মেয়ের বাবাকে  গর্ত পার হয়ে কাজে যেতে হয় , যাবার আগে মেয়েদের যত্ন করে রেখে যায় সে কি জানি সাবধানের মার নেই ।একদিন পাহাড়ের খাড়াইএ উঠে বদ্যি দেখে গর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে ভয়ঙ্কর বুন্যিপ আর মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে প্রায় তার  কাছেই । বাতাস বইছে না, পাখি গান গাইছে না, বনের প্রাণীরা ডাকছে না,বনপরীরা ভয়ে লুকিয়ে পড়েছে। চারদিক থমথম । বুন্যিপ এগিয়ে আসছে একটু একটু করে । মেয়েদের বাঁচানোর জন্য তার হাতের মন্ত্র পড়া হাড় টা বদ্যি ছুঁড়ে মারে মেয়েদের দিকে । চোখের নিমেষে তাদের পাথর বানিয়ে দেয় । 


তিন বোন 


 এবার রেগে গিয়ে তাকে তাড়া করে বুন্যিপ ।  জাদুমন্ত্র দিয়ে লায়ার পাখির রূপ ধরে নেয় বদ্যি। যাক সব্বাই বেঁচে গেল তাহলেকিন্তু তাড়াহুড়োতে সেই জাদু মন্ত্র পড়া হাড় টা খাড়া পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বনের মধ্যে কোথায় যে টুপ করে পড়ে গেছে! আজও লায়ার পাখি সেই হাড় খুঁজে বেড়াচ্ছে ।পাথর হয়ে যাওয়া তিন বোন চুপচাপ আজও দাঁড়িয়ে আছে নীল পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ,  লায়ার পাখি চক্কোর কাটে তাদের মাথার ওপর কবে পাখি খুঁজে পাবে সেই হাড়, কবে আবার তারা তিনটে ফুটফুটে বোন হয়ে উঠবে , কবে আবার তাদের বাবা কাজ থেকে ফিরে এসে পাতার আগুন জ্বালিয়ে দেবে, তারা গোল হয়ে ঘিরে বসবে , নদী থেকে  ধরা হবে বারামুন্ডি মাছ,  বাবা ডিডগেরিডুর সুর তুলবে, অন্ধকারে কালচে নীল আকাশে তখন সন্ধ্যাতারা জ্বল জ্বল করে উঠবে। কবে?  কবে আসবে বাবা? কবে হবে এই পাথর থেকে মুক্তি? লায়ার  পাখি আজও খুঁজে চলেছে আর ডেকে চলেছে  “মিনহি, উইমলাহ , গুন্নেডু উউউ।



পশ্চিম থেকে পুবের দিকে চলছিল সে ক্লান্ত ।তৃষ্ণার্ত । তার মাথার চুলে, কপালে ,জামায় রেণু রেণু সোনা ।  দুপুরের গনগনে রোদে এলোমেলো আলুথালু  গমরঙা সুন্দরীর মত এলিয়ে থাকা পিঞ্জারার পথ ধরে নির্জন মান্ডুরার শান্ত জলে পা ভিজিয়ে নেয়
সোনার দেশ । মাটির তলায় সোনা । তামা, বক্সাইট, ইউরেনিয়াম ।  পেট্রলিয়াম।  তাল তাল পাথর চাপা ।   মাটির ওপরেও সোনা । দিগন্ত প্রসারী সোনালি শস্যের মাঠ ।  অফুরন্ত । প্রকৃতি তার ভান্ডার বিলিয়ে দিচ্ছে উদার হাতে ।  শানিত নীল আকাশ  থেকে ঝরে পড়ছে সোনা । আলোকের এই ঝর্না ধারায় ধুইয়ে দাও । কোথাও এতটুকু কার্পণ্য নেই , মালিন্য নেই । আকাশ বাতাস নদী সমুদ্র বন ফল শস্যসম্ভার  মাছ দুধ  কোন কিছুরই অভাব নেই । কিন্তু  অয়ারাগুল মুরিয়াটার মনে শান্তির অভাব কান্না তার আর  আসে না আজকাল মান্ডুরা ছেড়ে   মুরিয়াটা এগিয়ে চলে । ঝড়ের বেগে । ইয়ারালুমলা হয়ে টাগেরনং । আরো পুবে । মুররুম্বিডগি নদীর ওপর বাঁধ । সেই বাঁধ ছাড়িয়ে নীল পাহাড়ের গায়ে টিডবিনবিল্লার জঙ্গল ।জঙ্গলের মধ্যে তার ছোট্ট ঘর । গাছের বাকল ।পাতার ছাউনি । শহরে সে বড় একটা যায় না । কেনই বা যাবে? কে তাকে চেনে সেখানে ? তার তো একটাই পরিচয় । নুনগা । অ্যাবরিজিনাল টিডবিনবিল্লার গাছপালার মধ্যে তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আজ সে বেঁচে আছে । একা । তার বউ মনের দুঃখে মরে গেছে কবে বেশির ভাগ সময় ছবি আঁকায় বুঁদ হয়ে থাকে । পাতা শেকড় বাকড় মাটি খনিজ কতো কিছু থেকে রঙ বানায় । মোটা চটের ওপর , গাছের বাকলে,ছবি এঁকে চলে নেশার মত ।






সন্ধে হলে আকাশে যখন সন্ধ্যাতারা জ্বল জ্বল করে মুরিয়াটা তার ডিডগেরিডু বাজাতে থাকে । ডিডগেরিডুর গম্ভীর সুর তার বুকে মুচড়ে মুচড়ে ডাকতে থাকে “আলিরা, বিন্দি, মায়া “ ।
কোথায় তোরা মা আমার ? কোথায় হারিয়ে গেলি? আর তো দেখি না? “আলিরা বিন্দি মায়া” ? ফিরে আয় ফিরে আয় একবার ।বুক টা যে বড় খালি খালি লাগে ।



 হারিয়ে যাওয়া মেয়ে তোমার মাগো
বাতাস হয়ে ফিরবে ঝড়ের রাতে
বনে বনে বৃষ্টি পাতে জাগো
নতুন মানুষ সবুজ নিশান হাতে
 লোককথার সেই  পাথর হয়ে যাওয়া তিন বোনের মত মুরিয়াটার তিন মেয়েও আর কোনো দিন ফিরে আসবে না । তারা হারিয়ে যায় নি কোথাও চুরি হয়ে গেছেএমনটাই বলছে এরা । “স্টোলেন জেনারেশন “। লস্ট নয় , স্টোলেন, হারিয়ে যাওয়া নয় , চুরি হয়ে যাওয়া প্রজন্ম । ১৯০৯ থেকে ১৯৬৯ এবং তার পরের কিছু সময় ধরে  ব্রিটিশ সরকার আর চার্চ একযোগে শুরু করে এক  তান্ডব ।  মায়ের বুক থেকে সন্তান  জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দশকের পর দশক । চুরি হয়ে গেছে আলিরা বিন্দি মায়ার মত কতো দুধের বাচ্চা । বাচ্চাদের বাপমায়ের কাছ থেকে সরিয়ে দেবার জন্য খাড়া করেছিল নানান অদ্ভুত যুক্তি । "Aboriginal children separated, often forcibly, from their families in the interest of turning them into white Australians”.
শিকড়  উপড়ে আনা এইসব বাচ্চাদের শ্রম ঘরে বাইরে কাজে লাগানোর ধান্দাই ছিল বড় । অস্তিত্বসংকট  আর আত্মগ্লানি  নিয়ে  বড় হয়ে ওঠা একটা ক্ষত বিক্ষত প্রজন্ম   , নাড়ির যোগ ছেঁড়া , ইতিহাস নেই ,সংস্কৃতি নেই, নেই শিকড়ের টান, দুটো খেয়ে পড়ে বাঁচা আর দুটো ইংরেজি কথা বলাএদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে সভ্যতার ধারক বাহকেরা ।

ধর্মের কল বাতাসে নড়ে । উত্তাল বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে  দাবী এল  । ক্ষমা , ক্ষমা চাও সেই সব মায়েদের কাছে, তাদের চোখের জলের কাছে, নতজানু হও সেই সব মানুষদের কাছে যাদের ওপর এসে পড়েছে একটাই তকমা, স্টোলেন জেনারেশন । রাষ্ট্র শক্তি  শেষ পর্যন্ত নত হল । ১৯৯৮ সালের   ২৬ মে   অস্ট্রেলিয়া  প্রতি বছর পালন করে আসছে  ন্যাশনাল সরি ডে।
২০০৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টের তরফে  আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ  প্রকাশ -.
We reflect on their past mistreatment.
We reflect in particular on the mistreatment of those who were Stolen Generations—this blemished chapter in our nation’s history.
... To the mothers and the fathers, the brothers and the sisters, for the breaking up of families and communities, we say sorry


অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে ঘুরতে ঘুরতে কতগুলো ব্যাপার  একই রকম ভাবে নজরে পড়ছিল । ইওরোপিয় বংশধর বাবু বিবিদের  দামি দামি শহর । ভয়ানক শুচিবায়ুগ্রস্ত । একেবারে ছাতিমতলা লেনের এঁদো গলির পিসিমার মত ।  এয়ারপোর্টে গোবরজলের বদলে গায়ের ওপর কুকুর ছেড়ে দেয় । জুতোর তলা ম্যাগনিফ্লাইং গ্লাস দিয়ে দেখে তাতে কোন  অন্য দেশের দেহাতি মাটি লেগে আছে কিনা , এর ওপর যদি কোয়ারান্টাইন  লাগু হয়ে যায়  তবে তো জীবন বরবাদ । এত হ্যাপার হেতু কি ? হেতুর কারণ তাদের এই দেশের অতি বিশুদ্ধ জলবায়ু , ফ্লোরা এবং ফনা  ,উদ্ভিদ ও   প্রাণীজগত যাতে কোন ভাবে , এমনকি অবাস্তব দুঃস্বপ্নেও যেন সামান্যতম ক্ষতিগ্রস্ত না হয় । অথচ এই দেশ এই মাটি এই আকাশ এই আলো সবটুকুই কি তাদের একার ?

অনেকে বলেন শুচি বায়ু গ্রস্ততা একটা মানসিক রোগ । একটা পাপবোধ , অন্তঃ করণ থেকে কুড়ে কুড়ে খায় । তবে এদেরও কি তেমন কিছু আছে? আছে কি কোন পাপবোধ?
 এখানকার রাস্তা , বিভিন্ন শহরের নাম ,  দোকান রেস্তোরাঁর নাম , নদী জঙ্গলের নাম এসবের মধ্যে কতগুলো নামহীন মানুষের মিছিল দেখতে পেলাম যেন   উলুমুলু , ওলংগং  , গিলাং , কিলডা ,ইলুকা , ওস্তানা ,কোনোবা , মানুকা , কিল্লারা আরো  অনেক অনেক অজস্র কবেকার আদি গন্ধ স্মৃতি  বয়ে নিয়ে চলছে । তবে তারা কোথায়? যারা রেখেছিল এইসব নাম?  না,  এখন তাদের সহজে দেখতে পাওয়া যায় না । তারা যেন ইনভিজিবল ।  শুধু এই নামগুলোই নয় , তাদের এই উজ্জ্বল “অনুপস্থিতি”, আড়ালে থেকেও যে তারা কতো বাঙময়,তার পরিচয় ছড়িয়ে রেখেছে তাদের শিল্পকলায়   বড় বড় আর্ট গ্যালারি , মহার্ঘ সব  বুটিক, বিপনিতে ছেয়ে আছে তাদের  তুলির জোরালো টান,রঙের মায়াজাল , স্পষ্ট তেজালো অনুভূতিচড়া দামে বিকোয় সে সব সামগ্রী ।অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাবরিজিনাল কালচার ব্যাপারটা পাব্লিক  খুব খায় , শহুরে সাদাদের  তাতে  তোল্লাই খুব ।   কারণ এতে পয়সা আসে প্রচুর । লোকের হাতে অনেক পয়সা ।   একটু  অ্যাবরিজিনাল, একটু অ্যাবস্ট্রাক্ট, একটু এথনিক । নিঃসঙ্গ বিবর্ণ ছাই রঙা কৃত্রিম দিনগুলো ভরে ওঠে ওদের অকৃত্রিম রঙের জেল্লায় ।  ক্রিম কালারের সোফার পাশে বেইজ ও রাস্ট রঙা পর্দা ঘেঁসে  টেবিল ল্যাম্পের কোমল আলোয় দারুণ মায়াময় সেই সব ভানহীন রঙের জাদু ।













অস্ট্রেলিয়ার স্যুভেনিরে ক্যাঙ্গারু কোয়ালার পাশে অ্যাবরিজিনালদের ছবি আঁকা থাকে দেখেছি  ।সারা গায়ে ডোরা কেটে এক হাতে বুমেরাং আর অন্য হাতে ডিডগেরিডু নিয়ে তারা ট্যুরিস্টদের আমোদ দেয় । বেঁচে থাকার লড়াই সে একই সঙ্গে পণ্য আর বিনোদন দুই ই । তারপর বেচাকেনা সারা হলে কোথায় সরে পড়ে কেউ জানেনা ।  শহর ভরা জৌলুসে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না ।

ডিডগেরিডু  /পিট্ স্ট্রিট সিডনি  

 মনে পড়ল ,ছত্তিশগড় ওড়িশার আদিবাসীরা  লম্বা লাঠিতে  সুন্দর নক্সা বানায় । সবাই আহাউহু করে কিনে নিয়ে যায় বাড়িতে সাজাবে বলে । ওই লাঠিগুলো হাতের তিন আঙুলের কায়দায় বন বন ঘুরোলে একটা সুন্দর সুরেলা আওয়াজ বেরোয় , আবার ওপর নিচ নাড়ালে মনে হয় যেন ধূপঝোরার পাশে নুড়ি পাথরের  শব্দ । ঘন জঙ্গলে সাপ জোঁক , কাদা , কাঁটা ভরা পথে একা একা চলার সময় ওদের নিঃসঙ্গতা  কাটায় ওই  আওয়াজ  দিয়ে ।হুইস্লিং ইন দা ডার্ক । শৌখিন ড্রয়িং রুম থেকে অনেক যোজন দূরে । বেঁচে থাকার লড়াই ।











অস্ট্রেলিয়াকে বলা হয় ইমিগ্রান্টদের দেশ । সুযোগ সন্ধানীদের স্বর্গরাজ্য । সেই স্বর্গরাজ্যের পরোয়ানা নিয়ে সেই যে এলেন ব্রিটিশ রাজকীয় নৌসেনার নাবিক ক্যাপ্টেন জেমস কুক, ১৭৭০ সালে ,এলেন তো এলেন আর ওঠার নাম গন্ধও দেখা গেল না । উপরন্তু আকাঠ উটকো লুম্পেন বদমাশ ক্রিমিনাল দের  দেশ থেকে ধরে ধরে  এনে এদেশে চালান দেওয়া শুরু হল । তার এসে দিব্যি গ্যাঁট হয়ে বসল । সমুদ্র ঘেরা প্রাকৃতিক জেল খানা ।  বছরের পর বছর ঘুরতে তারাই আবার হোমরাচোমরা বনে গেল ।

ক্যাপ্টেন কুকের হাত ধরেই এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার  সোনা ফলানো মাটিতে ভূমিসন্তানদের উৎখাতের নিশ্ছিদ্র আয়োজন । বীরভোগ্যা বসুন্ধরা । শুনতে খারাপ লাগলেও অতীত তো তাই বলে। দশকের পর দশক উৎখাতের পর উৎখাত । সাদা চামড়ার চতুর পরিকল্পনা ছিনিয়ে নিতে থাকল কালো গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষগুলোর জন্মগত ন্যায্য অধিকার ।এই প্রকৃতি , এই মাটি এই দেশে  তাদের বেঁচে থাকার অধিকার ।

দুই বিশ্ব যুদ্ধ আর তিরিশ দশকের  অর্থনীতির গ্রেট ডিপ্রেশনের ভয়াবহতা  লাজ লজ্জা ঘুচিয়ে বেপর্দা করে দিয়েছিল সব কিছু ।  দলে দলে কাতারে কাতারে লোক বেঁচে থাকার তাগিদে  ইওরোপ থেকে চলে এসেছে এ দেশে । নামগোত্রহীন চালচুলোহীন  হাড়ে হাভাতে মানুষের স্রোত এসেছে জীবিকার সন্ধানে ,জীবন গড়ার তাগিদে , বেঁচে থাকতে ।  সবাইকে জায়গা ছাড়তে ছাড়তে   ক্রমশ পিছু হটে গেছে আদি বাসিন্দারা ,গুটিয়ে গেছে তাদের নিজেদের  মধ্যে,অসম্মান আর বঞ্চনার অভিমান নিয়ে





কিন্তু তাদের সৃষ্টির বর্ণিল কুহক ,তাদের নামের  অগুনতি শহর রাস্তা  কানে কানে ডিডগেরিডুর সুরের মত  মৃদু অথচ স্পষ্ট ভাবে বলে চলেছিল , এ দেশটা আসলে আমাদের । আমাদেরই ।জানো না, ২৬ শে জানুয়ারি  অস্ট্রেলিয়া যখন জাতীয়  দিবস পালন করে, এদেশে ব্রিটিশ জাহাজের নোঙর ফেলার প্রথম দিন, আমরা ওই দিনটাকে বলি ইনভেশন ডে,আমাদের ওপর জুলুম শুরু হবার প্রথম দিন





অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের প্রথম কিস্তি  নিবেদন করছি সে দেশের অচ্ছেদ্য অঙ্গ ,সেই সব আদি বাসিন্দাদের,  নিজের দেশে পরবাসী হয়ে   সেই  দেশ যারা স্বপ্নের মধ্যে আজও খুঁজে খুঁজে বেড়ায় 

বুমেরাং 
পাহাড়তলির গাঁয়ে কাঠকুটো ভালবাসা দিয়ে
সে-ই জ্বেলেছিল অগ্নি ,শিখিয়েছে নাচ
সেই দিয়েছিল স্বাদ মহুয়ার গড়েছে কুঠার
দেখিয়েছে টিলা থেকে হরিণের শিঙে গাঁথা
রক্তমাখা আদিবাসী চাঁদ
অনেক দিয়েছে সে তো, আজ তাকে কিছু দিতে হয়
একান্ত আপন মৃত্যুভয়, মাঝরাতে হঠাত পিপাসা
কিছু ভ্রম কিছু পদাবলি , মেদুর স্পর্শের কান্না
এইসব তাঁকেই প্রণাম


কবিতা - বাসুদেব দেব
চিত্রকলার ছবি নেওয়া হযেছে  ন্যাশনাল  আর্ট  গ্যালারি  ক্যানবেরা ,অস্ট্রেলিয়া থেকে
Lyre bird /blue mountain   এর ছবি  গুগল
ডিড গেরিডুকে ডিডজেরিডু ও বলা হয়ে থাকে।

















Wednesday 8 April 2015

লারপেন্ট সাহেবের দপ্তর


লারপেন্ট সাহেবের ভাগ্যটা  নেহাত মন্দ ছিল না । কাজের ক্ষেত্রে  তার  সুনাম ছিল বেশ বড়সাহেবরা তার নাম বিলক্ষণ জানতেন ।  অনেকেই হয়ত করিৎকর্মা হতে পারে কিন্তু  তার মত এমন সুযোগ ক’টা লোকের কপালেই বা জোটে? তা,এমন সুযোগ হঠাৎ এসে পড়ার  কারণ হল, হালাত , সোজা কথায় যাকে বলে  অবস্থার ফের




আলেক্সজান্দ্রিনা ভিক্টোরিয়ার নজর এড়িয়ে কোন কিছু ঘটা সম্ভব ছিল না ।  সমুদ্র ঘেরা ওই  একরত্তি দ্বীপের রাজপ্রাসাদে বসে সব তার নখ দর্পণে ছিল । সবই চলছিল ঠিকঠাক । বেশ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে । এদিকে নেটিভ সেপাইগুলো হই হই করে  বিদ্রোহ শুরু করে দিল । হাতির মত পেল্লাই এক দেশ । অসন্তোষের বারুদ জ্বলে উঠছেগিন্নিমা বুঝলেন এবার রাশ টানতে হবে নিজের হাতে । ওই বেনেদের কোম্পানিকে আর বেশি লাই দেওয়া যাবে না । ও দেশে সোনা ফলে এমন লক্ষ্মীমন্ত দেশের চাবি তার  আঁচল থুড়ি গাউনের পকেটেই থাকা উচিত কি না
বিদ্রোহের আঁচ নিভে যেতেই  সময় নষ্ট না করে তিনি চাবির গোছা নিজের হাতে তুলে নিলেন ।আর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন  ধীরে ধীরে কেমন ইংরেজি শিখে ইওরোপিয় আদব কায়দা শিখে একদল বেশ অবস্থাপন্ন  জমিদার ঘরের লোক কলকাতায় বসে কেমন ঘোঁট পাকাতে শুরু করেছে । মোলায়েম ইংরেজিতে  দাবী দাওয়া জানাচ্ছে বড়লাটের কাছে । সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের  ভাষণ সরগরম করে রেখেছে  ভারতসভার মঞ্চ এরমধ্যে ফস করে ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট জারি করে গণ্ডগোল পাকিয়ে দিলেন বড়লাট লর্ড লিটন । কলকাতার শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর সরকারি বিধিনিষেধে যথেষ্ট রেগে গেলেন ।  সে সময় সরকারি চাকরির একটা বড় অংশে বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রবেশ শুরু হয়ে গেছে ।রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ঊনিশ ।
গিন্নিমা এবং তার সচিব, উপ সচিবের দল বুঝে গেলেন স্থানীয় পৌর প্রতিষ্ঠান গুলোতে এবার নজরদারি কিঞ্চিৎ বাড়াতে হবে ভিত মজবুত করতে হবে ।  প্রশাসনের একেবারে  তলার স্তর থেকে গড়ে তুলতে হবে শক্তপোক্ত ঘাঁটি। এদেশে উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের হাত ধরেই এসেছিল মানব হিতৈষণা আর উদার পন্থা ।  অদ্ভুত বৈপরীত্য । গিন্নিমার নিজের দেশে তখন লিবার‍্যাল পার্টি ক্ষমতায় এসে গেছে । সেই সুদূর জোয়ারের সঙ্গে এলেন উদারপন্থী গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নতুন বড়লাট লর্ড রিপন । স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসনে ছিল তার গভীর সমর্থন । লোকাল বডি অর্থাৎ পৌর কমিটি,জেলা ও তালুকের লোকাল বোর্ডের মধ্য দিয়ে প্রশাসন নেমে আসতে পারে একেবারে সাধারণ মানুষের  ঘরকন্নার মধ্যে । জল সাপ্লাই , ময়লা সাফাই , আলোর ব্যবস্থা,চিকিৎসা স্বাস্থ্য শিক্ষা সব এর মধ্যে । সরকার বাহাদুরের ইচ্ছে একজন একজামিনার অফ লোকাল আকাউন্টস নিযুক্ত করা ,যিনি কাজ করবেন অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের অধীনে এবং তার কাজ হবে লোকাল বডি গুলোর আয় ব্যয়ের নিরীক্ষা করা


তদানীন্তন অর্থ দপ্তরের দক্ষ কর্মচারী এফ ডি লারপেন্ট ডিসেম্বরের এক শীতের সকালে হাতে পেলেন সচিবের মোহর দেওয়া খাম । প্রথম এগজামিনার অফ লোকাল আকাউন্টস হিশেবে তার নিয়োগপত্র   মাস মাইনের সঙ্গে ২৫০ টাকা বিশেষ ভাতা১৮৮০ সালে ২৫০ টাকা ভাতা বলেই দিচ্ছে পদ টি ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ । বিশেষ দায়িত্বশীল । খুব উঁচু মহলের সুপারিশ আনতে হয়েছিল ।এইভাবেই স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে তার হিশেব পরীক্ষার কাঠামোটিও সমান  গুরুত্ব দিয়ে রানি গিন্নিমার সচিবরা বানিয়ে দিয়েছিল । রাজ্য মহাফেজখানার দলিল দস্তাবেজে লারপেন্ট সাহেবের  দপ্তরের  ইতিহাস এখন আরাম করে ঘুমিয়ে আছে । আর  সেদিন লারপেন্ট সাহেবের অনারে দাড়ি নেড়ে কলিমুদ্দি মিঞা মুরগি মটনের রোস্ট  বানিয়ে ছিল , ইয়ারদোস্তরা খুলেছিল শ্যাম্পেনের বোতল , সাঁঝবাতির মৃদু আলোয়  পিয়ানোর সিম্ফনির সঙ্গে  মেহফিল তখন তুঙ্গে ।



তারপর কী হইল? আমার মামাতো বোন তাতাই ছোট্ট বেলায় কোত্থেকে শেখা একটা অদ্ভুত ছড়া বলত  “এ বিধি কী হইল,/আরশোলা পাখি হইল,/দুর্যোধনে ভীম বধিল... (যদিও সে উচ্চারণ করত ভেম্বদিল) তবে অঘটন ঘটন পটিয়সী বিধি সে রকম কিছু অঘটন  ঘটালেন না টেমস আর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেল । লারপেন্ট সাহেব হেভেনে গেলেন উথাল পাতাল রাজনীতির ভিতর দিয়ে দেশ স্বাধীন হল । দেশ ভাগ হল ।  বিপুল জনসংখ্যা , গরিবি ,অশিক্ষা বেরোজগারির চাপে নাভিশ্বাস উঠে লোকাল বডিগুলো কোথায় যে হারিয়ে গেল । সেগুলো নিজেরাই এতো নিস্তেজ হয়ে পড়ল যে হিশেব নিকেশ পরীক্ষার সেই সাহেবি দাপট তার জাতপাত সব খুইয়ে বসল । বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে  জনগণের বৃহত্তম অংশ সেই অবহেলিতই রয়ে গেল । তাদের নতুন পরিচয় হল এবার , তারা হয়ে দাঁড়াল রাজনীতির রাঘব বোয়ালদের  ভোট ব্যাঙ্ক ।
আর সেই সঙ্গে সমান তালে ক্ষীণজীবি হয়ে পড়ছিল পৌরসভা বা পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলো । অর্থবল নেই ,ক্ষমতা নেই । একেবারে কোণঠাসা , মুখচোরা কতগুলো গরিবগুরবোদের এলেবেলে প্রতিষ্ঠান ।
স্বাধীনতার এতগুলো বছর পার হয়ে গেলেও গ্রাম এবং শহরের অগুন্তি সাধারণ মানুষদের ন্যূনতম মানবিক অধিকার গুলো যেন ধর্তব্যের মধ্যেই ছিল না । যোজনার পর যোজনা এসেছে । একই স্কিম নাম বদলে বদলে বার বার এসেছে । অবস্থার সুরাহা হয় নি টাকাপয়সাগুলো  যে কোথায় উড়ে গেল।   কোটি কোটি অসহায় মুখ আর গদির লড়াই, এই নিয়েই চলছিল বেশ । স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম এবং স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ এবং গান্ধিজি । সংবিধানে সেই আদর্শের স্থান হল ডাইরেক্টিভ প্রিন্সিপল বা নির্দেশক নীতিসমূহে । এর মধ্যে রাজনীতির মোড়লদের মনে হল জনগণের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে । সাধারণ মানুষকে তার অধিকার ও ভূমিকা সম্বন্ধে সচেতন করতে হবে ,  করতে হবে গনতন্ত্রের বিকেন্দ্রীকরণ বা অন্যভাবে কায়েমি স্বার্থের মৌরুসিপাট্টা । কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম । ১৯৯২ সালে ৭৩ ও ৭৪ তম সংবিধান সংশোধনের ভিতর দিয়ে  ত্রিস্তর পঞ্চায়েত , পৌর প্রতিষ্ঠান গুলোকে স্বনির্ভর ও শক্তিশালী করার রাজসূয় যজ্ঞ শুরু হয়ে গেল । কেন্দ্র থেকে হু হু করে টাকার বন্যা বয়ে যেতে লাগল । আর যাদের নিয়ে এসব কাজ কারবার তারা নিজেরাই জানে  না কী ঘটতে চলেছে । দেদার টাকা, প্রচুর নতুন ক্ষমতা  ,রাজনীতির ভাগ বাঁটোয়ারা , মাটির বাড়ি নিমেষে পাকা হয়ে যাচ্ছে , ধুলো ওড়ানো মোটর বাইকের ভটভটি , গলায় সোনার হার, ছোটোছেলের প্রোমোটারির ব্যাবসাআর তারই পাশাপাশি ভ্যাবাচ্যাকা  প্রান্তিক মানুষের দল ভুয়ো মাস্টার রোল , আজব বিপিএল তালিকা আর যোজনার পর যোজনার খেলায় নাস্তানাবুদস্বপ্নের উন্নয়ন তখনও অধরা । তছরুপ  আর  দুর্নীতি  মাকড়শার জাল বুনছে । রাজ্যের পঞ্চায়েত এবং পৌর দপ্তরের সামনে তখন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ । নতুন করে সব ঢেলে সাজানোর অসম্ভব পরিশ্রম ও কঠিন প্রয়াস ।




এদিকে লারপেন্ট সাহেবের সেই ঘুমিয়ে পড়া দপ্তরের কী হাল হল দেখা যাক । সেই বুড়ো দপ্তর তো তখন অন্তর্জলি যাত্রার পথে । কিন্তু তাহলে তো চলবে না । লোকাল বডিগুলোতে তখন হুমহাম করে কাজ শুরু হয়ে গেছে । এক পয়সার তৈল কীসে খরচ হইল ? এখন তো আর এক পয়সা নয়, কোটি কোটি টাকার গল্প । উপরন্তু হিশেব নিকেশ নিয়ম কানুনের ধার ধারতে এই নতুন ক্ষমতাশালীদের  ভারি বয়েই গেছে । কাজেই সেই বুড়ো কে হেঁইয়ো জোয়ান হেঁইয়ো জোয়ান বলে আবার জাগিয়ে তোলার বিপুল চেষ্টা শুরু হয়ে গেল । তার চুলে কলপ লাগিয়ে , দাঁত বাঁধিয়ে ,চশমা বদলিয়ে , হাতে পায়ে বাতের তেল মালিশ করে , ছেঁড়া জামায় তাপ্পি লাগানোর কাজ যখন পুরোদমে চলছে  তখন সেই “অশ্লেষার রাক্ষসী বেলায় সমুদ্যত দৈব দুর্বিপাকে” বুড়োর সঙ্গে আমার দেখা হল । লারপেন্ট সাহেবের দপ্তরের ভার নিলাম আমি । প্রথম দিন অফিসে ঢুকে মনে হল ভুল করে কোন ছাপাখানায় চলে এসেছি না তো? পর পর দাঁড়িয়ে আছে ফোটোকপি মেশিন । হু হু করে কপি হচ্ছে দিস্তে দিস্তে কাগজ । বান্ডিল বান্ডিল অডিট রিপোর্ট ।৩৩৫৪ টা গ্রাম পঞ্চায়েত  , ৩৪১ টা পঞ্চায়েত সমিতি আর ১৮ খানা জিলা পরিষদ । পৌরসভা আর কর্পোরেশনও পিছিয়ে নেই । চারদিকে শুধু কাগজ কাগজ আর কাগজ । বসার জায়গা নেই , চলা ফেরার জায়গা নেই ।ফাইলের পেছনে চাপা পড়ে যাচ্ছে মানুষের মাথা ।  উন্নয়নের খতিয়ান কাগজবন্দি করে চলেছে লোকাল অডিট অফিস । এমন অদ্ভুত অফিসে এর আগে কাজ করিনি।




কিন্তু কাজ করার লোক কোথায়? এই বিপুল অডিটসাম্রাজ্যের সৈন্যসামন্ত পেয়াদা বরকন্দাজ কোথা থেকে জোগাড় হবে? পুরোনো দপ্তরের তো হাতে গোনা লোক । তাদের অনেকেরই চিন্তা ভাবনায় জং পড়ে গেছে । কয়েকজন খুব ভাল ছিলেন, মনে আছে, তবে সংখ্যায় খুব কম কাজেই বিভিন্ন অডিট অফিস থেকে ডেপুটেশনে  লোকজন বন্যার জলের মত  আসতে শুরু করল । সে এক উটকো বিপদ । বেনো জলের সঙ্গে সঙ্গত ভাবেই প্রচুর  ঘোলা জল , কাদা আগাছাও আসত । নানান কিসিমের লোকজনকে সামাল দেওয়াও তখন একটা  নিয়মিত ঝামেলার ব্যাপার ছিল ।  কাজটা মোটেই সহজ ছিল না । উপরন্তু লোকাল অডিট  তারা জানে না ,কাজেই দফায় দফায়  ট্রেনিং দাওএই কম্ম  করতে করতে ইয়া বড় একটা ট্রেনিং মডিউল তৈরি হয়ে গেল । তবে এই বেয়াড়া ধরনের কাজের কয়েকটা  ভাল দিকও ছিল বৈকি ।
প্রথম ভাল ব্যাপারটা হল বুড়ো অনেকটা সতেজ হয়ে উঠে ছিল । বহু বহু দিন কোণঠাসা হয়ে থাকার পর এই প্রথম  হঠাত আলোর ঝলকানিতে তার  আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছিল। কনফারেন্স , সেমিনার ,ট্রেনিং সব সব তার নতুন নতুন অভিজ্ঞতা ।  অডিটের অন্য শাখার স্মার্ট সহকর্মীদের সঙ্গে তুলনা করে একটা মুখচোরা হীনমন্যতা কোথাও বা লুকিয়েছিল । তাই এই এগিয়ে আসাটা দেখে খুব ভাল লাগত । পুরোনোরা ব্যাপারটা খুব উপভোগ করতেন ।
 কাজের ভাল মন্দ বিচার না করেই বলছি ,অজ পাড়াগাঁ গন্ডগ্রাম, জলে কুমীর বনে বাঘ,গাছে সাপ ,ঘরে মৌচাক, হাতি দাপানো জঙ্গল , হিমালয়ের গুহা কন্দর ,বানভাসি এলাকা , মাফিয়া গুন্ডার হুঙ্কার কোথায় না অডিট ঢুকে পড়েছিল সেই সময়  ! পানীয় জল নেই শৌচালয়ের ব্যাবস্থা নেই,এমনও অনেক জায়গা ছিল । ছিল রাজনৈতিকদাদাদের চোখ রাঙানি ।

“গোরুবাথানের ঠান্ডা ভোর মনে আসে / পিছনে পাহাড় / টিলার ওপর সেই ফরেস্ট বাংলোর  শান্ত সন্ধ্যা / তিস্তা, লিস ,ঘিস নদীগুলি সঙ্গে এসেছিল/ থেকে গেল / থেকে যায় রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং তুমি”

একবার ঠিক হল নর্থ বেঙ্গলের গোরুবাথানের কাছে একটা গ্রাম পঞ্চায়েত দেখতে যাব । এর আগে লাভা গিতবিয়ং নামে  হিমালয়ের কোলে একটা সুন্দর ছবির মত পঞ্চায়েত দেখে এসে খুব উৎসাহ বেড়ে গেছে । পঞ্চায়েতের দুজন নিতে এসেছেন । কিছুদূর যাবার পর ওনারা গাড়ি থেকে নামতে বললেন। কেন? আর তো গাড়ি যাবে না । এবারে হাঁটতে হবে । ঠিক আছে , তাই হবে, চলুন । তারপর দেখলাম, না কিছুই ঠিক নেই । হাঁটতে হবে কালো বোল্ডার বিছানো পথে । দুএক কিলোমিটার তো বটেই । পুরো রাস্তাটাই নাকি এই রকম । স্বীকার করতে লজ্জা নেই , সেই দিন ওখানেই থেমে যেতে হয়েছিল । 





“ বরং ভাল যাও ফিরে যাও তোমার রঙিন তাসের ঘরে / এ অন্ধকার তালার চাবি আরেক কর্মকারই গড়ে/ ঝরনা তখন বর্ণালিময় /মুচকি হেসে বলে না, না/সভ্য মানুষ কাব্য লেখো , ঝরনা হতে অনেক মানা “।

আরেকবার একটা পঞ্চায়েত সমিতিতে গেছি । এক তরুণ বিডিও বললেন লাঞ্চ টা করেই যান , রান্না তো হচ্ছেই ।
না, না তা কেন? ও আমরা  নিজেরাই ব্যাবস্থা করে নেব ।
উনি বারবার অনুরোধ করেন । আমি বারবার একই কথা বলতে থাকি । আসলে অডিটের কাজে  এসেছি , অকারণ আবার খাওয়া দাওয়া করব কেন ? ইত্যাদি ইত্যাদিব্যাপারটা ঠাহর করতে পেরে বিডিও টি এইবার বললেন,” সে আপনি নাই খেতে পারেন । বলছিলাম কি,এখন বেলা আড়াইটে বাজে , পনেরো কিলোমিটারের মধ্যে কোন খাবার জায়গা নেই কিন্তু!”
 এবারেও স্বীকার করতে লজ্জা নেই , ড্রাইভার ও অন্যান্যদের কথা ভেবে চাড্ডি ভাত মুখে দিতেই হয়েছিল সেই গ্রামে । দানে দানে পে লিখখা হ্যাঁয় খানেওয়ালো কা নাম ।
আরেক মহিলা প্রধান কোন এক যোজনা খাতের টাকা দিয়ে মন্দির সংস্কার করেছেন । তাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না যে কাজটা নিয়ম মেনে হয় নি । বাবার থানের সংস্কার করেছেন, এত ভাল একটা কাজ , চড়কে কতো বড় মেলা হয়, কত দূর দূর থেকে লোক বাবার থানে মানত করে ,চরণামৃত খেয়ে ভাল হয়ে যায় । আর  আজ আপনি বলছেন কাজ টা ঠিক হয় নি? আশ্চর্য !  তার কাছে গ্রামের উন্নয়নের মানে  হচ্ছে বাবার থানের সংস্কার । এই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে যে দেশের সাধারণ মানুষের বড় অংশ গনতন্ত্র বিকেন্দ্রীকরণের মানেই বোঝে না ,স্বাধিকার কি , সিদ্ধান্ত কি ভাবে নিতে হয়, ক্ষমতায়ন কাকে বলে , সে টা খায় না মাথায় দেয় ,তাদের সচেতন ও আলোকিত করা  একটা  তুমুল কঠিন কাজ  
যতদূর জানি অডিটকে কেউ পছন্দ করে না । আমরা ঠান্ডা ঘরে  সুদৃশ্য কাপে কফি আর কাজুবাদাম  খেতে খেতে টেবিলের ওপাশে বসা  সুটটাই পরা কর্পোরেট কর্তাদের খুব মেপে মেপে  মিহি ইংরেজিতে বলি আমাদের নেগেটিভ ভাবে নেবেন না । আমরা তো aid to management আপনাদের কাজে সাহায্য  করি মাত্র , ভুল ত্রুটি নজরে এনে ।
এই মেঠো অডিটের কাজে নেমে প্রকৃত অর্থেই  aid to management হতে হয়েছিল আমাদের । এই প্রথম অডিটের পাশাপাশি আমাদের দিতে হয়ে হয়েছিল হ্যান্ড হোল্ডিং সাপোর্ট। হাত ধরে তুমি নিয়ে চল সখা, আমি যে পথ চিনিনা । কি ভাবে ক্যাশ বই লিখতে হয়,  কি ভাবে ক্যাশ মেলাতে হয় ,  ব্যাঙ্ক আকাউন্ট রাখতে হয় , ভাবে বিভিন্ন স্কিমের টাকার হিশেব রাখতে হয় ,প্রায় হাত ধরে শিখিয়ে দিতে হত । তখন পঞ্চায়েত দপ্তরের সঙ্গে অডিট হাতে হাত মিলিয়ে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করেছিল বছর কয়েক কাজের সূত্রেই আলাপ হয়েছিল প্রধানসচিব ডক্টর মানবেন্দ্রনাথ রায় ,  যুগ্ম সচিব দিলীপ ঘোষ , এনাদের অনুজ দিলীপ পাল প্রমুখদের সঙ্গে । পঞ্চায়েত দপ্তরে তখন  ছিল ভাল ভাল অফিসারদের চাঁদের হাট । খুব ভাল কাজ করতেন তাঁরা ।  আমরা সময়োপযোগী সাহায্য করতাম সবসময় । পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল খুব সুন্দর ও সহায়তাপূর্ণ । বস্তুত প্রথম তিন চারটে বছর আমরা একরকম পার্টনারশিপে কাজ করেছি বলা যেতে পারে ।অডিটের গতানুগতিক খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে এই কাজ করে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম ।  কাজকে ভালবাসা আর জ্ঞানের পরিধি,  ওনাদের এই দুটো বিষয়ই ছিল মনে রাখার মতোশ্রদ্ধা করার মতো




এদিকে আমাদের অফিসের ব্যাপারটাও একটু অন্যরকম হয়ে পড়ল । বেনো জোল থিতিয়ে গেলে  উর্বর পলির স্তর ফেলে যায়ঠিক তেমনি আমাদের এখানেও নানা রকম ঘূর্ণি স্রোতের মধ্যে  মধ্যে দিব্যি একটা সুন্দর দল তৈরি হয়ে গেল ।
যাদের নিয়ে তৈরি হল তারা সবাই বাইরের অফিস থেকে এসেছিলেন । এমনকি অন্য রাজ্য থেকে । এই প্রথম শুকনো নীরস কাজের মধ্যে সৃজনশীলতার একটা চোরা স্রোত বইতে শুরু করল । আমাদের কাজকে নিয়ে যেতে হবে একেবারে সাধারণ মানুষের মধ্যে । গতানুগতিক পথে হাঁটলে হবে না । আউট অফ দা বক্স –বাস্কো থেকে বেড়িয়ে নতুন ভাবনা চিন্তার পালা,ফাইলের পাহাড় থেকে লাইফ কে তুলে আনা ।  কাজের মধ্যে নানা  অভিনবত্ব আনবার ,মনোগ্রাহী করে তোলার একটা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল  খুব সঙ্গত কারণেই সেই সময় দিলীপ চৌধুরী ( তখন এতজন দিলীপ ছিলেন!) ত্রিপুরা থেকে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন । পন্ডিত মানুষ । উপরন্তু যে কোন ছাপাখানা সংক্রান্ত কাজে দারুণ উৎসাহী, অভিভাবক সুলভ এবং  দক্ষনানান রকম পরিকল্পনা তাঁর কাছ থেকেও আসতে শুরু করল ।এই ধুনোর ধোঁয়ায় বাতাস দিতে লাগলেন শুভ জোয়ারদার । ইন্দিরা আবাস যোজনা নিয়ে তার একটা সুন্দর কাজ ছিল । কিভাবে টাকা তছনছ হয়, কিভাবে মাথার ছাদ বিকিয়ে যায় তার একটা সচিত্র প্রতিবেদন । এই দলে  আরও অনেকেই ছিলেন । সবচেয়ে বেশি উৎসাহ আর প্রশ্রয় এল তখনকার অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল জাফা সাহেবের কাছ থেকে ।তার মারফৎ কতগুলো নতুন ভাবনার আমদানি হল । সেই প্রথম আমরা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নাম শুনলাম । আই আই টির এঞ্জিনিয়ার ইন্ডিয়ান রেভেনিউ সারভিস ছেড়ে দিয়ে রাইট টু ইনফরমেশনের আন্দোলনে মেতেছেন । রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামে সফল হয়েছে তার “জন শুনবাই “, সাধারণ মানুষের অধিকার সচেতনতার লড়াই ।  তার নাম সোশাল অডিট । অডিটর কোন বাইরের লোক নয় ,গ্রামেরই জনতাএকেবারে ভেতর থেকে আসুক পরিবর্তন ।তারাই তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে নিচ্ছে । না হলে প্রশ্ন করছে , কাগজ প্রমান দেখতে চাইছে, না পেলে ঝামেলা করছেদিল্লি শহরের মিউনিসিপালিটি নিয়ে কেজরিওয়ালের আরেকটা কাজ ছিল, “হমারা পয়সা, হমারা হিসাব”  সাধারণ মানুষ ট্যাক্স দেয় অথচ নাগরিক সেবা পায় না । হিশেব বুঝে নেবে জনতা নিজেই । এই সব সিডি গুলো আমরা কাজে লাগাতে শুরু করলাম । অডিও ভিসুয়াল অনেক বেশি কাজ দেয় ।
তাহলে আমরাও তো একটা এমন কিছু করতে পারি । সেই চিন্তা থেকেই এসেছিল “পঞ্চায়েতের চাবি” নামে পঞ্চায়েত দপ্তর আর অডিটের কাজ নিয়ে পুতুলনাচের সিডি । শুভ জোয়ারদারের বঙ্গপুতুল তার নামভূমিকায়  । অডিট আর পঞ্চায়েত ডিপার্টমেন্টের যৌথ প্রয়াস । খুব সফল হয়েছিল এই উদ্যোগ । গ্রামের পর গ্রামে এই সিডি দেখান হত । সাধারণ মানুষের অধিকার, মেয়েদের অধিকার, ধর্ম নিরপেক্ষতা , স্বচ্ছ হিশেব নিকেশ সব নিয়ে ঠাস বুনুন এক জমজমাট নাটক । কেন্দ্রীয় চরিত্র এক মহিলা গ্রামপ্রধান ।




 কিন্তু হলে হবে কি ।  ভাল কাজের বাগড়া না হলে সেটা আবার ভাল কাজ হল কেমন করে? ভাল কাজে বাগড়া ফাউ । সবাই আবার আনন্দের ভাগ নিতে জানে না । ওই ক’টা লোকের ভেতরেই আবার  কিছু কাঁটা আর হুল লুকিয়ে ছিল । চেনা পথে না হাঁটলেই বিপদ ।  তাদেরই কোন এক পরিচিত  সাংবাদিক চিবিয়ে চিবিয়ে রসিকতা মাখিয়ে মাখিয়ে ফোন করলেন “আচ্ছা , এটা কি পারফর্মিং আর্টের স্কুল?”।মানে বলতে চাইছিলেন, এটা কি নাইট্যশালা? তার নাম মাঝে মধ্যে একটি বাংলা দৈনিকে দেখা যায় । এখানেই শেষ নয় ,একটি নাতি দীর্ঘ রিপোর্টও লিখলেন তিনি,নানান অনিয়মের অভিযোগ এনে ওই পুতুল নাচ নিয়ে,কিচ্ছু না জেনে , না বুঝে অডিট ও পঞ্চায়েত একসঙ্গে   মুখের ওপর উপযুক্ত জবাব দিল । সেটা ছাপাও হল । খুব তাড়াতাড়ি ।

আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছিলাম, ওই মোটা গাবদা অডিট রিপোর্টের সারাংশটুকু নিয়ে একটা ছোট হাতবই বা বুকলেট বের করব, বাংলায় । সেটা প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে যাতে পৌঁছয় তার ব্যাবস্থা করা । খুব ছিমছাম  সহজ বাংলায় যাকে বলে রিডার ফ্রেন্ডলি ভাবে অলঙ্করণ সমেত একটি পুস্তিকা আমরা বের করেছিলাম যাতে তাদের কাজের  অনিয়ম অসঙ্গতিগুলো স্থানীয় লোকজনদের নজরে আনা যায় এবং তারা সে গুলো শুধরে নিতে পারে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং অধিকার সচেতনতা প্রয়াসে এরকম অনেক নতুন কাজ আমরা হাতে নিয়েছিলাম। 



লোকাল অডিট ডিপার্টমেন্টের ১২৫ বছর (১৮৮০-২০০৫) পূর্তিতে একটা স্মারক সংখ্যা আমরা বের করি সেখানে  এই দপ্তরের ইতিহাস ও  বর্তমান ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছু মূল্যবান লেখা আছে ।  ভাল লিখেছিলেন দিলীপ চৌধুরী , শুভ জোয়ারদার,গৌতম দাশগুপ্ত প্রমুখরা ।




সাধারণ মানুষের মধ্যে এন জি ও রা অনেকদিন ধরেই কাজ করে আসছে । এন জিও দের কাজ অনেক সময় অডিটের কাজের পরিপূরক হত । জাতীয় স্তরে অনেক অগ্রণী এন জি ও র সঙ্গে তখন সেমিনার বা প্যানেল ডিসকাশন করতাম আমরা সামাজিক স্তরে কাজ করতে হলে অডিট কে শুধু কাগজের মধ্যে আটকে রাখলে চলবে না । কারণ কাগজ সব সময় সত্যি বলেনা । গরিব  মানুষ গুলোর মধ্যে নেমে কাজ করতে হবে । তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে । সেই পথেও আমরা এগিয়ে ছিলামবাধাও ছিল প্রচুর । গ্রামে নানা রকম কায়েমি স্বার্থ কাজ করত । ব্যাপারটা তারা ভাল চোখে দেখত না । ভেতর থেকেও বাধা আসত । আসলে অডিটর তো সমাজ থেকে বাইরের কেউ নয় , কাজেই এ ধরণের কাজে যে সদিচ্ছা ,দৃষ্টিভঙ্গি ,পরিশ্রম  দরকার ছিল তা হয়ত অনুপাতে কম ছিল  আমাদের ।
অডিটে অর্থনীতির অগ্রণী ক্ষেত্রগুলো  বরাবরই হিশেব পরীক্ষার কাজে সবচেয়ে বেশি গুরত্ব পেয়ে এসেছে । সার্বিক ভাবে  সেটাই বাঞ্ছনীয় । ওই সব মানুষ গুলো তো আর পেট্রল , গ্যাস , কয়লা নয়, সাঁজোয়া ট্যাংক নয় ,বোমারু বিমান , কামান , এরোপ্লেন নয় , রেলগাড়ি নয় , রাজস্ব আমদানি নয় নিতান্ত হেলাফেলার কতগুলো আকাঠ অর্বাচীন চাষাভুষো ,তারা দুমুঠো খেতে পেল কিনা , মাথার ওপর ছাদ পেল কিনা , ১০০ দিনের কাজ পাচ্ছে কি না এসব দেখার সময় আমাদের হাতে কম ।
শেষ পর্যন্ত বাক্স থেকে বেরিয়ে আসা যায় নাতবুও তারমধ্যে ওই  কিছুটা অন্যরকম তিন বছরে সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখ , ফুল্লরার বারোমাস্যার সঙ্গে নিজেকে জুড়তে পেরে  ভাল লেগেছিল । যতই যাই বলি না কেন আমরা , মানুষ কে মানুষের কাছেই ফিরে আসতে হয় ।  তবে জানি না, লারপেন্ট সাহেবের দপ্তর তার সামাজিক দায়বদ্ধতা ধরে রাখতে পেরেছে কি না ।





কবি  সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ,মঞ্জুষ দাশগুপ্ত ও বাসুদেব দেবের কবিতার লাইন ব্যাবহার করা হয়েছে
অলঙ্করণ   শুভ জোয়ারদার

ছবির উৎস গুগল