Thursday 5 January 2017

দিল্লি দাস্তান ৮


Jamali Kamali calling
জামালি কামালি ডাকলে তো না গিয়ে উপায় নেই । তারা তো আর মোবাইল বাজাবে না,  দু ছত্তর লিখবে না বা কাউকে পাঠিয়ে তলব করবে না । তারা হল গিয়ে সাধু সন্ত । নানা রকম হিশেব বহির্ভূত তরঙ্গ , কম্পন হৃদয় মস্তিষ্ক নিউরোন ইত্যাদির ভেতর দিয়ে নানান বোতাম টিপে কলকাঠি নাড়ে । তার ওপর সন্ধে নামলেই পুরো ব্যাপারটা আবার জিনদের দখলে চলে যায় । আগেরবার  আরকিওলজিক্যাল দপ্তরের পাহারাদারদের অনেক ভুজুং ভাজুং দিয়েও জামালি এবং কামালির সমাধিঘরের দরজা খোলাতে পারিনি । তাই এবার আটঘাট বেঁধেই মাঠে  নেমেছি শুনেছিলাম ছোট চারকোনা সমাধিঘরের দরজা খুলে গেলেই সেটা নাকি বেগম সাহেবার গয়নার বাক্স হয়ে যায় । কেমন করে ? ম্যাজিক!
গিয়ে দেখলাম সেই জাদুঘরের দরজা আগে থেকেই আধখোলা , আশ্বিনের রোদে  ভেসে যাচ্ছে মস্ত খোলা প্রাঙ্গন । আমরা ঢুকলাম । জাফরি জানালা দিয়ে চৌখুপি কেটে আলো ঢুকছে ঘরে । মসৃণ পালিশ করে দুটো সাদা পাথরের সমাধি । আর ছাদে , খিলানে , দেওয়ালে চোখ জুড়নো নকশা , নীল লাল আর সাদা । যারা একেবারে গম্বুজের মাথায় উঠে নিজেদের নাম খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে লেখে , আবার শতাব্দীর পর শতাব্দী কোনমতে জেগে থাকা বুড়ো শরীর টাকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে হৃদয় পদ্ম খোদাই করে ,সেইসব কুলতিলকদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এই অতুলনীয় রূপময় শিল্পরস একটু অধরা মাধুরী গোছের করে রাখা হয়েছে ।
একজন কর্মী আমাদের জানালেন দিনের মধ্যে একবার তিনি এখানে আসবেনই কারণ অদ্ভুত শান্তি এখানে । এখানে এলে মন ভালো হয়ে যায়, শরীরটা অনেকটা ভালো মনে হয় , একটা ফিল গুড ফ্যাক্টার কাজ করে । হয়তো তাই । জামালি খুব বড় সুফি সাধক এবং কবি ছিলেন । সেই ইব্রাহিম লোদির আমল থেকেই তার কাহিনি শুরু । সিকান্দার লোদি, নিজের  শের শায়েরি , জামালিকে দিয়ে কারেকশন করিয়ে নিতেন । বাবর এবং হুমায়ুনও খুব সম্মানের সঙ্গে জামালির কথা বলে গেছেন । তিনি খুব প্রভাবশালী কবি ছিলেন এবং নানান কাজে তাঁকে নানান দেশে  প্রচুর ঘোরাঘুরি করতে হত । কিন্তু কামালি কে ? অনেকে বলে কামালি তার অভিন্ন হৃদয় এক বন্ধু । অথবা স্ত্রী । অথবা  ভাই অথবা কেউ নয় । কামালি স্রেফ একটা শব্দ ঝঙ্কার , কামাল কথাটার মধ্যে একটা চমৎকারিত্ব লুকিয়ে আছে । আবার হয়তো তাঁর প্রেমিক । সুরা আর সাকির , সাকি তো একজন কোমল বালক । রুমি হাফিজের অনেক কবিতায় সেই পুরুষ সৌন্দর্যের গুণকীর্তন। ফার্সি শায়েরির মাসুক , মেহবুব , হাবিব,  মানে প্রিয় বোঝায় যা যা শব্দ দিয়ে সে সবই পুরুষ বাচক । জামালির একখানা কবিতা নিয়ে সেই ঝিম ধরা সকালবেলায় গাছের তলায় বসলাম  কি সব কবিতা ! কি সব ভাষা ! কি বলব একে? ষোড়শ শতকের চূড়ান্ত আধুনিক কবি? কবিতায় উঠে আসা এক অদ্ভুত রহস্যময় সম্পর্ক নেশার মতো বুঁদ করে রাখল সেদিন।

















ধুলোমাখা

মাইট পোকা খালি চোখে দেখা যায় না । এরা আণুবীক্ষণিক । সারা গায়ে রোঁয়া রোঁয়া , পাঁচ ছটা শুঁড়,বিকট দর্শন । জামাকাপড়ের ভাঁজে , পুরনো বইপত্রের খাঁজে বিছানা বালিশে চাদরে ঘরের ধুলোর মধ্যে মাইট পোকারা লুটোপুটি খায় আর গান গায়,  আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি নাচিবি ঘিরিঘিরি গাহিবি গান  ।  হাতের কাছে মাইক্রোস্কোপ থাকলে হয়তো  ওদের নাচন কোঁদন দেখতে
পেতাম    এদের ছোঁয়াচ লাগলেই প্রথমেই  একটা বড় হ্যাঁচ্চো ।  মাইটদের সঙ্গে আমার একসময়ে বিরাট ফাইট হত । আমি পরাস্ত হতাম অচিরেই । ভয়ানক ভাবে । অবস্থা হত একেবারে দি হাব্বারফ্লুয়াস
ইন্‌ফ্যাচুফুয়েশন অব আকবর ডর্বেণ্ডিক্যালি ল্যাসেরটাইজট্‌ দি গর্ব্যাণ্ডিজম্‌ অফ হুমায়ুনের মতো আমার মা তার দুবলা মেয়েকে বাঁচাবার জন্য সারাদিন অদৃশ্য মাইটদের সঙ্গে লড়াই করতেন । তখন ইন্টারনেটের সুবিধে ছিল না আর মা কোনদিনই টেক স্যাভি ছিল না । মেডিক্যাল জার্নাল ঘেঁটে ঘেঁটে মা মাইটদের সম্মন্ধে বিস্তর জ্ঞান লাভ করেছিল ।  আম্মো ধীরে ধীরে মাতঙ্গিনী হাজরার মত লড়াই করে ওদের হারিয়ে দিয়েছি অনেকগুলো বছর । ইদানীং দেখছি ওরা একটু আধটু প্রতিশোধ তুলছে , সফলও হচ্ছে । এখন তো  মা নেই । থাকলেও কোন অতলে তলিয়ে যাওয়া মন আর অশক্ত শরীর দিয়ে মাইটদের রাইট কেড়ে নিতে পারতো না । তবে মন্দের যেমন ভালো থাকে, অন্ধকারের যেমন আলো , তেমনি মাইটরাও কিছু ব্রাইট জিনিশ রেখে যায় । পুরনো বইপত্রের ভেতর থেকে প্রায় হলুদ এই পাতা টা মাইক্রোস্কোপে দেখলে দেখা যেত মাইটদের গোলটেবিল বৈঠক চলছে । আর হাঁচতে হাঁচতে আমি দেখছিলাম সারি সারি খুদি খুদি লেখা । বাবার একটা কবিতার লাইন ছিল- এখখুনি বৃষ্টি হয়ে গেল/কবিতায় থাকে ভিজে ঘাস ।
সেই রকমই ওই খুদি খুদি অক্ষরে বাঁধা পড়ে আছে পুরো একটা সময় , তার উষ্ণতা , শৈত্য , গলার কাছে চিনচিন , বুকের মধ্যে তোলপাড় , পাথরের গায়ে ভিজে ফার্ন , স্লেটের ছাদে বৃষ্টি , আলোর ডোমে বসে থাকা মথ , বাড়ির টানকবিতাটা দিলাম ।  তবে  শশধর বাবুর নজরে পড়লে  হয় ।

 ওখানে রয়েছে বাড়ি,মা রয়েছে,রয়ে গেছে প্রেমের মানুষ
আর তার পিছনেই সূর্য ওঠে প্রতিদিন ভোরে
ওখানে পাথরগুলো বৃষ্টিপাতে নড়েচড়ে উঠে
হয়ে ওঠে এখনও সবুজ

ওখানে কখন যাবি,ভালো করে ভেবে নিয়ে বল
নিয়ে যেতে হবে কিন্তু ভিতরের যত লীনতাপ
ছেড়ে যেতে হবে সব সম্পন্ন কলার ছেঁড়া কোট
খুলে ঝেড়ে নিস কিন্তু যত পয়সা উল্টে পকেট
কেন রে পয়সা দিয়ে কি হবে রে ওখানে তো দিগন্ত বাগান
মা ভেজে রেখেছে মুড়ি, দেওয়ালে নুনের কারুকাজ
না হয় ভুলেই যেতি ওটা তোরই কান্নার দেওয়াল

আমি খাবো দু-পয়সার তিনখানা ঠান্ডাজলকাঠি
আমিও তাহলে যাব বড় মাঠে বাদাম কুড়োতে
ওখানে রয়েছে বাড়ি, ভাই আছে, বাদামের গাছে
লটকে আছে ঘুড়ি আর চাঁদ

একটাও পকেটমার নেই ।।

কবিতা ঃ যশো ধরা রায়চৌধুরী


সত্যি কথা

মাধবন নায়ার মাথাটাকে একবার ডানদিকে একবার বাঁ দিকে করছে । সামনে গাদা গাদা কাগজ , ফাইল , রিপোর্ট । এতো অস্থিরতা কেন হে ? আমি জিজ্ঞেস করলাম । 
না, মানে ঘরটার এদিক থেকে ওদিকে কে যেন চলে গেলো । 
তা কি করে বুঝলেন ?
না, মানে ওই আপনার মাথার পেছনে কাঁচের জানালাটায় রিফ্লেকশনে মনে হল কে যেন একটা চলে গেলো ।
এই কে যেন কে মাধবন নায়ার একাধিকবার আমার আপিসঘরে দেখেছে । মাধবন নিতান্তই ভালো মানুষ । কোনরকম বদ রসিকতা করা ওর পক্ষে অসম্ভব ।
ম্যাডাম “?
কি” ?
বেল দিলেন যে ? চা আনব ?” পিওন সাহেব জিজ্ঞেস করে ।
 
কই ? বেল বাজাই নি তো ? “
শুনলাম যে
 
এই ঘটনা যে কতবার ওই একই অফিসে পুনরাবৃত্ত হয়েছে আমার নিজেরও মনে নেই ।
 
আমার ছোট পিসি ছিল মেয়েদের ইশকুলের বড়দিদিমনি । সেই সুবাদে প্রচুর ছাত্রীর সঙ্গে ভাব ভালোবাসা হয়ে যেত । সেই রকম এক ছাত্রীর ফরেস্ট অফিসারের সঙ্গে বিয়ে হয়ে কোন ঘন জঙ্গলে সংসার পাততে গেলো । মেয়েটি ,খাট আরও সব ফার্নিচার পাততে গিয়ে দেখল ঘরটা সামান্য ঢালু । যাই হোক পিজবোর্ড এই সব দিয়ে টিয়ে নিচের পায়াগুলো ম্যানেজ করে ফেলল । সারাদিন প্রায় একাই থাকে । ঘুটঘুটে জঙ্গলে চারদিকে বড় বড় গাছে ঘেরা তাদের বাড়ি । টিটির টিটির পাখি ডাকছে , আর কানে তালা ধরে যাবার মতো নিস্তব্ধ চারদিক । কাজ কম্ম বিশেষ নেই , মেয়েটি বেতের সোফায় এলিয়ে বসে আছে আর চূড়ান্ত ব্যাজার হয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে , এমন সময় দ্যাখে কি একটা বোতল যেদিকে ঘরের ঢাল আছে তার তার উল্টো দিকে মানে নিচু থেকে উঁচুর দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে । অর্থাৎ অদৃশ্য কেউ এই কাজ টা করছে , তা না হলে এটা কোনভাবেই সম্ভব হতে পারে না। স্বামীর কাছে যথারীতি কি যে সারাদিন আজগুবি সব ভাবো “, এইসব পিত্তিজ্বলা বাণী শুনে চুপ করে রইলো । একদিন তার অসহ্য দাঁতের ব্যথা , যথারীতি বর টি বাড়ি নেই । মেয়েটি যন্ত্রণায় ঝিমিয়ে পড়েছে মাথা নিচু করে । এমন সময় তার মাথার চুল শক্ত মুঠি করে ধরে কে যেন তাকে তুলে ধরছে । মেয়েটি ভাবল তার বর বোধহয় রসিকতা করে এই কাণ্ড করছে । সে ভয়ানক ঝামটা দিয়ে ,দেখছ না ব্যাথায় মরে যাচ্ছি , আর উনি এলেন ইয়ার্কি মারতে ,কিন্তু কথাটা শেষ করতে পারল না । দেখল ঘরে কেউ নেই , অদৃশ্য দুটো হাত তার চুল ধরে তাকে তুলে ধরছে । মেয়েটি এইটা বুঝেই ঘামতে ঘামতে দে ছুট ।
জঙ্গলে ভুতের গপ্পো বাবার কাছেও অনেক শুনেছি । 
পঞ্চায়েত জিলাপরিষদ অডিটে একবার নদীয়া গেছি । সার্কিট হাউসে রাত্রিবাস । ঘরটা গোড়া থেকেই ভালো লাগছিল না । একটু কেমন যেন , এগুলো আবার ঠিক ভাষায় বুঝিয়ে লেখা বা বলা যায় না । আমার মনে হল ঘরে যেন অনেক লোক আছে । রাতের খাওয়া হয়ে যাবার পর বুঝলাম ত্রি সীমানায় কেউ থাকছে না । আমি টিভি টা চালিয়ে রাখলাম । কিছুতেই ঘুম আসে না । আবার মনে হচ্ছে ঘরে অনেক লোক । হঠাত পিঠের ওপর কে যেন আঙুল চালাল , কি অসভ্য রে বাবা ! এ দিকে কাউকে দেখাও যাচ্ছে না যে দুটো গাল দেবো ।
 
সল্ট লেকের বাড়িতে দু একবার মাত্র মনে হয়েছিল ,ঠিক যখন প্রদীপ জ্বালানো হল , ধূপ জ্বলে উঠলো , ঘণ্টা বাজছে , মনে হল পেছনে দু তিনজন দাঁড়িয়ে ।
তবে সোমা গুহর ঘরে অনেক দিন ধরেই কেউ নিশ্চিত বসত করে । 
সে চলতে ফিরতে বেশ বুঝতে পারে । রান্না করার সময় ঘাড়ের কাছে প্রায় নিঃশ্বাস ফেলে । গা শিরশির করে । পুজো করার সময় সোমা গুহ টের পায় সে বেশ খাটের ওপর গুছিয়ে বসেছে । পুজো শেষ হলে আবার এসেছিলে তবু আসো নাই এর মতো করে চলে যায় । বোধহয় কোন শাশুড়ি ভূত হবে । সোমা গুহর সাফ কথা , থাকছ থাকো , কোন ঝামেলা পাকাবে না বলে দিচ্ছি ।
 
তবে সত্যি কথা বলতে কি , আমার মেসোমশাই , মানে সোমা গুহর বাবা খুব জবরদস্ত ভাবেই আছেন , যেভাবে তিনি আগে ছিলেন , জীবনকে , মানুষকে , সকলকে ভালোবেসে ।সদাতৃপ্ত , কোনদিন কারুর নিন্দা করেন নি । তবে হ্যাঁ , খুব মিতব্যয়ী ছিলেন । ব্যাপারটা হল , সোমা গুহদের একই ফ্লোরে দুটো পাশাপাশি ফ্ল্যাট ।
 
একটাতে মেসো থাকতেন । তিনি চলে যাবার পর , মাঝে মাঝেই বারান্দার রকিং চেয়ারে সবুজ লুঙ্গি পরে সন্ধে বেলা বসে থাকেন , অস্ফুট স্বরে প্রিয়জনদের ডাকেন । ওনার হালকা কাশির শব্দও ভেসে আসে । আর আলো পাখা নেভাতে ভুলে গেলে তিনি নিজেই বন্ধ করে দেন । আগে ওরা বুঝতে পারতো না , ভাবত ফিউজ হয়ে গেছে , বাল্ব কেটে গেছে । কিন্তু না , তা নয় । মিতব্যয়ী ছিলেন তো তাই এইসব বে আক্কেলে কাজ কারবার তাকেই এখনো দেখতে হয় ।
আমার বন্ধু মনীষা , তার মাকে ওইরকম পাট পাট করে শাড়ি পরা কোমরে তিনকোনা করে রুমাল গুঁজে সোফায় বসে থাকতে দেখে । আমি বলি ,কি রকম 
শা ড়ি রে ? ওই যেটা পরে চলে গেলো , সেটাই ।
 
মনীষা ওর বাবার পায়ের কাছে ঘূর্ণির মতো কী একটা ঘুরপাক খাচ্ছে দেখতে পায় । তখনো মায়ের বিদায় শেষ হয় নি । তিনি ফুলসাজ নিয়ে শুয়ে আছেন । বেশ কিছু ক্ষণ সেই ঘূর্ণি মনীষা লক্ষ করে , তখন প্রায় সন্ধে নামছে , উঠোনে বেরিয়ে মনীষা দেখে উঠোনের মধ্যে একটা গাছ , তার মাথার কাছাকাছি বুক পর্যন্ত ভেসে উঠেছে তার দাদু দিদিমা । তারা বলছেন মনীষার মায়ের নাম ধরে , প্রীতি , সুবোধকে এবার ছেড়ে দাও । ঘরে ফিরে মনীষা আর সেই ঘূর্ণি টা দেখতে পায় নি । তবে মায়ের অস্তিত্ব টের পেয়েছে বহু বহু বার ।
 
বাবা বলতেন , পুজোয় বসার আগে আসন কিছুক্ষণ পেতে রেখো । কোন পুণ্যাত্মা নাকি এসে বসতে পারেন । আলো আর সুগন্ধ ছড়িয়ে কেউ বা রেখে যায় তাদের স্পর্শ । ছোট্ট মৌটুসি পাখি অজান্তে কখন খাটে এসে বসে । সে উড়ে গেলে বাবার পাণ্ডুলিপির ভেতর থেকে মৌটুসির কবিতা হাতে উঠে আসে ।
ফেবু বন্ধু সুজাতা রায় Sujata Roy তো হুমায়ুনের সমাধিতে ভর দুক্কুরবেলা বিজলি হানা সুর্মা পরা দুখানি ইরানি চোখ দেখে প্রায় মুচ্ছো যাচ্ছিলেন , সে আবার অদৃশ্য হবার আগে একটু মুচকি হেসেও ছিল ।
তবে আমি আরও একটু দুঃসাহসী হয়ে জিন দেখতে চাই । মাঝরাতে মল্ল কৌষিক রাগ গাওয়া হবে , কড়া তামাকের ভুরভুরে গন্ধ যেই না উঠবে তখন আমি আর দিলীপ ঘোষ দাDilip Ghoshকি করব সেই টাই দেখার জন্য আমি কতদিন অপেক্ষা রয়েছি । তাই আপাতত ঠিক সুর লাগাবার নিদারুন চেষ্টা করে যাচ্ছি
সা গ ম ধ নি সা / সা নি ধ ম গ , ম গ সা । 
গ ধ নি কোমল করে মোলাম করে লাগাতে হবে ।
Top of Form

জীবনরেখারা

ঙ্গ সারি গুলাবি চুনারিয়া রে,মোহে মারে নজরিয়া সাঁবরিয়ারে

অমলতাস আর ছাতিমের তলা দিয়ে যখন তার দীঘল মেদহীন টান টান শরীর , চাপা গাল আর টিকলো নাক , গর্বিত চিবুক ,পাকা গমের মতো গায়ের রঙে সকালের রোদ পিছলে পিছলে যায় তখন আমিও বার কতক মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেছি । এ তো পড়ালেখা জানেনা , বিউটি পার্লারের দোরগোড়াতেও কোনদিন যায় নি । কিন্তু কি দৃপ্ত তার ভঙ্গি । একেবারে স্বাভাবিক । যে কোন নজরিয়াকে টুসকি মেরে উড়িয়ে দিতে পারার ক্ষমতা রাখে , দেখে তাই মনে হয় । 
মাথায় কাপড়ের মস্ত গাঁঠরি , তাতে শুধু গোলাপি নয় আছে কতো বান্ডিল বান্ডিল নানা রঙের জামাকাপড় । সে হল আমাদের বিমলা আন্টি । আমি আন্টি বলি, বলতে ভালো লাগে । বিমলা আন্টি আমাদের পাড়ার ধোপানি । ওর একটা খিটকেল বর আছে , রামস্বরূপ । কোন জামাকাপড় তাড়াতাড়ি ইস্ত্রি করতে হলে রামস্বরূপকে ফোন করতে হয় । সে বলে এখখুনি নিয়ে আসছি । আমি বলি বিমলা আন্টি আসবে? তাকেই পাঠাও না কেন? তোমার ওই হাঁড়িচাঁচার মতো মুখটা কি না দেখলেই নয়?
 
বিমলা আন্টি এসেই তার গুছিয়ে পরা কোটা শাড়ির ঘোমটা একটু টেনে গলা তুলে বলে, কাপড়া । তারপর গাঁঠরি খুলে বলে, গিনলো। আবার নতুন কাপড় দেওয়া শুরু হয়। এবার টাকা দেবার পালা । আমি ফস করে বলে বসি, তুমি কি সুন্দর দেখতে, বিমলা আন্টি ।
 
 মাথা নিচু করে টাকা গুনছে বিমলা আন্টি । আমার এই কথায় তার নিচু চোখের পাতা, বসা গাল ,টিকলো নাক, গর্বিত চিবুক ,কোথাও এতটুকু পরিবর্তন দেখতে পাই না । চোখ দুটো তুলে বলে , সত্তর রুপিয়া , ইয়ে লো তিস রুপিয়া ওয়াপস । 
 বিমলা আন্টিকে ঠিক এখানে মানায় না । আমি দেখতে থাকি, হুহু করে বালি মেশানো গনগনে হাওয়ার মধ্যে হুড খোলা জিপে বিমলা আন্টি দাঁড়িয়ে আছে , কপালে কমলা রঙের সিঁদুর , গুছিয়ে পরা সাঙ্গানেরি শাড়ি, কোমরে তিনকোনা রুমাল , হাতের কব্জিতে লাল হলুদ সুতো । ধুলো মাখা একপাল গ্রামের লোক চিল্লিয়ে যাচ্ছে বিমলা দেবীকি জয় । অগলে চুনাব মে….

ইডলি দোসা সম্বরম, রান্নাতে আমি উত্তমম

পুনম আন্টির অবস্থা কিন্তু বরাবর এমন ছিল না । পালিকা ভবনের গমগমে বাজারে তার নিজের খাবার দোকান ছিল । কর্তা গিন্নি দুজনে মিলে সেটা চালাতো । বড় বড় স্টিলের বাসনে উপচে পড়তো ধোঁয়া ওঠা ইডলি , দোসা, উত্তপম, তিন রকম চাটনি আর সম্বর ডাল । দুটো কাজের লোকও ছিল । কিন্তু এত ধকল আর শরীর নিল না । তাই একরম বাধ্য হয়ে মাধবীলতার ঝাড় আর ঘন বুড়ো ছাতিম তলায় পার্কের রেলিং ঘেঁসে সকালে সব্জি বিক্রি করে । সবার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলে।আর ওর বরটা একটা শালগ্রাম শিলার মতো গোমরা মুখে একজায়গায় বসে হিসেব লেখে । পুনম আন্টির চোখে লেপ্টে থাকে কাজল, মাথায় বাসি ফুলের মালা । দেখলেই একগাল হাসি দিয়ে বলে ,নমস্তে । মাশরুম আছে, খুব তাজা, আরো দেখো, একদম ফ্রেশ । সে আমি জানি । ভোর চারটেয় উঠে মান্ডি যায় পুনম আন্টি । দেখে রাখা বাজার পুনমের ছেলের বউ এর হাত দিয়ে আমার বাড়ি চলে যাবে । তবে তার ছেলের বউ লছমি মাথা কুটে কুটে আমাকে একশ বার বলেছে , সে তার শাশুড়িমায়ের নখের যুগ্যি নয় । সে আর বলতে । আমি ছাড়া আর কে তা ভালো জানে? ওদের বাড়িতে খুব পুজো আচ্চা হয় । আর আমার বাড়িতে তার প্রসাদ আসে । সে কতরকমের খাবার, নোনতা , মিস্টি , পিঠে,মুরুক্কু ,চানা বড়া মেদু বড়া ।
একেবারে দোকানের মতো । সব পুনম আন্টির বানানো । লছমি তো অষ্টরম্ভা ।
সকালে সময়মত আসে না , বেলা গড়িয়ে যায়, আপিসে যাবার সময় এগিয়ে আসে , আমার খিদে পায়, মেজাজ সপ্তমে চড়তে থাকে । শেষে ভাবি, দুত্তোর বেরিয়েই পড়ি। কাঁহাতক চলে এসব, সক্কাল বেলায়? আচ্ছা শিক্ষা দেবো আজকে । হঠাত দড়াম করে লছমি এসে হাজির হয়। আমি মুখ খোলার আগেই বলে ওঠে, আজ খুব খুব দেরি হয়ে গেছে । এইজন্যই তো ব্রেকফাস্ট বাড়ি থেকে নিয়েই চলে এলাম। গরম গরম খেয়ে নিন । মাম্মি নে বানায়া । আমি তখন জুল জুল করে পুনম আন্টির হাতে বানানো ধোঁয়া ওঠা ধপধপে নরম ইডলি , আধখানা ভাঁজ করা নরম মুচমুচে দোসা আর তিন রকম চাটনি দেখে ভাবি , একদিন না হয় অফিস যেতে একটু দেরিই হল । তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?

 
সায়েন্স, পোলিটিকাল কা

গীতা কে কেন যে আমি প্রথম থেকেই গীতাজি বলে ডাকতে শুরু করলাম তার কারণ আমি বেশ ভালো করে অনুসন্ধান করে দেখেছি । সে আমার ঘর লাগোয়া দশ ফুটিয়াতে থাকে আর আমার বাড়ির কাজ করে । গীতাজির সময়ের দাম আছে । সে সময় হাতে ঘড়ি পরে থাকে । ঝড়ের গতিতে বাড়ির কাজ করে আর একটা সরকারি অফিসে দিন মজুরি খাটে । কোন আধা অধুরা কথা বার্তা তার সঙ্গে চলে না । গীতাজি একটু বাইরে যাচ্ছি । একটু পরে ফিরব । এসব এলোমেলো কথা একেবারেই চলবে না । গীতাজি জানতে চাইবে ঠিক কটার সময় আমি ফিরব । কিতনে বাজে? 
চা খাব । কিতনে বাজে? কাল কিন্তু দেরি করে ঘুম থেকে উঠব। কিতনে বাজে?
 
মাঝে মাঝে এইসা রাগ হয় । শোনো অত ঘড়িঘন্টা মেপে বলতে পারব না ।
 
গীতাজির বক্তব্য, তারও তো নিজের একটা শিডিউল আছে, তাই আমার সময় তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ সে চায় না তার নামে কোন অভিযোগের আঙুল ওঠে । গীতাজির বর কোন একটা সরকারি দপ্তরে কাজ করে। কিন্তু সংসারের হাল গীতার হাতে । মেয়েকে আই এ এস বানাবে । ওজন কমানোর জন্য একবেলা খায় না । প্রতিদিন নেলপালিশ বদলে বদলে লাগায় । নবরাত্রির সময় আমাকে সাবুদানা খিচুড়ি খাওয়ায় । মাতা রানির কাছে আমার কল্যাণ কামনা করে । আর মাঝে মাঝেই বলে, ম্যায় থোড়া পাতলি হো গয়ি না ? কথায় কথায় গীতা জানায় সে বি এ ফাইনাল দিচ্ছে । আমিতো অবাক । এতো কাজকর্ম করে কখন পড়ো তুমি?
রাত্তির বেলা । এগারোটা থেকে একটা । কোথায় বসে পড়? ঘরে তো সবাই ঘুমায় তখন। গীতা বলল ও সিঁড়ির ল্যান্ডিং এ বসে পড়ে । আমি আরো জানতে চাই । কি কি সাবজেক্ট তোমার?
হিস্ট্রি , ইকনমিক্স আর সায়েন্স ।
এ আবার কি অদ্ভুত কম্বিনেশন ? কোনদিন শুনিনি । এগুলোর সঙ্গে সায়েন্স? কি সায়েন্স , গীতাজি?
কেন? খুব অবাক হয়ে গীতাজি বলে , সায়েন্স, পোলিটিকাল কা ।
Top of Form

বাজে গল্প


কোথায় যেন পড়েছিলাম লীলা মজুমদার লিখেছিলেন তিন ধরনের গপ্পো সবাই খুব পছন্দ করে । প্রেমের , ভূতের আর চোরের । আমার আবার প্রেমের গপ্পো লিখতে গেলেই সেগুলো সব হাসির গল্প হয়ে যায় । এবার লিখতে গিয়ে মনে হল কলেজলাইফে আমাদের দুজন বন্ধু ক্লাসে ঢুকলেই আমরা সমস্বরে চেঁচিয়ে বলতাম , আজ কি কি হল ? 
ওরা ইনস্ট্যান্ট গল্প বানাত কিনা জানিনা , তবে ওদের কলেজ যাত্রা পথটি নাকি নানান কিসসা তে ভরে থাকত ।মানে পথ নাটিকা বলা যেতে পারে । মধুসূদন দাদার ভাঁড়ের মতো সেগুলো আর শেষ হত না । একদিন একজনা বলল , জানিস আজ ট্রামে লেডিস সিটের সামনে এক বুড়ো ভদ্রলোক ঝুঁকে পড়ে, ও দিদি একটু আপনার খোঁপা টা হাত দিয়ে সরিয়ে নিন , ও মা জননী একটু সরে বস না গো । মেয়েরা ভারি বিরক্ত । কি অসভ্য লোকরে বাবা ! একেবারে জানলার সামনে ঝুঁকে পড়ছে । এক ভারিক্কি দিদিমণি গোছের মহিলা হাঁকিয়ে বললেন , কি কচ্ছেন বলুন তো ? কি চাইছেন আপনি ?
 
ভদ্রলোক বললেন বাইরে টা একটু দেখব , তাই ।
 
মহিলা আরও হাঁকিয়ে বললেন ক্যালকাটা ইউনিভারসিটির সামনে দিয়ে যাচ্ছে , আর কিছু?
 
ভদ্রলোক কিছু না বলে ব্যালেন্স সামলে হাতদুটো জোড় করে একটা প্রণাম করে নিজের মনেই বলে উঠলেন , বাবা যা জ্বালিয়েছিলি ! প্রণামটা ইউনিভারসিটির উদ্দেশে নিবেদন করলেন ।
 
আমরা সমস্বরে বললাম , বাজে কথা , বানিয়ে বলছিস ।
 
ওরা বলত, দুজনে মিলে বানিয়ে বানিয়ে বলব? সত্যি রে !
 
একদিন এসে বলল , জানিস আজ একটা ছেলে পাশের লোকটাকে বলল দাদা অনেক ক্ষণ ধরে আমার ঘাড়ের ওপর গরম নিঃশ্বাস ফেলছেন কিন্তু ।
 
লোকটা বলল আমিতো হট যোগ প্রাকটিস করিনি । জ্যান্ত মানুষের নিঃশ্বাস গরমই হয় । ঠাণ্ডা করার উপায় আমার জানা নেই ।
 
আরেকবার কে যেন বলল , সেই কখন থেকে আমার পায়ের ওপর চেপে দাঁড়িয়ে আছেন , কিছু বলছি না বলে মজা পেয়েছেন না ? আমি নেহাত ভালোমানুষ , তাই এতক্ষণ কিছু বলিনি ।
 
পাশের জন খুব নির্বিকার ভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন, কই দেখি , না এটা আমার পা নয়।
 
 সেই দুজনা বন্ধুর একজনার মাসি একদিন গানের ইশকুল থেকে ফেরার সময় দেখে বন্ধুরা খুব হুল্লোড় করে খেলছে , মাসি ও অমনি দলে নেমে পড়লো , গানের খাতাটা পাঁচিলের ওপর রেখে । খেলে ধুলে বাড়ি ফেরার সময় দেখে কি খাতাটা এবং তারমধ্যে যত অশ্রু নদীর সুদূর পারে , দিনের বেলা বাঁশি, বকুল মুকুল পলাশ শিরীষ সব চিবুচ্ছে এক বে আক্কেলে ছাগল । খাতাটার দফা রফা , আর মাসিরও স্কুলের গণ্ডি 
পেরুতেই বিয়ে । নতুন মেসো নাকি দুঃখ করে বলেছিল , এত গান ভালোবাসি , এরা কেউ গাইতেই জানে না । তাতে খুব চটে গিয়ে মাসি বলেছিল , সে তো সেই ছাগলটার জন্য , আমার অমন সুন্দর গানের খাতাটা ।
যাই হোক ,এদেরই একজনার কাছে একটা চোরের গপ্পো শুনেছিলাম । হয়েছিল কি মুকু দিদি আর জামাইবাবু কলকাতার শহরতলীতে খুব ফাঁকা জায়গায় বেশ খানিকটা জমি কিনেছিল এবং সকলের জোরজবরদস্তিতে একখানা দোতলা বাড়ি ও তুলে ফেলে । চারদিকে ধু ধু মাঠ , কোন বাড়িঘর নেই , শেয়াল ডাকে । কিন্তু মুকুদিদির শাশুড়িমায়ের কড়া আদেশ হল ওই বাড়িতে তেরাত্তির থাকতেই হবে । সঙ্গে যাবে ও বাড়ির কুঁড়ের বাদশা পুরনো গৃহ সেবক হরেন । যাওয়ার ব্যাপারে যদি ও তার কোনোরকম উৎসাহ দেখা যায় নি । 
দিনমানের কাজকর্ম সব চুকেবুকে গেলে বেশ জমিয়ে গা ছমছমে অন্ধকার নামল । নিশ্ছিদ্র কালোর মধ্যে ছোট্ট একবিন্দু আলোর মতো মুকু দিদির বাড়ি জেগে রইলো সাড়ে তিনটি প্রাণী নিয়ে , মুকুদিদি , জামাইবাবু , ওদের একরত্তি মেয়ে আর হরেন ।
 
খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে এবার ঘুমোতে যাবার পালা । হরেন কিছুতেই নিচের ঘরে থাকতে চাইছিল না । কিন্তু সবাই মিলে দোতলায় থাকলে চলবে কি করে ? একতলাটা ফাঁকা রাখা যায় না । একদম অচেনা জায়গা ।
 
মুকুদিদি তাদের দোতলার শোবার ঘরে ঢুকে দরজা জানালা ভালো করে বন্ধ করে বন্ধ দরজার সামনে চেয়ার , চেয়ারের ওপর বালতি , বালতির ওপর স্টিলের থালা সব চাপা দিয়ে যতদূর সম্ভব নিরাপত্তার ব্যবস্থা করল । একে একে বাতি নিভে গেলো । কারুর চোখেই তেমন ঘুম আসছে না । কেমন কেমন যেন লাগছে । এইভাবে বেশ কিছু ক্ষণ কাটার পর হঠাত একটা শব্দও ওদের কানে আসে । দুম দুম দুম দুম । শব্দটা একটু একটু করে বাড়ছে মনে হচ্ছে । শাবল টাবল দিয়ে দরজা ভাঙছে না তো ? হরেনেরও কোন সাড়াশব্দ নেই । মুকুদিদির কপালে ঘাম জমছে । এবার আর ঘরে বসে থাকা চলে না । কত্তা গিন্নি দুজনে দুহাতে ফুল ঝাড়ু আর একটা লাঠি নিয়ে পা টিপে টিপে স্টিলের থালা, জলের বালতি কাঠের চেয়ার সরিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে বাইরে এলো । সব অন্ধকার । আওয়াজটা নিচের ঘর থেকেই আসছে মনে হচ্ছে ,নির্ঘাত দরজা ভাঙছে । দুজনে ধীরে ধীরে শব্দের উৎস ধরে ধরে এসে দাঁড়ালো হরেনের ঘরের সামনে । আওয়াজ আসছে বেশ ভালো মতোই । তবে কি কোন গুপ্তধনের জমির ওপর ওরা বাড়ি তুলেছে ? ডাকাতগুলো মেঝে খুঁড়ে মালকড়ি হাতাচ্ছে এখন । আর হরেন ? সে ব্যাটা বোধহয় মরেই গেছে । খুব চাপা গলায় জামাই ডাকে হরেন , এই হরেন , শুনতে পাচ্ছিস ?
 
ব্যাস , বলা মাত্রই দরজা খুলে হরেন বলল , যাক বাঁচা গেলো । এসে পড়েছেন তাহলে । মানে? কারা আওয়াজ করছিল ? আর কোথা দিয়ে পালাল ?
 
আওয়াজটা আমিই করছিলাম । না , ভাবলাম ,আপনারা তো ওপরে নাক ডাকিয়ে দিব্যি শুয়ে পড়লেন , এদিকে যদি সত্যি চোর ডাকাত আসে তাহলে তো প্রথমে ওরা আমার হাতদুটো বেঁধে ফেলবে ,তারপর মুখ বেঁধে ফেলবে , তারপর চুরি চামারি যা করার করবে । আমার তো হাত বন্ধ । মুখ বন্ধ । তাই আমি পা দিয়ে দরজায় মেরে মেরে দেখছিলাম আপনারা শুনতে পান কিনা ? যাক , শুনতে পেয়েছেন তাহলে । এবার নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো ! তবে এসেছেন কিন্তু বেশ দেরি করে ।
Top of Form
Bottom of Form