আমাদের পরিবারের জলবায়ু ছিল নাতিশীতোষ্ণ সাদামাটা । সেখানে জল থাকত প্রায়
নিস্তরঙ্গ , নীল আকাশে মেঘেরা হাসি হাসি মুখ করে উড়ে বেড়াত , বাতাস বইত মাপা লয়ে
মাপা ছন্দে । কোন কিছু বেতালা বাজত না ,
সুর এক আধ পর্দা কখনো কখনো কম বেশি লাগত ।
মোটের ওপর ভারি একটা একঘেয়েমি ছিল মনে হতে পারে কিন্তু তখনকার সেই মফস্বলের জীবনে
আমাদের সে সব কিছুই মনে হত না । কবির
সংসারে অনেক সময়ে একটা বেপরোয়া বেহিসাবি ব্যাপার থাকে । কিন্তু কবিতা লেখা , সরকারি
প্রশাসকের কাজ , সমাজসেবা ,সংসার বাৎসল্য সব কিছুই আমার বাবা একটা নিপুণ ভারসাম্যের সঙ্গে ধরে রাখতেন । আমাদের গায়ে কোন আঁচড় পড়ত না ।বাড়ি অফিস এক করে
আমাদের রাতের ঘুম মাটি করতেন না । তাঁর দৈনন্দিন জীবনটাও ছিল ভীষণ মাপা জোকা ।
কাজেই আমাদের জীবনে ঘটনার ঘনঘটা , এলোমেলো ঝোড়ো হাওয়ার , পশ্চিমি জঞ্ঝার দাপট প্রায় ছিলই না । কিন্তু একটা মনোরম ব্যতিক্রম মাঝেমধ্যে ঘটে যেত । সেই সাদামাটা আলো হাওয়ার সুরের মধ্যে হঠাত ই বেজে উঠত একরাশ উষ্ণ
বাতাস আর তাজা সোনালি রোদ্দুরের জলতরঙ্গ । মেডিটেরানিয়ান
বলতে পারো ।আর মুহূর্তেই আমাদের দরজা জানালার ভেতর দিয়ে পুরো পৃথিবী টাই যেন ঢুকে হুশ করে ঢুকে পড়ত । না দস্তখ জরুরি না আওয়াজ দে না । শাঁসো কি রফতার
দিয়ে নয় , ঝলমলে হাসি নিয়ে মানস কাকু র গমগমে উপস্থিতি সেই ব্যতিক্রমের
কারণ । কাকু সোফার পাশে নামিয়ে রেখেছে চেন
টানা ছোট কালো হাতব্যাগ । মুহূর্তে পালটে যাচ্ছে বাড়ির আবহাওয়া , এবার বেনিয়মের
ছড়ে পড়ল টান । সুর উঠল সপ্তমে ।
কই মিঠু মীরা ? তোমরা সব কোথায় গেলে ? এবার জাপানে কি হোল
জানো ? উফ মিঠু জানিস তো...।
আমাদের বাড়িতে
মানসকাকু আসা মানে ছিল এক আনন্দ লহরী । মানস কাকু এক আনন্দ স্মৃতি । সপ্তকের সাত
সুর, সূর্যের সাত রঙ আর সাত সমুদ্রের রাশি রাশি গল্প মানসকাকুর চারদিকে ঘুরপাক খেত
। আমরা হাঁ করে গপ্প শুনব । বাইরে রাত ঘন হতে থাকবে । আমি জানি আজ রাতে খেতে দেরি হবে । মানস কাকু ভাত রুটি
মিশিয়ে খাবে । ঘুমোতে দেরি হবে । বাবা হা হা করে
হাসবে । হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে
যাবে । আর মা খুব প্রশ্রয়ের সুরে বলতে থাকবে আপনি পারেনও বটে? তখন বাইরের জগতের সঙ্গে আমাদের পরিচয় বলতে বিদেশি গল্পের বই । তার বেশির ভাগই রুশ
গল্প । মানসকাকু সেই গন্ডিটাকে অনেক বাড়িয়ে দিতেন আমার কাছে । মানসকাকু হল আমার
ছোটবেলার সেই জানালা যা দিয়ে আমি স্বপ্ন দেখার জগত তৈরি করতাম । ছোটোখাট উপহারগুলো ছিল ভয়ানক রকমের মহার্ঘ । জাপানি বাঁশের ট্রে, প্যারিসের পারফিউম , শৌখিন
টেপা কানের দুল, হাই নেক সোয়েটার, বাবার
জন্য হাভানা চুরুট , পাইপ আর অপূর্ব সুগন্ধি তামাক । পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে
আসা পিকচার পোস্টকার্ড গুলো যত্ন করে
জমিয়ে রাখতাম । কাকু যেখানেই যেতেন আমাদের পিকচার পোস্টকার্ড পাঠাতে কোনোদিনই ভুল
হয় নি । এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল এর অনেক দিন পরে তখন আমরা সবাই বড় হয়ে গেছি ,
কাকু আর বাবাও খানিকটা প্রবীণ হয়ে গেছে
,আমরা সপরিবারে বেড়াতে গেছি , সেও পরীক্ষা
, বাবার অফিসের কাজ সব কিছুর সঙ্গে রফা করে । ফিরে আসার পর মানসকাকু বাবাকে
জিগ্যেস করলেন হ্যাঁরে বাসু , তোরা যে এত জায়গা ঘুরে এলি একটা পোস্টকার্ড পর্যন্ত
পাঠালি না ?
বাবা খুব তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলে উঠলেন , আরে আমরা তো ভারি
নৈহাটি রানাঘাট গেছি ।এ আর তোকে কী জানাব?
আমার মনে আছে কাকু
খুব অভিমান করেছিলেন । বাবার কাছে তার ভালবাসার প্রত্যাশা ছিল বরাবরই খুব বেশি ।
মানসকাকুর যেমন
চরৈবেতি আর বাবার ছিল পাদমেকং ন
গচ্ছামি । যে কথা বলছিলাম, মানসকাকু এলে তুমুল আড্ডা তুঙ্গে উঠত । আর সেই ডাক টা আমি
এখনও শুনতে পাই , মিঠু শিগগির দেখবি আয় । খুব উচ্চমানের পানীয়ের খালি বোতলের তলায় কয়েক
ফোঁটা পড়ে থাকা অ্যালকোহলে একটি দেশলাই জ্বালিয়ে
ফেলে দিলেই শোঁ করে একটা নীল শিখা উছলে উঠত । হাসি মেখে উঠত এক বালিকার দুই চোখ । কাকু যারপরনাই খুশি । সভা
প্রায় শেষ ।
এই মনোরম সন্ধে গুলোর আরো একটা দিক ছিল । বসার ঘরের দরজার
বাইরে জমতে থাকত জুতো চটির ঢিপি । বেশির ভাগ ই চটি । লাজুক চোখ, উস্কো খুস্কো চুল
, ঝোলা ব্যাগ আর ব্যাগের মধ্যে শাকের আঁটির মত উঁকি মারছে কবিতার খাতা আর লিটল
ম্যাগাজিন । আপিসে আপিসে কলেজের
আড্ডায় কথাটা তো ছড়িয়ে গেছে ,আজ বাসুদার বাড়িতে
সন্ধেবেলা চলে এস । মানসদা এসেছেন । তোমার অমুক সংখ্যাটাও এনো কিন্তু । মানসদার
দুটো কবিতা নিতে হবে আমার পরের সংখ্যাটার
জন্য । আমরা কলকাতায় আসবার আগে পর্যন্ত এরকম কতো সন্ধ্যাবেলা নরম আলো জ্বালিয়ে রেখেছে
আজও । পঞ্চাশের বিখ্যাত কবি মানস রায় চৌধুরীর দর্শনাভিলাষী কবির দলকে চা খাওয়াতে
রান্নাঘরে হিমশিম খেত মা ভানু আর কণা দি । এদের মধ্যে অনেকেই আজ বেশ সফল কবি ।
মানসকাকু আমাদের বাড়িতে এলে সেই রাতে থেকে যেতেন ।
কলকাতাতেও তাই করতেন । মানসকাকুর কাছে আমাদের বাড়িটা ছিল বিরামহীন
আড্ডা আর আরামের জায়গা । সে সময় খুব রিল্যাক্সড থাকতেন । কবি হলেও আর
পাঁচটা মানুষের মতই তার জীবনটা ছিল ঘোরতর গদ্যময় । সুখপাঠ্য রম্য রচনা নয়, একেবারে
ক্যাটকেটে সমালোচনামূলক প্রাবন্ধিক গদ্য ।
পেশায় ছিলেন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক , আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন
মনস্তাত্বিক ।তার রিসার্চ পেপার পৃথিবীর বিভিন্ন
ইউনিভার্সিটির সিলেবাসে সে সময় পড়ানো হত ।
এখন হয় কি না জানি না । ভবানীপুরের একটি বিশাল পরিবারের জুতো সেলাই থেকে
চন্ডিপাঠ ছিল তার দায়িত্বে । আর সে সংসারে শিশু থেকে বৃদ্ধ ,অসুস্থ অশক্ত মানুষ , অবাধ্য কাজের লোক , বিটকেল ভাড়াটে
, ঝগড়ুটে প্রতিবেশী ,নাছোড়বান্দা মনোরুগী সব্বাই ছিল পুরোদস্তুর । আমাদের বাড়িতে এসে মানস কাকু প্রথমেই বাড়িতে
প্রচুর ফোন করে মনিটরিং করতে থাকতেন , খুঁটিনাটি, অজস্র । আর বাবা বলতেন আঃ ছাড়না ওসব । কিছুক্ষণের জন্য
মনটা তুলে নে । বাবা তো মন তোলাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন , মানসকাকু কিন্তু ততটা ছিলেন
না । খুব বেশি জড়িয়ে পরতেন , খুব বেশি কষ্ট পেতেন , খুব বেশি অভিমান হত যে । আমি
এখন সেটা বেশ বুঝতে পারি কাকু ।কখনো খুব সকালেই বলতেন মীরা আমি এক্ষুনি বেরিয়ে যাব
, রঙ্গনের খুব জ্বর । না গো, খেতে গেলে
দেরি হয়ে যাবে ।
নিজে এত ওষুধ পত্র ভাল জানতেন কিন্তু কিছু একটা হলেই বাড়িতে
ফোন আসত “ডক্টর দেব আছেন?” বাবার কাছ থেকে হোমিওপ্যাথি নিয়ে তবে শান্তি ।
শুধু কবিতা আর অধ্যাপনাই নয় ,কাকু খুব উঁচু দরের একজন
সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন । শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে রীতিমত তালিম ছিল তার ।
ফোটোগ্রাফি নিয়েও
পেশাদারি কাজকর্ম আর চর্চা ছিল বিস্তর ।
মানস কাকুর তোলা ছবি |
মার ছবি মানস কাকুর তোলা |
বাবা আর কাকু |
একেবারে হিরের মত
দ্যুতিময় ব্যক্তিত্ব । তুখোড় রসবোধ । অসম্ভব ভাল বক্তা । যে কোন আসরের মধ্যমণি ।
তুলে দিচ্ছি বাবাকে
লেখা দুটি চিঠির কিছু অংশ
টোকিও । ১৬ই অগাস্ট । বুধবার
ভাই বাসুদেব ঃ গত
শনিবার এখানে পৌঁছেছি । তার আগে একেকদিন করে কাটিয়েছি থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক এবং
হংকং ।পরে এয়ার ওয়েজের দয়ায় ফরমোজার রাজধানী তাইওয়ান ।সত্যি ই এসে ভাল করেছি – এখন
মনে হচ্ছে এটা প্রয়োজন ছিল । টাকা খরচের আফশোস আর নেই ।হয়তো লেখায় এবং সামগ্রিক
ভাবে জীবন চর্যায় এর ছাপ পড়বে ।
সুধেন্দুকে এই চিঠি দেখাস না । ও যাতা বলবে দেখা হলে । ওর
কথা সত্যি –মনে হচ্ছে সব বেচে দিয়ে এই দেশের কোন সবুজ গন্ডগ্রামে ঢালু পাহাড়ের
গায়ে বসে বসে সূর্যাস্ত দেখি । অবশ্যই টেম্পুরা (চালের গুঁড়ো মাখানো চিংড়িমাছ
ভাজা) এবং সাকে সহযোগে ।
প্রথমদিকের যে সেমিনারে আমি মূল বক্তা ছিলাম তার টেপটা যদি
পাওয়া যায় নিয়ে যাব । এখানে অবশ্যই “ফ্রি লেকচার” অর্থাৎ কোন কাগজ দেখে পড়া চলে না
।গতকাল আমার বক্তৃতা ছিল ।দুপুরে গিয়েছিলাম ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে –তারপর পথ হারিয়ে
শেষ কালে যখন কনফারেন্সে পৌঁছলাম তখন আর দশ মিনিট আছে ।সভানেত্রী মিসেস এনিলা
গীন্সবারগ
( ব্রেজিলের মহিলা মাসীমার মত স্নেহশীলা) বললেন মানস may be allowed to speak –he speaks so well-। হাঁ ফাতে হাঁ ফাতে এসেছি সঙ্গে মূল পেপারটাও নেই ,হোটেলে । গল্প করার ভঙ্গিতে
আমার study টা বললাম –মনে
হল এ যেন তোর তমলুকের বাসার বারান্দায় বসে
অশোকের সঙ্গে গল্প করছি ।এক মুহূর্তে কোনো অসুবিধা নেই । সিরিয়াস হলেই মুশকিল ।
শুক্রবার ফিরে যাবার টিকিট ছিলো । কিন্তু
টিকিট ফেরত দিয়েছি ।আরো দুদিন থাকব-য দি ভাল লাগে-দু সপ্তাহ-দু মাস-দু জীবন । নারে
বাজে কথা থাক । শুক্রবার সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সোসাইটি এবং জাপানীজ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের যুগ্ম উদ্যোগে এক
সম্বর্ধনা সভা হবে –যেখানে ভারতবর্ষের মানস রায়চৌধুরী তার অভিজ্ঞতার কথা বলবেন এবং
আমেরিকার প্রফেসর হোলজম্যান মনোবিজ্ঞানী চিকিৎসকের সমস্যার কথা বলবেন। এছাড়া NHK (জাপানের রেডিও টেলিভিশনের)
সাহিত্যবিভাগে এক বক্তৃতা শনিবারে “বাংলা সাহিত্য ও কবিতার বর্তমান”। টোকিও এক আজব
শহর ,এতো পরিষ্কার,এত মহার্ঘ এত সুশ্রী সব মিলিয়ে এক বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার ।
হোটেলে ব্রেকফাস্ট সকালে দুটো ডিম একটু হ্যাম , এক স্লাইস রুটি , মাখন জ্যাম ,চা
কফি বা দুধ এবং ফ্রুট জুস । তবে জাপানী প্রথায় কম । সুপ, ভাত, মাছভাজা, শুঁটকি
মাছ, চা (মানে গ্রীন টি) আচার , সামুদ্রিক শ্যাওলা ভাজা একটু snail সিদ্ধ এবং মূলো থেঁতো করে নুন দিয়ে জারানো । গতকাল বেশ জাপানী ব্রেকফাস্ট
খাচ্ছিলাম , হঠাত snail খেয়ে (snail এর বাংলা কি রে?)মাথা টা ঘুরতে লাগল।
গত রবিবার রাত্রে আমাদের সব বক্তাদের সম্মানার্থে ভোজসভা ছিল । এত খাদ্য পানীয়
জীবনে দেখিনি । সব দেশের মদ্য ছিল । আন্তর্জাতিক নিয়ম মানতে ভারতের Golden
Beer এবং Rum (old monk)
ভালবাসা রইলো । মানস ।
ভাই বাসু
একবার সপ্তাহ শেষে ছুতো করে গাড়ি নিয়ে আয় না । তবে তোর সঙ্গে যেতে পারি । পুরো
একটা দিন প্রাণ খুলে কবিতা আড্ডা এবং কবিতা…
। কিছুই ভালো লাগছে না । স্টলের রঙ চঙে বই গুলো । যার নাম শারদীয় । সেগুলো পয়সা দিয়ে
কিনতে ভীষণ গায়ে লাগে । এক সময়ে ওগুলো বিনা মূল্যে পেতাম । কোথায় লিখেছিস ?আমি এলেবেলে
কিছু কাগজে । কিন্তু এখনো কবিতা লিখতে ভাল লাগছে
কেউ ছাপুক বা না ছাপুক ।
স্বপ্ন সমাসন্নে এখনো মাঝরাতে মশারীর
তাঁবু ফুলে ফেঁপে ওঠে – আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যায় আরব সাগরের দিনগুলিতে । মারহাব্বা জয়গুরু খুদা হাফিজ । ভালবাসা মানস।
এমন একটি বর্ণাঢ্য বহুমাত্রিক
প্রতিভাবান মানুষের যন্ত্রণা তো ছিলই । প্রতিভার যন্ত্রণা । এই এড়ন্ড বৃক্ষের দেশে
প্রাপ্য স্বীকৃতি না পাবার যন্ত্রণা । অধ্যাপনাতেও , কবিতার জগতেও । বিষাদ খিন্নতা
। বাসুদেব শান্ত করতেন ।
মানস রায়চৌধুরীর কবিতা |
যৌবন থেকে গাঢ় প্রৌঢ়ত্ব । এই দুই মানুষের
অতল
স্পর্শ বন্ধুত্বের রহস্য কী ছিল । একজন মৃদুভাষ ,গভীর, শিকড় মগ্ন অন্তর্মুখী,সেখানে জীবনতরঙ্গের হেলদোল নেই ,
নেই প্রত্যাশা বা সেভাবে কোন উচ্চাশা , মৃদু অভিমান বুঝি খুঁজে পেতে থাকে ঔপনিষদিক
শান্তি । আরেকজন ডালপালা ছড়িয়ে আবহমান সময়শিখা , বহির্মুখী,উচ্চাশী , উত্তুঙ্গ ,জীবনের
সফেন সমুদ্র আকন্ঠ পান করতে চান । যে গাছ
যত উঁচু ,ঝড়ঝাপ্টার মার তার তত বেশি । সে গাছ তাই মাঝে মাঝে নুয়ে পড়ে শিকড়ের কাছাকাছি , বলে শান্তি দে ,
কিছু বল যাতে এই বিক্ষুব্ধ মনটা স্থির হয় । দুজনের একান্ত আলোচনার ছবি আজও দেখতে
পাই । মানস শেষপর্যন্ত শান্ত হতে পারেন নি ।
হুবহু তুলে দিচ্ছি বাসুদেবের ডাইরির পাতা
১৬ ।৫।৯৬ (২৩।৩।৩৫-১৬।৫।৯৬)
সকাল ৯।৩০ মিনিট নাগাদ শ্রী অরবিন্দ সেবাকেন্দ্রে (যোধ পুর পার্ক) অনেক কালের
বন্ধু (১৯৫২ থেকে) মানস রায় চৌধুরীর চলে যাওয়া । ৫৩ দিনের লড়াই শেষ । আন্তর্জাতিক
খ্যাতিমান গবেষক , কবি , মনোবিজ্ঞানী ,আলোকচিত্রী , সঙ্গীতজ্ঞ ,অধ্যাপক, সুবক্তা,
সুরসিক, সুদর্শন , বুদ্ধিদীপ্ত ,প্রাণবন্ত একটি মানুষ ,প্রাণসখা আমার ,অবসর নিয়ে
চলে গেল অভিমান করে রহস্যময় পর্দার আড়ালে। ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক হয় নি । এ রকম কথা
ছিল না ,মানস ।
কেমন ছিলেন বাসুদেব, মানস চলে যাবার পর । শোক আত্তীকরণ করার বিপুল ক্ষমতা তার ছিল । কিন্তু তিনি খুব একা হয়ে গেছিলেন । খুব
একা । মনের কথা তো সবার সঙ্গে বলা যায় না । ঠিক জানি না তবে মনে হয় এই সময়ের কিছু পরে নিজেও ক্রমশ গুটিয়ে নিতে
থাকেন বাইরের কোলাহল থেকে ।
অনিদ্র গোলাপ
কবির একটি কাব্য গ্রন্থের নাম
চিঠিপত্রে মূল
বানান অবিকৃত রাখা হয়েছে।
বড়ই মরমিয়া লেখা... ভালো লাগল।
ReplyDeleteথ্যাঙ্ক ইউ , সৌরাংশু
ReplyDeleteখুউব মর্মস্পর্শী লেখাটি । আর সাথে সাযুজ্য রেখে হাতেলেখা কাগজটি, দুই বন্ধুর লেখা কবিতা আর সাদাকালো ছবি এক নস্ট্যালজিক আবহ আনল।
ReplyDeleteখুব ভাল লাগল আপনার ভাল লেগেছে জেনে । থ্যাঙ্ক ইউ ।
ReplyDeleteভীষণ ভাল লাগল পড়তে।আমাদের ছোটবেলায় সবার পরিবারেই মোটামুটি এমন কেউ কেউ থাকতেন যাঁরা আসলে তখনকার নিস্তরঙ্গ জীবনে খুশির হাওয়া বয়ে যেত,সম্পূর্ণ পৃথিবীটা যেন ঢুকে পড়ত বাড়ীর ভেতর।~শাশ্বতী সরকার
ReplyDeletethank you so much
ReplyDeleteতোমার ব্লগস্পটটা খুলেছি। একে একে সবগুলো পড়ব। দাদার বিষয়ে এত ভাল আগে কেউ লেখে নি। তুমি যে দাদাকে ঠিক চিনতে পেরেছিলে সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। অনেক শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ রইল। কমেন্টটা কি ভাবে পাঠাব ঠিক বুঝতে পারছি না। তাই 'অজ্ঞাত' থাকাই ঠিক করলাম।
ReplyDeleteআপনি শিবানী পিসি । প্রণাম রইলো । মানস কাকু খুব কাছের ছিলেন যে
ReplyDeleteখুব ভালো লাগল লেখাটি পড়ে। দুই কবির বন্ধু বৃত্তের পরিধির ভেতর এবং বাইরে থেকে, কবি-র ভাবনা,বোধ,উপলব্ধি আর সময়ের কিছু নির্যাস পাঠকদের জানার সুযোগ করে দিলেন বলে ধন্যবাদ জানাই।
ReplyDeletechomotkar
ReplyDelete্ধন্যবাদ
Delete