Tuesday 28 April 2015

ডিডগেরিডুর সুর

নীল পাহাড়ের কোলে এলিয়ে আছে কাটুম্বা গ্রাম । যতদূর তাকানো যায় চোখে লেগে থাকে নীল পাহাড়ের সারি আর স্বপ্নকুহেলী মাখা  ঘন সবুজ বন বৃষ্টির জল ধুয়ে নিয়েছে তাকে । ভেজা বাতাস ,নীল পাহাড় আর সবুজ বন । রোদ্দুরে  ভেসে যাচ্ছে চারদিক অকৃপণ আলো । আলো তো নয় । আলোর ঝরনা । আর সেই রোদের রামধনু রঙ মেখে  বনের গভীরে ঝরঝর বয়ে যায় কাটুম্বা ঝোরা আর কাদুম্বা  নদী   ।  পাহাড় ঘেঁষা সবুজ বনে ঝিমঝিমে নীলচে  ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশা জড়িয়ে থাকে সব সময় । কান পাতলেই শোনা যায় ঝরনার গান আর লায়ার পাখির ডাক ।


Lyre Bird
  রিনরিনে । সুরেলা । তীব্র । আর কোন শব্দ নেই সেখানে। লায়ার পাখি তার ঝলমলে পাখা নিয়ে বনের মধ্যে কোথায় লুকিয়ে লুকিয়ে ডাকে এ পাখি আবার অন্যের ডাক নকল করতে পারেপাখি সুর করে ডাকে “ মিনহি ইইই, উইমলাআআহ , গুন্নেডুউউউ” অমনি তিন বোন  খিল খিল হেসেহেসে এ ওর গায়ে ঢলে ঢলে পড়েযেন একরাশ বুনো ফুলের বনে বাতাস বয়ে গেল । সঙ্গে সঙ্গে  কুহেলী পাহাড়ে প্রতিধ্বনি ভেসে এল -  “মিনহিইইই, উইমলাআআহ , গুন্নেডু উউউ”ওরা গাঁয়ের ডাক্তার মানে  বদ্যির তিন মেয়ে । বদ্যির চোখের মণি ।পাহাড়ের এক গভীর  গর্তে থাকত বুন্যিপ । একটা ভয় দেখানো বিটকেল জন্তু



প্রতিদিন তিন মেয়ের বাবাকে  গর্ত পার হয়ে কাজে যেতে হয় , যাবার আগে মেয়েদের যত্ন করে রেখে যায় সে কি জানি সাবধানের মার নেই ।একদিন পাহাড়ের খাড়াইএ উঠে বদ্যি দেখে গর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে ভয়ঙ্কর বুন্যিপ আর মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে প্রায় তার  কাছেই । বাতাস বইছে না, পাখি গান গাইছে না, বনের প্রাণীরা ডাকছে না,বনপরীরা ভয়ে লুকিয়ে পড়েছে। চারদিক থমথম । বুন্যিপ এগিয়ে আসছে একটু একটু করে । মেয়েদের বাঁচানোর জন্য তার হাতের মন্ত্র পড়া হাড় টা বদ্যি ছুঁড়ে মারে মেয়েদের দিকে । চোখের নিমেষে তাদের পাথর বানিয়ে দেয় । 


তিন বোন 


 এবার রেগে গিয়ে তাকে তাড়া করে বুন্যিপ ।  জাদুমন্ত্র দিয়ে লায়ার পাখির রূপ ধরে নেয় বদ্যি। যাক সব্বাই বেঁচে গেল তাহলেকিন্তু তাড়াহুড়োতে সেই জাদু মন্ত্র পড়া হাড় টা খাড়া পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বনের মধ্যে কোথায় যে টুপ করে পড়ে গেছে! আজও লায়ার পাখি সেই হাড় খুঁজে বেড়াচ্ছে ।পাথর হয়ে যাওয়া তিন বোন চুপচাপ আজও দাঁড়িয়ে আছে নীল পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ,  লায়ার পাখি চক্কোর কাটে তাদের মাথার ওপর কবে পাখি খুঁজে পাবে সেই হাড়, কবে আবার তারা তিনটে ফুটফুটে বোন হয়ে উঠবে , কবে আবার তাদের বাবা কাজ থেকে ফিরে এসে পাতার আগুন জ্বালিয়ে দেবে, তারা গোল হয়ে ঘিরে বসবে , নদী থেকে  ধরা হবে বারামুন্ডি মাছ,  বাবা ডিডগেরিডুর সুর তুলবে, অন্ধকারে কালচে নীল আকাশে তখন সন্ধ্যাতারা জ্বল জ্বল করে উঠবে। কবে?  কবে আসবে বাবা? কবে হবে এই পাথর থেকে মুক্তি? লায়ার  পাখি আজও খুঁজে চলেছে আর ডেকে চলেছে  “মিনহি, উইমলাহ , গুন্নেডু উউউ।



পশ্চিম থেকে পুবের দিকে চলছিল সে ক্লান্ত ।তৃষ্ণার্ত । তার মাথার চুলে, কপালে ,জামায় রেণু রেণু সোনা ।  দুপুরের গনগনে রোদে এলোমেলো আলুথালু  গমরঙা সুন্দরীর মত এলিয়ে থাকা পিঞ্জারার পথ ধরে নির্জন মান্ডুরার শান্ত জলে পা ভিজিয়ে নেয়
সোনার দেশ । মাটির তলায় সোনা । তামা, বক্সাইট, ইউরেনিয়াম ।  পেট্রলিয়াম।  তাল তাল পাথর চাপা ।   মাটির ওপরেও সোনা । দিগন্ত প্রসারী সোনালি শস্যের মাঠ ।  অফুরন্ত । প্রকৃতি তার ভান্ডার বিলিয়ে দিচ্ছে উদার হাতে ।  শানিত নীল আকাশ  থেকে ঝরে পড়ছে সোনা । আলোকের এই ঝর্না ধারায় ধুইয়ে দাও । কোথাও এতটুকু কার্পণ্য নেই , মালিন্য নেই । আকাশ বাতাস নদী সমুদ্র বন ফল শস্যসম্ভার  মাছ দুধ  কোন কিছুরই অভাব নেই । কিন্তু  অয়ারাগুল মুরিয়াটার মনে শান্তির অভাব কান্না তার আর  আসে না আজকাল মান্ডুরা ছেড়ে   মুরিয়াটা এগিয়ে চলে । ঝড়ের বেগে । ইয়ারালুমলা হয়ে টাগেরনং । আরো পুবে । মুররুম্বিডগি নদীর ওপর বাঁধ । সেই বাঁধ ছাড়িয়ে নীল পাহাড়ের গায়ে টিডবিনবিল্লার জঙ্গল ।জঙ্গলের মধ্যে তার ছোট্ট ঘর । গাছের বাকল ।পাতার ছাউনি । শহরে সে বড় একটা যায় না । কেনই বা যাবে? কে তাকে চেনে সেখানে ? তার তো একটাই পরিচয় । নুনগা । অ্যাবরিজিনাল টিডবিনবিল্লার গাছপালার মধ্যে তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আজ সে বেঁচে আছে । একা । তার বউ মনের দুঃখে মরে গেছে কবে বেশির ভাগ সময় ছবি আঁকায় বুঁদ হয়ে থাকে । পাতা শেকড় বাকড় মাটি খনিজ কতো কিছু থেকে রঙ বানায় । মোটা চটের ওপর , গাছের বাকলে,ছবি এঁকে চলে নেশার মত ।






সন্ধে হলে আকাশে যখন সন্ধ্যাতারা জ্বল জ্বল করে মুরিয়াটা তার ডিডগেরিডু বাজাতে থাকে । ডিডগেরিডুর গম্ভীর সুর তার বুকে মুচড়ে মুচড়ে ডাকতে থাকে “আলিরা, বিন্দি, মায়া “ ।
কোথায় তোরা মা আমার ? কোথায় হারিয়ে গেলি? আর তো দেখি না? “আলিরা বিন্দি মায়া” ? ফিরে আয় ফিরে আয় একবার ।বুক টা যে বড় খালি খালি লাগে ।



 হারিয়ে যাওয়া মেয়ে তোমার মাগো
বাতাস হয়ে ফিরবে ঝড়ের রাতে
বনে বনে বৃষ্টি পাতে জাগো
নতুন মানুষ সবুজ নিশান হাতে
 লোককথার সেই  পাথর হয়ে যাওয়া তিন বোনের মত মুরিয়াটার তিন মেয়েও আর কোনো দিন ফিরে আসবে না । তারা হারিয়ে যায় নি কোথাও চুরি হয়ে গেছেএমনটাই বলছে এরা । “স্টোলেন জেনারেশন “। লস্ট নয় , স্টোলেন, হারিয়ে যাওয়া নয় , চুরি হয়ে যাওয়া প্রজন্ম । ১৯০৯ থেকে ১৯৬৯ এবং তার পরের কিছু সময় ধরে  ব্রিটিশ সরকার আর চার্চ একযোগে শুরু করে এক  তান্ডব ।  মায়ের বুক থেকে সন্তান  জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দশকের পর দশক । চুরি হয়ে গেছে আলিরা বিন্দি মায়ার মত কতো দুধের বাচ্চা । বাচ্চাদের বাপমায়ের কাছ থেকে সরিয়ে দেবার জন্য খাড়া করেছিল নানান অদ্ভুত যুক্তি । "Aboriginal children separated, often forcibly, from their families in the interest of turning them into white Australians”.
শিকড়  উপড়ে আনা এইসব বাচ্চাদের শ্রম ঘরে বাইরে কাজে লাগানোর ধান্দাই ছিল বড় । অস্তিত্বসংকট  আর আত্মগ্লানি  নিয়ে  বড় হয়ে ওঠা একটা ক্ষত বিক্ষত প্রজন্ম   , নাড়ির যোগ ছেঁড়া , ইতিহাস নেই ,সংস্কৃতি নেই, নেই শিকড়ের টান, দুটো খেয়ে পড়ে বাঁচা আর দুটো ইংরেজি কথা বলাএদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে সভ্যতার ধারক বাহকেরা ।

ধর্মের কল বাতাসে নড়ে । উত্তাল বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে  দাবী এল  । ক্ষমা , ক্ষমা চাও সেই সব মায়েদের কাছে, তাদের চোখের জলের কাছে, নতজানু হও সেই সব মানুষদের কাছে যাদের ওপর এসে পড়েছে একটাই তকমা, স্টোলেন জেনারেশন । রাষ্ট্র শক্তি  শেষ পর্যন্ত নত হল । ১৯৯৮ সালের   ২৬ মে   অস্ট্রেলিয়া  প্রতি বছর পালন করে আসছে  ন্যাশনাল সরি ডে।
২০০৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টের তরফে  আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ  প্রকাশ -.
We reflect on their past mistreatment.
We reflect in particular on the mistreatment of those who were Stolen Generations—this blemished chapter in our nation’s history.
... To the mothers and the fathers, the brothers and the sisters, for the breaking up of families and communities, we say sorry


অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে ঘুরতে ঘুরতে কতগুলো ব্যাপার  একই রকম ভাবে নজরে পড়ছিল । ইওরোপিয় বংশধর বাবু বিবিদের  দামি দামি শহর । ভয়ানক শুচিবায়ুগ্রস্ত । একেবারে ছাতিমতলা লেনের এঁদো গলির পিসিমার মত ।  এয়ারপোর্টে গোবরজলের বদলে গায়ের ওপর কুকুর ছেড়ে দেয় । জুতোর তলা ম্যাগনিফ্লাইং গ্লাস দিয়ে দেখে তাতে কোন  অন্য দেশের দেহাতি মাটি লেগে আছে কিনা , এর ওপর যদি কোয়ারান্টাইন  লাগু হয়ে যায়  তবে তো জীবন বরবাদ । এত হ্যাপার হেতু কি ? হেতুর কারণ তাদের এই দেশের অতি বিশুদ্ধ জলবায়ু , ফ্লোরা এবং ফনা  ,উদ্ভিদ ও   প্রাণীজগত যাতে কোন ভাবে , এমনকি অবাস্তব দুঃস্বপ্নেও যেন সামান্যতম ক্ষতিগ্রস্ত না হয় । অথচ এই দেশ এই মাটি এই আকাশ এই আলো সবটুকুই কি তাদের একার ?

অনেকে বলেন শুচি বায়ু গ্রস্ততা একটা মানসিক রোগ । একটা পাপবোধ , অন্তঃ করণ থেকে কুড়ে কুড়ে খায় । তবে এদেরও কি তেমন কিছু আছে? আছে কি কোন পাপবোধ?
 এখানকার রাস্তা , বিভিন্ন শহরের নাম ,  দোকান রেস্তোরাঁর নাম , নদী জঙ্গলের নাম এসবের মধ্যে কতগুলো নামহীন মানুষের মিছিল দেখতে পেলাম যেন   উলুমুলু , ওলংগং  , গিলাং , কিলডা ,ইলুকা , ওস্তানা ,কোনোবা , মানুকা , কিল্লারা আরো  অনেক অনেক অজস্র কবেকার আদি গন্ধ স্মৃতি  বয়ে নিয়ে চলছে । তবে তারা কোথায়? যারা রেখেছিল এইসব নাম?  না,  এখন তাদের সহজে দেখতে পাওয়া যায় না । তারা যেন ইনভিজিবল ।  শুধু এই নামগুলোই নয় , তাদের এই উজ্জ্বল “অনুপস্থিতি”, আড়ালে থেকেও যে তারা কতো বাঙময়,তার পরিচয় ছড়িয়ে রেখেছে তাদের শিল্পকলায়   বড় বড় আর্ট গ্যালারি , মহার্ঘ সব  বুটিক, বিপনিতে ছেয়ে আছে তাদের  তুলির জোরালো টান,রঙের মায়াজাল , স্পষ্ট তেজালো অনুভূতিচড়া দামে বিকোয় সে সব সামগ্রী ।অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাবরিজিনাল কালচার ব্যাপারটা পাব্লিক  খুব খায় , শহুরে সাদাদের  তাতে  তোল্লাই খুব ।   কারণ এতে পয়সা আসে প্রচুর । লোকের হাতে অনেক পয়সা ।   একটু  অ্যাবরিজিনাল, একটু অ্যাবস্ট্রাক্ট, একটু এথনিক । নিঃসঙ্গ বিবর্ণ ছাই রঙা কৃত্রিম দিনগুলো ভরে ওঠে ওদের অকৃত্রিম রঙের জেল্লায় ।  ক্রিম কালারের সোফার পাশে বেইজ ও রাস্ট রঙা পর্দা ঘেঁসে  টেবিল ল্যাম্পের কোমল আলোয় দারুণ মায়াময় সেই সব ভানহীন রঙের জাদু ।













অস্ট্রেলিয়ার স্যুভেনিরে ক্যাঙ্গারু কোয়ালার পাশে অ্যাবরিজিনালদের ছবি আঁকা থাকে দেখেছি  ।সারা গায়ে ডোরা কেটে এক হাতে বুমেরাং আর অন্য হাতে ডিডগেরিডু নিয়ে তারা ট্যুরিস্টদের আমোদ দেয় । বেঁচে থাকার লড়াই সে একই সঙ্গে পণ্য আর বিনোদন দুই ই । তারপর বেচাকেনা সারা হলে কোথায় সরে পড়ে কেউ জানেনা ।  শহর ভরা জৌলুসে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না ।

ডিডগেরিডু  /পিট্ স্ট্রিট সিডনি  

 মনে পড়ল ,ছত্তিশগড় ওড়িশার আদিবাসীরা  লম্বা লাঠিতে  সুন্দর নক্সা বানায় । সবাই আহাউহু করে কিনে নিয়ে যায় বাড়িতে সাজাবে বলে । ওই লাঠিগুলো হাতের তিন আঙুলের কায়দায় বন বন ঘুরোলে একটা সুন্দর সুরেলা আওয়াজ বেরোয় , আবার ওপর নিচ নাড়ালে মনে হয় যেন ধূপঝোরার পাশে নুড়ি পাথরের  শব্দ । ঘন জঙ্গলে সাপ জোঁক , কাদা , কাঁটা ভরা পথে একা একা চলার সময় ওদের নিঃসঙ্গতা  কাটায় ওই  আওয়াজ  দিয়ে ।হুইস্লিং ইন দা ডার্ক । শৌখিন ড্রয়িং রুম থেকে অনেক যোজন দূরে । বেঁচে থাকার লড়াই ।











অস্ট্রেলিয়াকে বলা হয় ইমিগ্রান্টদের দেশ । সুযোগ সন্ধানীদের স্বর্গরাজ্য । সেই স্বর্গরাজ্যের পরোয়ানা নিয়ে সেই যে এলেন ব্রিটিশ রাজকীয় নৌসেনার নাবিক ক্যাপ্টেন জেমস কুক, ১৭৭০ সালে ,এলেন তো এলেন আর ওঠার নাম গন্ধও দেখা গেল না । উপরন্তু আকাঠ উটকো লুম্পেন বদমাশ ক্রিমিনাল দের  দেশ থেকে ধরে ধরে  এনে এদেশে চালান দেওয়া শুরু হল । তার এসে দিব্যি গ্যাঁট হয়ে বসল । সমুদ্র ঘেরা প্রাকৃতিক জেল খানা ।  বছরের পর বছর ঘুরতে তারাই আবার হোমরাচোমরা বনে গেল ।

ক্যাপ্টেন কুকের হাত ধরেই এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার  সোনা ফলানো মাটিতে ভূমিসন্তানদের উৎখাতের নিশ্ছিদ্র আয়োজন । বীরভোগ্যা বসুন্ধরা । শুনতে খারাপ লাগলেও অতীত তো তাই বলে। দশকের পর দশক উৎখাতের পর উৎখাত । সাদা চামড়ার চতুর পরিকল্পনা ছিনিয়ে নিতে থাকল কালো গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষগুলোর জন্মগত ন্যায্য অধিকার ।এই প্রকৃতি , এই মাটি এই দেশে  তাদের বেঁচে থাকার অধিকার ।

দুই বিশ্ব যুদ্ধ আর তিরিশ দশকের  অর্থনীতির গ্রেট ডিপ্রেশনের ভয়াবহতা  লাজ লজ্জা ঘুচিয়ে বেপর্দা করে দিয়েছিল সব কিছু ।  দলে দলে কাতারে কাতারে লোক বেঁচে থাকার তাগিদে  ইওরোপ থেকে চলে এসেছে এ দেশে । নামগোত্রহীন চালচুলোহীন  হাড়ে হাভাতে মানুষের স্রোত এসেছে জীবিকার সন্ধানে ,জীবন গড়ার তাগিদে , বেঁচে থাকতে ।  সবাইকে জায়গা ছাড়তে ছাড়তে   ক্রমশ পিছু হটে গেছে আদি বাসিন্দারা ,গুটিয়ে গেছে তাদের নিজেদের  মধ্যে,অসম্মান আর বঞ্চনার অভিমান নিয়ে





কিন্তু তাদের সৃষ্টির বর্ণিল কুহক ,তাদের নামের  অগুনতি শহর রাস্তা  কানে কানে ডিডগেরিডুর সুরের মত  মৃদু অথচ স্পষ্ট ভাবে বলে চলেছিল , এ দেশটা আসলে আমাদের । আমাদেরই ।জানো না, ২৬ শে জানুয়ারি  অস্ট্রেলিয়া যখন জাতীয়  দিবস পালন করে, এদেশে ব্রিটিশ জাহাজের নোঙর ফেলার প্রথম দিন, আমরা ওই দিনটাকে বলি ইনভেশন ডে,আমাদের ওপর জুলুম শুরু হবার প্রথম দিন





অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের প্রথম কিস্তি  নিবেদন করছি সে দেশের অচ্ছেদ্য অঙ্গ ,সেই সব আদি বাসিন্দাদের,  নিজের দেশে পরবাসী হয়ে   সেই  দেশ যারা স্বপ্নের মধ্যে আজও খুঁজে খুঁজে বেড়ায় 

বুমেরাং 
পাহাড়তলির গাঁয়ে কাঠকুটো ভালবাসা দিয়ে
সে-ই জ্বেলেছিল অগ্নি ,শিখিয়েছে নাচ
সেই দিয়েছিল স্বাদ মহুয়ার গড়েছে কুঠার
দেখিয়েছে টিলা থেকে হরিণের শিঙে গাঁথা
রক্তমাখা আদিবাসী চাঁদ
অনেক দিয়েছে সে তো, আজ তাকে কিছু দিতে হয়
একান্ত আপন মৃত্যুভয়, মাঝরাতে হঠাত পিপাসা
কিছু ভ্রম কিছু পদাবলি , মেদুর স্পর্শের কান্না
এইসব তাঁকেই প্রণাম


কবিতা - বাসুদেব দেব
চিত্রকলার ছবি নেওয়া হযেছে  ন্যাশনাল  আর্ট  গ্যালারি  ক্যানবেরা ,অস্ট্রেলিয়া থেকে
Lyre bird /blue mountain   এর ছবি  গুগল
ডিড গেরিডুকে ডিডজেরিডু ও বলা হয়ে থাকে।

















5 comments:

  1. অপূর্ব লাগলো, মিঠু। কত কিছু জানতে পারলাম। তোমার লেখা নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। এমন একটা পোস্ট পড়ানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  2. thank you Kuntala. khub bhalo laglo tomar comment peye. karon tumi amar favourite

    ReplyDelete
  3. Apnake onek dhonyobad, Auradha, Jonakimelay asar jonyo.

    ReplyDelete