বাসন্তীর জুঁই ফুলের বাসি মালা জড়ানো চুলে উৎসবের ঢল , উৎসবের আমেজে ভারি তার চোখের ঘন পাতা ,
উৎসবের স্বপ্নে বিভোর তার দুই কাজলচোখ, আলুথালু মন শুধু নকশা বুনে চলে কাজের ফাঁকে
।
মাঝে মাঝে ভারি বিরক্ত লাগলেও বাসন্তী ওই রকমই । কাজে ঢিলে
পড়ে যখনতখন, সব কিছু কেমন এলোমেলো । ফ্যান
চলছে তো চলছেই , বন্ধ করার নাম নেই । কলের জল পড়েই যাচ্ছে , ট্যাঙ্ক প্রায় খালি ।
কিছুতেই যায় আসে না তার । চোখের পাতা নামিয়ে শুধু বলে, স্যরি ম্যাডাম , ভুল হো গয়া
।
দক্ষিণ দিল্লির এই মাল্টি স্টোরির সবচেয়ে উঁচুতলা বেছে
নেওয়া আমার কাছে একদমই “জেনে শুনে বিষ করেছি পান” । খামখেয়ালি আকাশ, চিড়বিড়ে সূর্য, ডানামেলা হায় চিল সোনালি ডানার চিল আর একলা চলা এরোপ্লেন আমার সঙ্গী ।
মহাভারতে বক রূপী যক্ষ যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করেছিল , সুখী কে ? উত্তর
এসেছিল যে লোক ঋণী ও প্রবাসী না হয়ে দিনের অষ্টম ভাগে মানে প্রায় সন্ধে বেলা ,শাক আর ভাত রান্না করে সেই সুখী । ঋণের প্রকারভেদ লেখা নেই । কাজেই সব
দিক থেকেই সংজ্ঞা অনুযায়ী আমি ঘোরতর অসুখী
।
এই নিঃসঙ্গতা এবং প্রবাস যখন আমার প্রায় দম আটকে ফেলেছে সেই
মাহেন্দ্রক্ষণে এসেছিল বাসন্তী । একা নয় , পুরোদস্তুর সংসার নিয়ে ।
“ আমি সব সামলিয়ে নেব ম্যাডাম , কোন টেনশন নেবেন না” ।
কিছুদিনের মধ্যে বাসন্তী আমার বাড়ির হাল ধরে নেয় । খাবার পুরো না খেয়ে উঠে গেলে
রীতিমত মা মাসির মত ধমক লাগায় । আর বলে এটা আমার দপ্তর , এখানে আমি আপনাকে যা খুশি
বলতে পারি ।
কখনো চমকে দিয়ে ধোঁয়া ওঠা ইডলির প্লেট মুখের সামনে নামিয়ে
বলে, “বাড়িতে বানিয়েছিলাম । আপনার জন্য
নিয়ে এলাম “। স্বজনহীন পরিবেশে আমি গলে গলে কৃতার্থ হয়ে যাই । বাসন্তী চমৎকার রান্না
করত ।
অফিস থেকে বাড়ি ফিরলে দরজা খুলে দুটো একটা খুচরো কথা , খরচ না করলেও চলত, তবু করত বাসন্তী । “আ
গয়া । চায়ে পিনা হ্যাঁয়? “ ব্যাপারটা কিছুই না । কিন্তু তুলির ওই হালকা নরম রঙের
পোঁচ টুকুতেই সব ভাললাগা মিশে থাকত । দেদার ভুলভ্রান্তি সব মাপ হয়ে যেত ওর স্বভাব
মাধুর্যে ।
বাসন্তীর ছোটোবেলা কেটেছিল
পন্ডিচেরি আশ্রমে । প্লে গ্রাউন্ড , ছুটির দিনে সিনেমা দেখা , ডাইনিং হলের খাওয়া , আশ্রমের ডিসিপ্লিন ,
বর্ষীয়ান আশ্রমিক অমলকিরণকে দেখা সবকিছুই কলকল
করে আমাকে শোনাত । আর বলত এবারে যখন আশ্রমে যাবেন আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন ।
আমার ঘর লাগোয়া বাসন্তীর ঘর। দশ ফুট বাই দশ ফুট। স্বামী আর দুটো ছোট্ট মেয়ে ।
দুটো গুলিয়ে যাওয়া নাম, দিব্যা আর বিদ্যা । কোনটা যে দিব্যা আর কোনটা যে
বিদ্যা আমি আজও জানিনা । বরটা নাকি কোন আই এ এস অফিসারের গাড়ি চালায় । এমনিতে ভদ্র
সভ্যই বলেই মনে হল ।
সাজগোজে বাসন্তীর খুব যত্ন ।সুন্দর সালোয়ার কামিজ, বিনুনিতে
বেল জুঁই , পায়ে নক্সাতোলা দিল্লি হাটের জুতি । দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণকলি । এমন
মেয়েদেরই মনে হয় সৈরিন্ধ্রী বলা হত । বাজারহাট
করে ফিরলে দেখতাম বাসন্তী খুব আগ্রহ নিয়ে সব কিছু খুলে খুলে দেখত । বিশেষ করে
জামাকাপড় । কোত্থেকে কিনেছেন ? কতো দাম ?
একটু অস্বস্তি হত । এমনভাবে জানতে চাইত যেন ও খুব অভ্যস্ত এই সব ব্যাপারে । ঠকেছি
কিনা, মানাচ্ছে কিনা, মতামত দিত । দেখতাম
বাসন্তীর চোখের তারায় , আনত চোখের ঘন পাতায় মৃদু বেদনা আবছা কাজলের মত লেগে আছে ।
বাসন্তীর জুঁই ফুলের বাসি মালা জড়ানো চুলে উৎসবের ঢল , উৎসবের আমেজে ভারি তার চোখের ঘন পাতা ,
উৎসবের স্বপ্নে বিভোর তার দুই কাজলচোখ, আলুথালু মন শুধু নকশা বুনে চলে কাজের ফাঁকে
।
অনেক সময় জিনিশপত্র কিনে আলমারির মধ্যে লুকিয়ে ফেলতাম ।
কিন্তু যদি একবার দেখে যে আমি নতুন কিছু পরেছি , সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন, ইয়ে কব লিয়া ? মুঝে দিখায়া ভি নহি?
আবার চোখের তারায় তিরতিরে মৃদু অভিমান ।
কিন্তু এই প্রবাসে সেই ছিল আমার পরম স্বজন । সুখদুঃখের
সঙ্গী । আমার ঘুম ভরা রাত ।
প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত বড় বাড়িতে
রাত গভীর হলে ঘুম আসতে চাইত না । ঘরগুলো হা হা করে যেন গিলতে আসে ।বাসন্তীর
দশফুটিয়া ঘর থেকে বেগুন ভর্তা আর আলু পরোটার সুঘ্রাণ দরজার ফাঁক ফোকড় দিয়ে আমার
নাকে এসে ঢুকত । বাসন্তীর গলা , কাচ্চাবাচ্চার হৈ হল্লা , টিভির শব্দ দূর থেকে ভেসে এসে আমার শূন্য ঘরের চারদিকে
নিবিড় শান্তির মত, ওমের গরমের মত,মায়ের
স্নেহের মত আমাকে ঘিরে ধরত । আর এক টুকরো
ঘরে বাসন্তীর গেরস্থালির সমুদ্র সফেনের
মধ্যে আমি নিশ্চিন্ত হয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়তাম
।
শীত আসে । বাসন্তী জানায় একটা নয়, দুটো কম্বল গায়ে দিন ।
আমারও আপনার মতই কম্বল আছে।
ভাল কথা, হতেই পারে । সমাজ সবসময়ই আপওয়ারডলি মোবাইল ,পণ্যের
বাজারে হিলহিল করে উপরের দিকে উঠছে লতানে গাছের মত । কিন্তু কোথায় কখন মাচা বাঁধতে
হবে সেটা আর কে বলে দেবে? বাসন্তী বাচ্চাদের টোম্যাটোর স্যুপ বানিয়ে দেয় আর আমাকে
বলে আমি সবসময় ওদের স্পুন দিয়ে ভাত খেতে দি । হাথ সে কভভি নহি ।
আমি আমার ভাত ডাল ঝোল মাখা হাতের দিকে বোকার মত তাকিয়ে থাকি ।
বাসন্তী মাঝে মাঝেই ওদের ফোটো দেখায় , গল্প শোনায় ওর বিয়ের , রাজু
ওর বর , কতো ভালবাসে ওকে ,উঁচু গলায় কথা বলে না । নিজের পছন্দে বাড়ির অমতে বিয়ে,
কিন্তু না, ও পস্তায় নি । ভালোই লাগত শুনতে । এসবের মধ্যে আরো শোনাত ,খুব বড় করে পার্টি
দেবে , মেয়েদের জন্মদিনে । প্রচুর লোক খাওয়াবে । আবার জেনে নিত, আপনি থাকবেন তো
ওইসময় ? কখনো কখনো মিষ্টি বা কেক নিয়ে আসত । তবে বলতে ভুলত না, খা লিজিয়ে ম্যাডাম, বড়া দুকান সে
লায়া হু ।
ফ্রিজের খাবার দাবার এক দুদিনের পুরোনো হলেই ফেলে দিত, অর নিজস্ব ভঙ্গিতে বলত, ইয়ে ফ্র্যাশ নহি হ্যাঁয়
।
মাঝে মাঝে বেশ রাগ হত । দিব্যি সব ভাল রয়েছে । যতোসব বড়লোকি চাল ।
কখনো কখনো বাসন্তীকে সময় মত পাওয়া যেত না । একদিন বাসন্তী নিজে থেকেই বলল, আপনাকে একটা কথা বলা হয় নি। আমি কাছেই একটা
বাড়িতে কাজে যাই ।
খুব বড়লোক বাড়ি । বিজনেস । এক বয়স্ক ম্যাডামের কাজ করে দেয়
। ভাল পয়সা পায় ।
আমার তো কোন গতিই নেই মেনে নেওয়া ছাড়া ।
ধীরে ধীরে বাসন্তী একে একে তার ঝাঁপি খুলতে থাকে , রাজুটা প্রচন্ড নেশুড়ে , মাতাল, রগচটা ।
আমি ভেবে খুব অবাক হই এইতো আমার ঘরের মধ্যেই ঘর , তবু তো
জানতে পারিনা এত কথা, আন্দাজও করে নিতে পারি না । সবই যে বাসন্তী কেমন করে যেন উৎসবের স্বপ্ন দিয়ে রঙ দিয়ে আড়াল করে দেয় , কিছুই বুঝতে দেয় না ।
৩
খুব তোড়জোড় চলতে থাকে কোথায় হবে সেই পার্টি । বাসন্তী গড়গড়
করে অনেক অনেক খাবারের নাম বলে, সেদিনের মেনু । আমার নেমন্তন্ন । নিচের লনে হবে না
ছাদের ওপরে এই নিয়ে অনেক অনেক আলোচনা বার বার শুনিয়ে যায় । জামাকাপড় কেনাকাটি হবে
,সবাই মিলে বাজার যাবে । দেড়শ মতো লোক হবে ।
কলকাতা থেকে বাড়ির লোকজন মাঝে মধ্যে আনাগোনা করে । অফিসে
বেরোনোর আগে বাসন্তীকে বলি, লাল চা একটু
বেশি করে করে রাখো । দাদাবাবু অনেকবার চা খান তো। বাসন্তী বলে বসে দাদাবাবুর চা আর
আমাদের রাজুর ওই মদ , এদের যে কী নেশা বুঝতে পারিনা বাপু ! আমি এই অনায়াস কথনে একেবারে
তাজ্জব বনে যাই ।
বুঝতে পারতাম ওর অনেক পয়সার দরকার । রাজুর ওপর ভরসা নেই ,আবার দু
চোখের স্বপ্নের রঙও ফিকে হতে দেওয়া যাবে না । উৎসবের দিন এগিয়ে আসে , বাসন্তীর হাঁকডাক আর আগের মত শোনা যাচ্ছে
না যে । একদিন জিগ্যেস করি, কি ব্যাপার? কদ্দুর হল তোমার কাজ ?
“না ম্যাডাম, অত বড় করে হচ্ছে না “
“সে কি ? কেন?”
“সেদিন অনেকের খুব অসুবিধে, অনেকে আবার আসতে পারবে না” ।
সেইদিনটা অবশেষে এল । বাসন্তী আর তার মেয়েরা সাজগোজ করেই
দেখা করতে এল । শুধু বাসন্তী বলল, রাতের খাবারটা পাঠিয়ে দেবে । এই দশফুটিয়াতেই ছোটোমোটো
আয়োজন । চিকেন বিরিয়ানি । বাড়িতেই বানাবে
। মাত্র কুড়ি তিরিশ জনের খাবার তো , ও সেটা নিজেই খুব পারবে ।
হঠাৎ আমার নিজেরই ভীষণ খারাপ লাগল , বাসন্তীর জন্য , ওর
অপূর্ণ সাধ আলহাদ গুলোর জন্য ।
রাত না পোহাতেই বাসন্তী
আবার জানিয়ে দিল সামনেই বিরাট পুজো আচ্চা
। মন্দিরে খুব জাঁকিয়ে ধুমধাম করে পুজো দেবে ওরা । খুব শিগগিরি । সেদিন দারুণ সব
ভোজ খাওয়া হবে ।
আপনি থাকবেন তো ?
বাসন্তীর জুঁই ফুলের বাসি মালা জড়ানো চুলে উৎসবের ঢল , উৎসবের আমেজে ভারি তার চোখের ঘন পাতা ,
উৎসবের স্বপ্নে বিভোর তার দুই কাজলচোখ, আলুথালু মন শুধু নকশা বুনে চলে কাজের ফাঁকে
।
৪
আমি ছিলাম না অনেক দিন । বাড়ি ফিরে দেখেছিলাম আমার ঘর তালাবন্ধ
কিন্তু বাসন্তীর ঘরে কেউ কোত্থাও নেই । বুকটা ধক করে উঠল । অনেকক্ষণ
কেটে গেল। কেউ ফিরে এল না । শুধু একটা ফোন এল ওর দিদির কাছ থেকে । বাসন্তীর কোন খোঁজ নেই । বাচ্চাদুটো নিয়ে কোথায়
গেছে কেউ জানে না । রাজুও নেই । উৎকণ্ঠা উত্তেজনা রাগ বিরক্তি কমে এলে ধীরে ধীরে
জানতে পারি রাজুর হাতে বেধড়ক মার খেত বাসন্তী,বেধড়ক ।রাজু খালি পয়সা চাইত । সেদিন রাতে নেশার পারদ বেশি চড়ে গেলে
মারামারি শুরু হয়ে যায় । কিল চড় লাথি খেয়ে প্রায় বেহুঁশ বাসন্তী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে
আসে কোনমতে । রাজু ওর মোবাইলটা অবধি কেড়ে নেয় । । সেই বড়লোক মহিলার বাপের বাড়ি জয়পুরে তার আস্তানা এখন । আরো জানতে
পারি এরকমই ছিল নাকি ওর প্রতিদিনের জীবন । সেদিন শুধু সহ্যের মাত্রা ছাড়িয়ে
গিয়েছিল । আবার আমার ভয়ানক আশ্চর্য হবার পালা । এইতো হাতের নাগালের মধ্যেই
থাকত ওরা । এত নরক হয়েছিল দশফুট বাই দশফুট! কই কোনদিন জানতে পারি নি তো , জানতে
দেয়নি বাসন্তী । প্রত্যেকটা দুঃখের কাঁটার মধ্যে একটা করে লাল গোলাপ ফুটিয়ে দিত সে। কারণ সে কালো হরিণ চোখের মেয়ের জুঁই ফুলের বাসি মালা জড়ানো চুলে উৎসবের
ঢল , উৎসবের আমেজে ভারি তার চোখের ঘন পাতা
, উৎসবের স্বপ্নে বিভোর তার দুই কাজলচোখ, আলুথালু মন শুধু নকশা বুনে চলে কাজের
ফাঁকে ।
যার ভরসায় বাড়ি ছেড়ে গেছি তার এতটুকু দায়িত্ববোধ থাকবে না ?
আমাকে একবার জানালো না পর্যন্ত ! সত্যি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম । বাসন্তীর দিদি এসে সব
জিনিশপত্র সরিয়ে ঘর খালি করে দেয় । সেই ঘর থেকে বের হয় বাসন্তীর সাত গাঁঠরি জামাকাপড়
। সলমা চুমকি জরি শিশা বান্ধনি ।
৫
দিল্লি শহরে দশফুটিয়ারা খালি থাকে না । নতুন উমেদার জুটে
যায় সঙ্গে সঙ্গে । পাতা হয় নতুন সংসার ।
কুলার টিভি ফ্রিজ সাঁইবাবা । হাজির হয় বি এ পরীক্ষা দেওয়া সবসময় হাতে ঘড়ি পরা গীতা । কেজো মানুষ কেজো কথা
। কোন একটা অফিসে কাজও করে । সময়ের খুব অভাব । স্বপ্ন দেখে না । নেই খুচরো কথা খরচ
করার ফুরসৎ ।
আবহসঙ্গীতের মত বাসন্তীর ঘরকন্নার তরঙ্গ আমাকে আর ঘিরে রাখে
না । বাড়িটা আবার হাঁ করে গিলতে আসে । আবার ঘুম আসতে চায় না । গীতার ঘড়ি ধরা কাজ ।
এমন সময়ে একদিন হঠাৎ মোবাইলে বাসন্তীর গলা । শান্ত এবং নিস্তেজ । বল্ল ,পালিয়ে
যাওয়া ছাড়া আর কোন গতি ছিল না সেদিন । “আপনা খয়াল রাখনা ,ম্যাডাম“।
বেশ কিছুদিন পর একদিন দুম করে ঝিমঝিমে ভরদুপুরে বাসন্তী এল
। এখন সে দিল্লিতেই থাকে । রাজুর সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই । রাখতেও চায় না । সেই বড়লোক ম্যাডামের বাড়িতেই আছে । চেহারা দেখে মনে
হল ভালোই আছে । ওইটুকু সময়ের মধ্যে বাসন্তী কলকল করে জানিয়ে দিল তার জন্য আলাদা
ঘর, কুলার আর টি ভি আছে । সে মোটেও কাজের লোকের মত থাকে না । ড্রাইভার ছাড়া
ম্যাডাম ওকে বেরোতেই দেয় না । বাচ্চারা
স্কুলে পড়ছে । প্রাইভেট স্কুল , কর্পোরেশনের নয় ।
আমার অনেক কথা কুশল সংবাদ জিগ্যেস করল । যেমনটা ছিল ওর
স্বভাব । স্নিগ্ধ বসন্ত বাতাসের মত, সব জ্বালা সব দুঃখ জুড়নো, নিজে পুড়ে ছারখার
,অথচ তার আঁচ কাউকে বুঝতে দিত না এতটুকু ।বড় একটা কাগজের বাক্স থেকে একটা ঢাউস
পেস্ট্রি বের করে আমাকে দিল । “আমি তো এসব খাই না বাসন্তী” ।
“লিজিয়ে না ম্যাডাম, বড়া দুকান সে লায়া ।“
যাবার সময় একবার আলগা নজর পড়ে গীতার সুস্থির সংসারের ওপর ।
মেয়েদুটো চেঁচায় , আমাদের ঘর,আমাদের ঘর ।
বাসন্তী ওদের হাত
ধরে টানে ,বলে,না বেটা ।এখন এটা আমাদের ঘর নয় । আমি স্পষ্ট দেখি ওর আনত চোখে হালকা
কাজলের মত বিষণ্ণতা লেগে আছে । মুহূর্তেই তা মুছে ফেলে আবার ঝকঝকে হাসি নিয়ে
লিফটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বাসন্তী বলে,
আবার আসব । যখন দরকার হবে, ডাকবেন ম্যাডাম । আমি আসব । আপনি আমার হাতের রাজমা খেতে
ভালবাসেন, একদিন বানাবো। সেদিন রাতেও থাকবো । কেমন?
অনেকদিন পর বড্ড মিস্টি লাগল এই কথাগুলো শুনতে ।
দুপুরের গনগনে রোদে
ফুলে ফুলে ছাওয়া অমলতাসের হলুদ রঙ
মেখে গাছের তলা দিয়ে চলে যেতে যেতে নতুন
করে উৎসবের স্বপ্ন দেখে বাসন্তী । আবার ।
দীপাবলীর স্নিগ্ধ আলোকমালারা যেন ঘিরে রেখেছে লেখাটিকে।দরজা জানলা বনধ করে শব্দের আতিশয্য কে যখন বাদ দিয়েছি,তখন বাসন্তী মনের মধ্যে আলোর উষ্ণতা টুকু দিয়ে গেল।
ReplyDeleteএই যে কয়েকটা কথায় এত আলো জ্বালিয়ে দিলেন আমার মনে, এও কি কম কিছু প্রাপ্তি!
ReplyDeleteভাল থাকুন
যতবার জ্বালাই,
ReplyDeleteততবার নিভিয়ে দাও শিখা,
ভেঙে দাও প্রদীপ।
আমি আবার গড়ি,
প্রজ্জ্বলিত করি।
ভাঙ্গার অহংকারে অন্ধ তোমরা
টেরও পাওনা-
আমিই মাটি আর আমিই কুমোর
যতবার জ্বালাই
ReplyDeleteততবার নিভিয়ে দাও শিখা।
ভেঙে দাও প্রদীপ।
আমি আবার গড়ি,
প্রজ্জ্বলিত করি।
ভাঙার অহংকারে অন্ধ তোমরা
টেরও পাওনা
আমিই মাটি আর আমিই কুমোর...
বাঃ কি সুন্দর
ReplyDelete