সন্ন্যাসিনী ক্রিশ্চিনা
একমনে জপমালার একটা একটা পুঁতি গুনে চলেছেন । ছোট্ট
গুহাঘরে নিস্তেজ আলো । আবছা আলোয় নির্জন মায়াবী প্রার্থনা ঘর । ক্রিশ্চিনার সাদা কাপড়ের
প্রান্তভাগ ছিঁড়ে গেছে , দুচোখের পাশে আর কপালে সরু সরু বলিরেখা । বেশ কয়েক মাস
আগে এফেসাস থেকে কয়েকজন সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে এখানে এসেছেন , প্রায় লুকিয়ে, আগ্নেয়
গিরির লাভা জমে জমে গড়ে ওঠা এই বিস্তীর্ণ পাথুরে অচিন প্রান্তরে । লাভা পাথরের
আপাত নরম জমিতে ছোট ছোট গুহা অনেকদিন ধরেই
খুঁড়ে খুঁড়ে বের করে এনেছে অতীতের লোকজন । সেখানেই এখন তাদের সাধনা , প্রার্থনা , মানুষের সেবা ,
পড়াশুনো , ফেস্কো আঁকা পাথর মাটি গাছপালা ফুলের রঙ দিয়ে । তবে সময়টা ভালো নয় । ত্রাস ও আতঙ্কের ছায়া । অস্তিত্ব সংকট । ঘোরতর । পালিয়ে
পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা ,বিভিন্ন দিকে বিভিন্ন প্রান্তে ।
ক্রিশ্চিনা প্রার্থনার মধ্যে ডুবে গেছিলেন । হঠাৎ একটা ডুকরে ওঠা
কান্না । একটি শিশুর নিষ্প্রাণ দেহ । বয়স বড়জোর চার পাঁচ । রবিন । কোনো সোরগোল
নয় । খুব শান্তভাবেই শিশুটিকে ওই প্রার্থনা ঘরের কোনায় সমাধি দেওয়া হল । ক্রিশ্চিনার
দু চোখ বেয়ে নীরব জলের ধারা । তিনি মুখ
ওপরে তুল্লেন । মৃদু আলোয় দেওয়ালে আঁকা ভগবান যিশুর করুণা ঘন মুখ, নরম দুই চোখ ।
সবাই চলে গেলে তিনিও মাথা
নিচু করে গুহা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন । জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর । কোথাও যেন
এতটুকু কষ্ট নেই , শোক নেই , মালিন্য নেই । যতদূর চোখ যায় নিরাভরণ প্রস্তর প্রান্তর । বরফ
জল বাতাসে ক্ষয়ে ক্ষয়ে কী বিচিত্র তার গঠন । তারই খাঁজে খাঁজে অজস্র অগনিত গুহা ।
কতো সাধু কতো সন্ন্যাসিনী আর তাদের সঙ্গে আসা সাধারণ মানুষ । সবাই
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই আশ্চর্য প্রান্তরে ।
ক্রিশ্চিনা যাবেন আরো দুটো
গুহা পার হয়ে তাদের রান্নাঘরে । পাথর কেটে টেবিল আর তার চারদিকে বসে জনা পঞ্চাশ
একসঙ্গে খাওয়া সারতে পারে । রুটি জলপাই তেল, নুন মরিচ , জলপাই , অ্যাপ্রিকট, আঙুর
মজিয়ে ওয়াইন ।
যেতে যেতেই তার কানে এলো সেই আওয়াজ যা তাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে । ঘোড়ার খুড়ের খট খট খট খট । সবুজ নরম
ঘাস, নাম না জানা হলুদ বুনো ফুল মাড়িয়ে দিয়ে দুরন্ত ছুটে চলেছে । সাদা বাদামি কালো ঘোড়ার দল । তাদের
যারা চালাচ্ছে তারা সব মূর্তিমান আতঙ্ক । তারা
তছনছ করে দেয় সব কিছু ।
ক্রিশ্চিনা তার রোগা শরীরটা চেপে ধরে একটা ফলন্ত অ্যা প্রিকট গাছের
সঙ্গে । তার নিস্তেজ চোখদুটো ধক ধক করে
ওঠে । এভাবে আর কতদিন? তাদের গুহা গুলো একটু উঁচুতে পাহাড়ের গায়ে ।
রাতের বেলা ঠাহর হয় না । বাতিও জ্বলে খুব কম ।
সেই আওয়াজ মৃদু থেকে মৃদুতর হতে থাকে , ক্রমশ মিলিয়ে যায় ভিজে জ্যোৎস্নার
চরাচরে , দিগন্তরেখায় বিলীন ।
২
জ্যোৎস্নায় চরাচরে দিগন্তরেখায় বিলীন সেই ঘোড়ার খুড়ের খট খট মাখন মসৃণ পিচের রাস্তায় একটা
ছোট্ট বাসের চাকায় মিশে গেলো কখন জানতেও
পারিনি । ইস্তানবুল এয়ারপোর্ট থেকে আসছি কায়সেরি । আকাশ পথে একঘন্টার একটু বেশি । ভিড়ের মধ্যে কে
যেন ডাকে “বাবা” । বুকের মধ্যে তোলপাড় । “বাবা” । তুর্কিরা বাবাকে বাবা বলেই ডাকে । ভদ্রলোক ডেন্টিস্ট , ঘরনী টি মনোবিদ , দুটো গুটগুটে সুন্দর বাচ্চা ।
তুর্কিরা খুব গপ্পে । একটা কথা বললে ওরা একশো টা বলে । নো ইংলিশ বলেই স্ত্রী কে
আলাপের মধ্যে টেনে আনেন । ইনি একটু ইংলিশ জানেন তাই । ইস্তানবুল থেকে কায়সেরিতে ,
নিজের বাড়িতে ফিরছেন ।
প্লেন থেকে নেমে সেই ছোট্ট বাসে চড়ে উধাও হয়ে গেলাম কায়সেরির পথে ।
আমার চোখের সামনে প্রসারিত আনাতোলিয়া । ইতিহাসের
এশিয়া মাইনর । ধু ধু প্রান্তরে পড়ন্ত বেলার হলদে কমলা রোদ , সেই নাম না জানা তীব্র
হলুদ ফুলের লাগামছাড়া পাগলামি । উঁচু নিচু
টিলা , নীল পাহাড়ের আবছা চালচিত্র । আর মাঝখানে মাখন মসৃণ পথে জোর ছুটেছে ছোট্ট বাস
। তার সামনে বাঁধা নীল কালো সাদা রঙা ইভিল আই । ছোট ছোট বাড়িঘর ,হুশ হাশ পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছি । কোন লোক চোখে
পড়ে না । বাসেও আমাদের ছাড়া মাত্র দুজন । কতটা যে পথ পেরিয়ে এলাম । চলেছি কাটপাটুকা বা তেজি সুন্দর ঘোড়ার
দেশে । খ্রিস্টের জন্মের
আগে প্রাচীন হিটাইট রা এই নামেই ডাকত
। তারই আজকের নাম কাপাডোকিয়া । এখানে সবচেয়ে সরগরম জায়গার নাম গোরেমি ।
না , আমরা গোরেমিতে নামবো না । তাকে পাশ কাটিয়ে সামনে ছুটে যাই । আর
ক্রমশ আনাতোলিয়ার আশ্চর্য জাদুমায়াভরা
রহস্য প্রান্তর সালভাদোর দালির surreal ছবির মত
আমাকে তার দুই মুঠির মধ্যে গুটিয়ে ফেলতে থাকে ।
বাঁ দিকের এক খাড়াই রাস্তা , সে রাস্তা স্বর্গে গেছে কি না জানি না
কিন্তু আঙুর লতার মাচান পার হয়ে কালো গেটের ওপর থোলো থোলো গোলাপের বেড়া পার হয়ে কী সুন্দর ডিজাইন
করা জলের কল আর গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের
মতো গড়নের মসজিদ পেরিয়ে বাসটা দুম করে
থেমে গেলো । আমি ভাবলাম স্বর্গ হলেও এই উঁচু খাড়াই পথে কেমনভাবে হাঁটবো ? সেই কখন
দেশ ছেড়েছি । চলিচলিচলিচলি পথের নাই কো শ্যাষ ? ড্রাইভার বলল আপনাদের হোটেলের গাড়ি এসে গেছে
। সুনের ড্রাইভার দরাজ গলায় প্রায় হাঁক
ছাড়ে “মের হাব্বা “ ।
টঙের ওপরে আজুরে কেভ হোটেল । আমার বন্ধুবর যতই পরিচয় দিক না কেন একটা
রিনিরিনে বামা কণ্ঠ হোয়ার ইস সুপারনা ? বলে বলে অস্থির । ই মেলে বিস্তর আলাপ
। কিন্তু ইনি যে মহিলা সেটাই জানা হয় নি এতোদিন
। বোকেম আমাকে জড়িয়ে ধরে । চোদ্দশো
ঊনপঞ্চাশ সনের গুহাকে হোটেল বানানো হয়েছে । গোরেমির সরগরম থেকে মাত্র
কিছু দূরে এক দিকশূন্যপুরে আজুরে কেভ । ছড়ানো ছিটনো । উঁচু নিচু । হোটেল করার জন্য অদল বদল
তো একটু করতেই হয় । তা ছাড়া সেই পুরোনো কাঠামোই আছে । একাধিক পরিবার এখানে একসময় থাকতো । গুহা হোটেলের দেওয়ালে মাঝে মাঝে গর্ত ।
বোকেম বলল , ওখানে ল্যাম্প রাখা হত । মানে কুলুঙ্গির আদিমতম চেহারা । আমি টেরাসে
গিয়ে দাঁড়াই । ঠান্ডা হাওয়া । হালকা সন্ধে নামছে , তখন রাত আটটা বেজে গেছে । নিঃশব্দ
নিঃসীম পরিসরে অদ্ভুত পাথুরে পাহাড় । এক
শুনশান দিক চক্রবাল । পাহাড়ের গায়ে গুহা ।
চোখের সামনে কোন বাধা নেই । আকাশ, উল্টোনো বাটি । তখনো নীল। এ কোন
মহাকাশের মাঝে এসে পড়েছি । এই অপার নিঃসীমতা , শূন্যতা , শূন্যতা বা পূর্ণতা , আমি জানি না ,
তার সবটুকু বিশালতা নিয়ে আমার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে । আমি টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছি
এই আদিম প্রকৃতির মাঝখানে । যেন “স্নিগ্ধ পৃথিবীর পাতা পতঙ্গের কাছে চলে” এসেছি । “
হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো”।
৩
বোকেম জানিয়ে দিল ঠিক সকাল নটায় আপনাদের সফর শুরু
হবে । গুহাঘরের ভেতরে বেশ আরাম আরাম গরম । কতো শতাব্দীর পুরোনো কাদের ব্যাবহার করা
ঘর । কে জানে! কেমন যেন আবহমান পথের পথিক, সীমাহীন সময় সরণী বেয়ে চলছি এইরকম একটা অনুভূতি
হচ্ছিল । ব্যাপারটা ঠিক বাস্তব বলে বোধ হচ্ছিল না । বেশিমাত্রায় বোকাদের এরকমই হয়! যদি
বিস্মিত হওয়ার আনন্দ আর ক্ষমতাই হারিয়ে ফেললাম তাহলে আর বাকি কী রইলো ?
পরের
দিন আবার সেই থোলো গোলাপ বেড়া , আঙুর লতার
মাচান, গ্রিক চার্চের মত মসজিদ , সুন্দর কলতলা একে একে সকালের আলোয় উৎরাই বেয়ে
একটা ছোট্ট বাসে আমাদের তুলে দিল । পথে কোন
লোকজন নেই । আমরা গোরেমির দিকে চলেছি । দু তিনটে জায়গা থেকে আমাদের সঙ্গীরা উঠল। বেশির
ভাগই গুহা হোটেল । গোরেমি বেশ প্রাণবন্ত
ছোট্ট একটা ভারি সুন্দর জায়গা । আমাদের সঙ্গী হলেন ইব্রাহিম আর তার বউ , দুটি মালয় কুমারী , একজোড়া দক্ষিণ কোরিয়া , এক
পিস তুর্কমানিস্তান এবং এক ফোঁটা ইংরেজি
বলতে না পারা ভারি স্মার্ট সুদর্শন বয়স্ক
তুরকিশ দম্পতি । আমাদের গাইড বাসে উঠেই
মাতৃ ভাষায় অজস্র কথা বলতে শুরু করল ওই স্মার্ট বয়স্ক সুদর্শন তুরকিশ দম্পতির
সঙ্গে । কিছুক্ষণ পরে আমার নাক বলল ,গলিয়ে যাই? আমি বললুম যাও ।
“ মানে বলছিলুম কি একটু যদি ইংরেজিতে বলেন , আমরা
আবার মেরহাব্বা চিকিস আর গিরিসের ( এন্ট্রি/ এক্সিট ) বাইরে এখনও আর একটাও তুর্কি
শব্দ শিখে উঠতে পারিনি কিনা !”
“আরে না না ,” খুব লজ্জিত হয়ে গাইড সাহেব বলেন
ওনারা একদম ইংরেজি জানেন না ,তাই শুরু করার আগে ওদের একটু বলে নিচ্ছিলাম”। এই বলে
তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে তার ভাষণ শুরু
করলেন। মাসুট ( মাসুদ) প্রোফেশনাল গাইড
,ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি আছে । কাপাডোকিয়ায় নানান ধরনের ট্যুর আছে । লাল , নীল, সবুজ
। দেখলাম আমাদের ট্যুরটা লাল আর সবুজের একটা মিশেল । আমরা দেখলাম গোরেমি ওপেন এয়ার
মিউজিয়াম , ইলহারা ভ্যালিতে হাঁটলাম , আরো দেখলাম লাভ ভ্যালি , ইমাজিনেশন ভ্যালি ,
গোরেমির প্যানোরামা । দূর থেকে রোজ ভ্যালি ।
এর মাঝখানে এক জায়গায় এলাহি খাওয়া দাওয়া , কারপেট আর পটারি ওয়ার্কশপ ঘুরে
দেখা ।
কাপাডোকিয়া এক আশ্চর্য ল্যান্ডস্কেপ নিয়ে হাজার
হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে । অতিপ্রাকৃত ম্যাজিকাল । কখনো মনে হবে যেন অন্য কোন গ্রহ । এই অঞ্চল এই পৃথিবীর নয় ।
৪
এটা কি গাছ বলুন তো? আমি বললুম জানি তো ,আপ্রিকট
। মাসুট হাসে, ইয়েস লেদি ,ইউ আর রাইত ।
আমি মনে মনে বললাম ,আরে ক্রিশ্চিনা সেই কবে রাতের বেলা হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ঘোড়ার শব্দ
শুনে ছিল , এত ভুলে গেলে চলবে ?
আমাদের এখানে প্রচুর অ্যাপ্রিকট হয় । আমরা ইওরোপে
প্রচুর এক্সপোর্ট করি ।
গোরেমি ওপেন এয়ার মিউজিয়াম , নরম ভস্ম শিলায় গড়ে
ওঠা ছোট বড় গুহায় গড়ে উঠেছিলঅসংখ্য চার্চ । কাপাদোকিয়া খ্রিস্ট ধর্মের বড় কেন্দ্র
হয়ে উঠেছিল পঞ্চম ষষ্ঠ শতাব্দীতে । ছোট বড়
গুহা গির্জাগুলোতে ফ্রেস্কো রয়েছে অনেক । নীল সবুজ মেটেলাল , হলুদ খয়েরি
রঙে যিশু , মা মেরি ও সন্তদের ছবি আঁকা । যিশুর জন্ম মৃত্যু । ছবি আছে রোমান
সাম্রাজ্যে খ্রিস্ট ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা
কন্সটান্টাইন ও মা হেলেনার ছবি । সন্ত অনোফ্রিয়াসের অদ্ভুত ছবি । শুধু প্রার্থনা নয় , অপেক্ষাকৃত বড় গুহাগুলোতে
খাওয়া দাওয়া , রান্না বান্না হত । কবেকার চুল্লির আগুনে কালো হয়ে পুড়ে আছে গুহার
ছাদ । পাথর কাটা টেবিল । পূর্ব ও উত্তর আইকনক্লাস্ট যুগের স্পষ্ট তফাত দেখা যাবে
এখানেই । বাইজান্টাইন আমলে তৈরি এসব গির্জাগুলো সঙ্কটে পড়েছিল নতুন ইসলাম ধর্মের
প্রসারে । মূর্তি আঁকা বন্ধ হল অথবা নষ্ট হল । কোন কোন গুহায় শুধুই ক্রশ ।
আগ্নেয় শিলার বিচিত্র ভাস্কর্য কতো হাজার বছর ধরে
একটু একটু করে আকার নিয়েছে , জল বাতাস বরফ যেন তিন শিল্পী । মাসুত বোঝাচ্ছিল , এমন
ক্ষয় চলতে চলতে আগামী একশ বছরে অনেক প্রাকৃতিক ভাস্কর্যই একেবারে হারিয়ে যাবে ।
সরু চিমনির মতো পাথরের স্তম্ভ । কতগুলো স্তম্ভের মাথায় একটা করে পাথরের টুপি বসানো । সবই
ক্ষয় কাজের ভেলকি !
তাই নিজের
মতো করে ভেবে নাও , দাও কল্পনার ঘোড়ার
বলগা ছেড়ে। মনে রেখো এই দেশের আসল নাম সুন্দর ঘোড়ার দেশ, কাটপাটুকা ।
লাল নদীর জলে ধোওয়া লাল পাথরের রোজ ভ্যালিতে
তেরছা রোদের আলো আর হালকা মেঘের মৃদু প্রেম । মস্তবড়
ভাঙা মাটির পাত্র তার পাশে চোখ ঝলসানো নীল ইভিল আই এর গুচ্ছ গাছে বাঁধা । ধুসর বালু রঙা পাহাড়ের ঢালু খাতে কে পেতে রেখেছ সোফা কৌচ ? কে এমন ভাবে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে চাও ? তুর্কমানি
তাতিয়ে দেয় , ওইখানে গিয়ে বসবে ?
সুপর্ণা , অই খানে যেও নাকো তুমি । বোলো নাকো কথা
অই তুর্কমানির সাথে ।
আমি বললুম নাহে ।
অ্যাফ্রেদ?
ধুর , কি যে বল ? আমি হলুম গিয়ে বরিশালের বাঙাল । এই তো সবে ঘোরাঘুরি শুরু । তাই একটু সাবধানী আর কি ! যদি
পা হড়কে যায় !
তুর্কমানি মহিলা কেমিক্যাল এগ্রিকালচার নিয়ে কাজ
করে । ফার্টিলাইজার পেস্টিসাইড এইসব তো ?
উঃ কী ভীষণ খুশি । সে ভাবতেই পারিনি যে আমরা এইসব
বুঝতে পারব !
সেই টার্কিশ দম্পতির ভয়ানক ফিট রূপসী মহিলা কতো স্ট্যান্ড লাগিয়ে কঠিন কঠিন ছবি
তুলতেই থাকল । কিন্তু কতটুকু আর ফ্রেম বন্দী করা যায় ? শুধু হাসি আর চোখ দিয়ে কতো
কথা বলল । ভাষার আর কি দরকার , বেশ চলছে সব কিছু । যত কথা তত ঝামেলা ।
৫
মাসুতের পরিচালনায় খুব চমৎকার একটি জায়গায় খুব
চমৎকার একটি লাঞ্চ খাওয়া হল । তুর্কমানি এক বাটি স্যুপ নিয়ে , আই রেকমেন্দ ফর
ইউ ,বলাতে চোরা চোখে চেয়ে আমি ভাবলাম ওইটা কি
আমি বিলক্ষণ জানি । ঘন দইএর ঘোল। তাতে গুচ্ছের দিল আর পুদিনা
কুচি আর চুষি পিঠের মতো ময়দার টুকরো মেশানো । আমি ভাই খাচ্ছি
না ।
কাপাডোকিয়া থেকেই কয়েকটা কথা মনে আসছিল । যার
প্রথমটাই হল এবারে কি পর্যটক কম? ইওরোপ অ্যামেরিকার বড়লোক পশ্চিমিদের তো দেখাই যাচ্ছে না । তুরকিশ রা যেমন
বাক্যবাগীশ, রঙ্গ রসিক ,বন্ধুবৎসল তেমনি ভালো ব্যাবসাদার । ইহুদি শাইলকের রক্তও
মিশে গেছে হয়তো । ট্যুরিস্টের বাজারে এবার মন্দা । ইস্তানবুলে বোমা ফাটায় পশ্চিম
দুনিয়া কার্যত মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । মাসুত বারবার করে বলতে থাকে , তোমরা দেশে ফিরে
বোলো, এখানে কোন ঝামেলা ঝঞ্ঝাট নেই । স ব ঠিক আছে , সব ।
দেখা হল একটা কার্পেট কারখানা । এগুলো সবই
প্যাকেজের মধ্যে ঢোকানো । অ্যাপল টি , তুর্কি চা । রকমারি কার্পেটের বাহার ।
আকাশছোঁয়া দাম । সাতশো গাঁটের কার্পেট হাতে বুনে চলেছেন এক মহিলা ।
এরপর আমরা ঢুকলাম চেজ গালিপের (গালিব ? ) ওয়ার্ক
শপে । গালিপ খুব নামজাদা মৃৎ শিল্পী । আভা্নোর , কাপাডোকিয়ার খুব নামকরা পটারি
শিল্প কেন্দ্র । গালিপ সেখান থেকেই এসেছেন । বংশ পরম্পরায় এই কাজ করে চলেছেন । গিনেস বুকে নাম উঠেছে । আইনস্টাইনের
মতো দেখতে গালিপ খুব বিখ্যাত,
এটুকু বোঝা গেলো । ঢোকা মাত্রই পটারি নিয়ে একটা ছোটখাটো ডেমো দিয়ে দিল কাদির ,
সারা গায়ে কাদা মাটি মাখা । কুমোরের চাক ,পা দিয়ে ধাঁই ধাঁই করে লাথি মেরে
ঘোরাচ্ছে কাদির । মাটির তালের আকার বদলে বদলে যাচ্ছে । আর চারপাশ থেকে হাই
হুই বিস্ময় ধ্বনি তুলছে আমাদের ছোট্ট
গ্রুপের লোকজনেরা । আবার অ্যাপল টি,
তুর্কি টি আর সারাপ বা ওয়াইন , সেটা আবার ট্র্যাডিশনাল সারাপ টেস্টিসি(
পাত্র) থেকে ঢেলে ঢেলে দেওয়া হচ্ছিল । ওয়ার্ক শপের তিনটে ভাগ । যেখানে গালিপের
সিগনেচার কাজকর্ম আছে সেখানে ছবি তোলা বারণ । বিক্রিবাটা তেমন জমল না । আকস্মিক ভাবে শিল্পী গালিপ কোথা থেকে বেরিয়ে এলেন কিন্তু
সেভাবে কেনাকাটায় তেমন উদ্বুদ্ধ করতে পারলেন না ।
তবে শিল্প কর্ম গুলো অতি চমৎকার । পটারি সেরামিক টাইলস , রঙের আর নক্সার
জলুসদার যুগলবন্দী একেবারে মারকাটারি রকমের ভালো ।
বাস যখন আজুরে কেভে নামিয়ে দিল , তখনও “আকাশ নীল
মদের গেলাস “, টিমটিমে বাতি জ্বলে উঠছে পাহাড়ে পাহাড়ে । মাঝখানে কখন বৃষ্টি এসে
পথে ধুয়ে দিয়েছে । টার্কিতে কথায় কথায় ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি নামে , আবার রোদ ওঠে ।
ঈশ্বর যাকে দেন, ছপ্পড় ফুঁড়ে দেন । এই দেশটিও তাই ।
৬
খুব সকাল মানে রাত তিনটে চল্লিশে ডাকাডাকি শুরু
হয়ে গেলো । চলুন চলুন বালুন (বেলুন) রাইড
করতে হবে । রয়াল বেলুন রাইড কোম্পানি দুয়ারে হাজির । তাদের আপিসে হাজিরা । সাথে
ফাঁসির খাওয়া । এতো সকালে খাবার অভ্যাস নেই । সবাই গান্ডে পিন্ডে খাচ্ছে । সেখান
থেকে বেলুন চড়ার মাঠে গেলুম । হাউ হাউ করে ইয়া বড় বড় বেলুনে দাউদাউ আগুন জ্বালিয়ে
গ্যাস ভরা হচ্ছে , বোঁ বোঁ করে পেল্লাই সব ফ্যান চলছে । বেলুনের সঙ্গে লাগানো বড় বড় বেতের
টুকরির মধ্যে আমরা সেঁধিয়ে যাবো । আমি
মিলিটারি ট্যাঙ্কে দু দু বার চড়েছি মশাই ,এতো আমার কাছে তুশ্চু । ঢুকে তো গেলাম
কিন্তু নামার সময় দুটো তুর্কির কাঁধে চেপে
নেমেছিলাম। ও ,এমন একটু হয়েই থাকে । তা না হলে মজা কিসের ? বেলুন তো উড়তে থাকল ।
কাপাদোকিয়ার সেই আশ্চর্য ভিন গ্রহ সদ্য ফোটা সকালের আলোয় আবার দিগন্তজোড়া ম্যাজিক । আমাদের পাইলট খুব মজা করছেন সবার সঙ্গে
। ঠান্ডায় কাঁপছে চিনে তরুণী । পাইলট জ্যাকেট খুলে তাকে দিয়ে দেয় । উড়তে উড়তে পরিষ্কার ভাবে গুহা
বাড়িগুলো দেখতে থাকি । মাটি থেকে খানিক উঁচুতে । তিনটে পরপর ফুটো , বোধহয়
ভেন্টিলেটর বা রান্নাঘর । নিচে জল বেরিয়ে যাবার গর্ত । জানালা, ঢোকার পথ । ১৯২২
সনে তুর্কি গ্রিক জনগন বিনিময়ের সময় পর্যন্ত অনেক পরিবার এই গুহাগুলোতেই থাকতো । আজও
নাকি অনেকে গ্রিস থেকে তাদের পুরোনো গুহা দেখতে আসে , নাতিপুতিদের দেখাতে আসে । মানে
বহু বহু কাল ধরে বংশ পরম্পরায় গুহাতেই থেকে গেছে এদিকে । বেলুন কিন্তু নির্দিষ্ট জায়গায় নামতে
পারল না । বাতাসের গতি তাকে অন্যদিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো । উড়ন্ত বেলুনকে অনুসরণ করে
চলে কোম্পানির গাড়ি । সেও রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না । অস্থির পাইলট
ওয়াকি টকিতে নির্দেশ দিচ্ছে আর বলছে চবক চবক চবক মানে জলদি জলদি তাড়াতাড়ি । ঠিক এই সময়ে যখন পাইলট ঝোপঝাড়ের মধ্যে কোথায় নামাবো কোথায় নামাবো, ঠিক করতে পারছে না , সে সময় একটা কিছু ঘটলো । আমি ক্রিশ্চিনার গুহাঘর দেখতে পেলাম । বেলুন
যখন দুলে দুলে জমি আঁকড়ে ধরছে সেই সময়
লম্বা লম্বা একসারি সরলবর্গীয় গাছের ফাঁক দিয়ে দেখলাম ছুটে চলেছে তেজিয়ান চকচকে
খান চারেক ঘোড়া ।
সফল বালুন রাইড সেলিব্রেট করা হল শ্যাম্পেন দিয়ে
। আমোদের এখানেই শেষ নয় , আমাদের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হল মেডেল । কি সব যাচ্ছেতাই হাস্যকর বালখিল্য ব্যাপার ! তবে ভালো লাগছিল খুব । পাইলট মনে করিয়ে দিল সেই
কথা , সব্বাইকে মনে করে বলবেন টার্কিতে কোন ঝামেলা নেই । চিনে তরুণী দৌড়ে এসে
মোবাইল বাগিয়ে ধরে কি দেখাতে থাকে , দেখি দেখি । আমির খানের দঙ্গল । বেইজিং এ
দেখেছে সে । তার খুব ভালো লেগেছে । গার্ল পাওয়ার ! দারুণ !
৭
আজই কাপাদোকিয়ায় আমাদের শেষদিন । ব্রেকফাস্টের পর
আজুরে কেভের সেই প্রশস্ত টেরাস , গরম নরম ঘর আর ভারি মিস্টি মেয়ে বোকেম কে টাটা
করে সুনের এর গাড়ি করে সোজা পিজন ভ্যালি । লাভা পাথরের গায়ে ছোট ছোট গর্ত করে পায়রাদের
থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছিল । কবে ? কে
জানে ! হাজার হাজার পায়রা থাকতো এখানে আর তাদের
বর্জ্য ,সার হিশেবে ব্যাবহার হত । এখনো দেখি উজ্জ্বল রোদ্দুরে ঝাঁক ঝাঁক
পায়রা । তাদের দানাপানির ব্যাবস্থা । আর পিজন ভ্যালি বাঁচানোর আর্তি , পর্যটকদের
কাছে ।
হাতে সময় খুব বেশি নেই । আমরা আবার কোনিয়ার বাস
ধরবো । সুনের আমাদের নিয়ে চলেছে কেমাকলি । রেল স্টেশনের মতো একটা কাউন্টার । আমরা
টিকিট কাটলাম । প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা কাপাদোকিয়ায় এক আজব দুনিয়া বসিয়েছে তেমনি মানুষের কঠোর শ্রম আর মেধা কীভাবে ভস্ম
শিলার নরম দেহে মাটির নিচে বসবাসের এক বিপুল আয়োজন করেছে তা দেখলে বিস্ময়ের ঘোর
কাটতেই চায় না । বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি কি গুলে খেয়েছিল এরা ? এই পাতালঘর খ্রিস্টের
জন্মেরও আগে থেকে । সেই হিটাইটদের আমলে । কিন্তু এগুলোর ব্যাপক ব্যাবহার শুরু হয়
খ্রিস্টান দের হাতে । নিজেদের আরব বিধরমীদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচবার তাগিদে ।
নিজেদের ধর্ম রক্ষার তাগিদে ।
একজন বয়স্ক গাইড বাবা ছেলেকে খুব মন দিয়ে
বোঝাচ্ছেন । মন্দার বাজারে ভিড়ভাট্টা নেই । আমরা বললাম আপনাদের সাথে জুড়ে যাই ?
ভদ্রলোক সহাস্যে রাজি । এরা দুবাইএর ভারতীয় । বাবা ছেলে বন্ধু বন্ধু । বাবার আগ্রহ
উৎসাহ ছেলের চেয়ে ঢের বেশি । গাইড বাবা মুস্তাফার সঙ্গে সেই পাতালঘরে প্রবেশ করি ।
ভেতরে আলো জ্বলছে । আবার একতলা দোতলা
তিনতলা চারতলা , লখনোউ ভুলভুলাইয়ার ঠাকুরদাদা । সবটা মাটির তৈরি । ঘরের ভেতর ঘর, তার মধ্যে ঘর। ঘরের মধ্যে সুড়ঙ্গ ।ওপর নিচ ।
একতলা দোতলা । সুড়ঙ্গের মধ্যে কখনো মাথা নিচু , কখনো হামাগুড়ি । ওরে বাবা , কাল
ঘাম ছুটে যাচ্ছে । ঘর বানানোর, শ্ত্রুর চোখে ধুলো দেবার কী প্যাঁচ পয়জার!
শোবার ঘর , বসার জায়গা , কমিউনিটি ডাইনিং ,
পাকশালা, তেলের বাতি রাখার জায়গা, দানা শস্য রাখার জায়গা । পিপে পিপে মদ আর তেল রাখার জায়গা । আঙুর পিষে
মদ বানানোর নিখুঁত ব্যাবস্থা । মশলা পেষাই ।
পুজোর ঘর, জল নিকাশ , বাইরের আলোহাওয়া আসার ছিদ্র, বর্জ্য পদার্থ কপিকলের
সাহায্যে বাইরে ছুঁড়ে ফেলা, ঘন্টা বাজাবার ব্যাবস্থা ।একটা বিশাল গোল পাথরের দরজা
। ব্যাস একবার ঘরাং করে বন্ধ হয়ে গেলে যতই
চিচিং ফাঁক বল না কেন , সে দরজা খুলতে পারবেই না তুমি । শত্রুর মুখের সামনে
দড়াম করে সে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হত । কিন্তু কী ভীষণ শক্ত ছিল সে জীবন । কী ভীষণ উৎকণ্ঠা ছিল । মাটির তলায় এই
আয়োজনে বিস্মিত হলেও কেমন যেন বিষণ্ণ হয়ে পড়লাম ।
বাবাছেলে জুটি দারুণ ফুর্তিবাজ । আশি বছরেরও বেশি
মুস্তাফা আরো প্রাণোচ্ছল । বাইরে বেরিয়ে আসি । হাঁফ ছাড়ি ।
সুনের আবার স্টিয়ারিং ধরে । সে একেবারেই ইংরেজি
জানে না । কতগুলো এবড়ো খেবড়ো শব্দ আর
প্রবল হাত পা ছুঁড়ে সুনের যা বলতে চাইল তা হল , নো ট্যুরিস্ট নো মানি । তার তিন
মেয়ে । সবাই বায়না করে খেলনা দাও। চকোলেট দাও , এটা দাও সেটা দাও । দিলেই তুমি কী
ভালো বাবা ! আর না দিলেই বাবা নো গুড নো গুড ।
বাইরের দেশ আমাদের দেশ নিয়ে যা তা বলছে । বলছে নো
টার্কি নো টার্কি , টার্কি মানেই বম বম বম
। কোথায় বম্ব ! দেখো সব কি সুন্দর ! কি সুন্দর আমাদের এই জায়গা !
সুনের আমাদের বাস টারমিনাসে নামিয়ে দেয় । ঝাঁ
চকচকে পরিষ্কার । আমাদের বাস আসতে একটু দেরি । বাস সময়ের কাঁটা ধরেই ছাড়বে ।
সুনের মেরহাব্বা বলে হাত নেড়ে চলে যায়। যেতে যেতে
থামে , একটা গাছ থেকে কিছু ছিঁড়ে আমার হাতে দিয়ে বলে আপ্রিকত !
আমি তুরস্কের প্রেমে পড়ে গেলাম ।
সন্ধ্যাকালে গর্ভে ফেরা নিরুপায় বেচারা
পথিক
সেই জন্ম-মৃত্যু চক্রে, চরাচর সমুদ্র
সৈকত
সৈকত
ঢেউ আসে , ফিরে যায়, বালি নুনে
আমিও তো বাঁধা
আমিও তো বাঁধা
এ জন্মে কী থাকবে? কিছু শব্দ , কিছু সুর ,
নশ্বরতা!
কবরের নেমপ্লেটে যে শোক, আমি কি বন্ধু
তার !
তার !
নেমে যাই নীচে, দেখি শবদেহ হয়েছে
উধাও
অস্থি-বাস্তবতা –মোহ গ'লে ফোটে রোদ্দুরের
হাসি
পাহাড়ের খোঁজে ফের মোমের মাচিস
হারালাম।
কবিতা ঃ “বাদামি চিনি “ সোমাভ রায়চৌধুরী
জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইন নেওয়া হয়েছে
ছবি
ঃ সুপর্ণা দেব
একটা ঘোরের মধ্যে পুরোটা পড়লাম। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়েরির পাতা। এতো সুন্দর বর্ণনা, যে পাঠক পড়তে পড়তে মোহিত হতে বাধ্য। ছবিগুলোও যথোচিত মনোরম। কখনো বা রহস্যময়। সবচেয়ে বড়ো কথা তোমার কলমের তাগদ। মানস রায়চৌধুরীর কথাও মনে পড়ছিলো। তিনিও আমাদের এইভাবে গল্প শোনাতেন। তুমি তাঁরই উত্তরসূরি। সত্যিই তোমাকে ঈর্ষা করি। কেমন জীবনটাকে ভোগ ক'রে নিচ্ছো। এরকম মাদকের মতো লেখা আরো চাই। সঙ্গে চোখ জুড়নো ছবি। কুর্নিশ, মিঠুদি (সুপর্ণা দেব) !
ReplyDeleteআমার মন ভরে গেলো দীপন । তুই এতো লিখলি । তোর কবিতা টা আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে । ভাল থাকিস বাবু
ReplyDeleteতুরস্ক দেখছি।পরবর্তী পর্যায়ের অপেক্ষা ।এত সুন্দর যে বাস্তব মনে হয় না।প্রেমে পড়ে গেলাম।
ReplyDeleteকৃতজ্ঞতা অনুরাধা
Deleteখুব সুন্দর লেখা, সুপর্ণাদি... চোখের সামনে দেখতে পেলাম তুরস্কের ছবিগুলো।
ReplyDeleteরেহান ভালো লাগলো , তুই পড়লি ।
Deleteতুরস্ক ভ্রমণ হলো তো।পরবর্তী পর্যায়ের অপেক্ষা ।এত সুন্দর যে বাস্তব মনে হয় না।প্রেমে পড়ে গেলাম যে।
ReplyDeleteঅনুরাধা , আপনি সবসময় খুব উৎসাহ দিয়েছেন । ভালোবাসা
ReplyDeleteএই বাঙ্গালের দৌড় আঙ্কারা অবধি -- তা ও দুদিনের Satellite Conference-এ.... একেবারে তুর্কী-নাচন নাচিয়ে ছাড়া ইটিনিয়ারি।
ReplyDeleteতবু সেই তূরীয় তুরষ্কের কিছু মনে আছে-- আর মনে পড়ল সেই একছরা ছড়া ।
★
হীরেমন দেশটা, গোলাপের চরকি
ভালোমন লোকজন,দোস্ত কি--ইয়ার কি !
লোক মজে লোকুমে, মেযে আর বর্কি,
মিলিমিশ আছে , নেই "তোর কি... আমার কি ? "
দেশজোড়া পাখিরালা, সুফিয়ানা সুর কি !
হামামে শাহমামে ভরা -- তুর্কি..টার্কি ।
( সদ্য Turkiye ফেরৎ যিনি, তিনি জানেন বটে, কিন্তু বাঙ্গালপ্রতিম দের জন্য জানাই :
লোকুম (lokum) : ' turkish delight ' dessert,
মেযে (mezze) : elaborate pre-dinner spread,
বর্কি : apricot
হামাম : grand bath
শাহমাম : musk melon, খরমুজ
★
আর হ্যাঁ, লেখাটি কেমন লাগল ?
সে কথা তো তুরষ্কের সেই প্রবাদকথা- ই বলে গেছে :
" bundan iyisi Şam'da kayısı ."
--- The only thing better than this is an apricot in Damascus .
আরে জনাব সালাম কবুল কিজিয়ে । কৃতজ্ঞতা ।
ReplyDelete