Thursday 5 January 2017

সত্যি কথা

মাধবন নায়ার মাথাটাকে একবার ডানদিকে একবার বাঁ দিকে করছে । সামনে গাদা গাদা কাগজ , ফাইল , রিপোর্ট । এতো অস্থিরতা কেন হে ? আমি জিজ্ঞেস করলাম । 
না, মানে ঘরটার এদিক থেকে ওদিকে কে যেন চলে গেলো । 
তা কি করে বুঝলেন ?
না, মানে ওই আপনার মাথার পেছনে কাঁচের জানালাটায় রিফ্লেকশনে মনে হল কে যেন একটা চলে গেলো ।
এই কে যেন কে মাধবন নায়ার একাধিকবার আমার আপিসঘরে দেখেছে । মাধবন নিতান্তই ভালো মানুষ । কোনরকম বদ রসিকতা করা ওর পক্ষে অসম্ভব ।
ম্যাডাম “?
কি” ?
বেল দিলেন যে ? চা আনব ?” পিওন সাহেব জিজ্ঞেস করে ।
 
কই ? বেল বাজাই নি তো ? “
শুনলাম যে
 
এই ঘটনা যে কতবার ওই একই অফিসে পুনরাবৃত্ত হয়েছে আমার নিজেরও মনে নেই ।
 
আমার ছোট পিসি ছিল মেয়েদের ইশকুলের বড়দিদিমনি । সেই সুবাদে প্রচুর ছাত্রীর সঙ্গে ভাব ভালোবাসা হয়ে যেত । সেই রকম এক ছাত্রীর ফরেস্ট অফিসারের সঙ্গে বিয়ে হয়ে কোন ঘন জঙ্গলে সংসার পাততে গেলো । মেয়েটি ,খাট আরও সব ফার্নিচার পাততে গিয়ে দেখল ঘরটা সামান্য ঢালু । যাই হোক পিজবোর্ড এই সব দিয়ে টিয়ে নিচের পায়াগুলো ম্যানেজ করে ফেলল । সারাদিন প্রায় একাই থাকে । ঘুটঘুটে জঙ্গলে চারদিকে বড় বড় গাছে ঘেরা তাদের বাড়ি । টিটির টিটির পাখি ডাকছে , আর কানে তালা ধরে যাবার মতো নিস্তব্ধ চারদিক । কাজ কম্ম বিশেষ নেই , মেয়েটি বেতের সোফায় এলিয়ে বসে আছে আর চূড়ান্ত ব্যাজার হয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে , এমন সময় দ্যাখে কি একটা বোতল যেদিকে ঘরের ঢাল আছে তার তার উল্টো দিকে মানে নিচু থেকে উঁচুর দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে । অর্থাৎ অদৃশ্য কেউ এই কাজ টা করছে , তা না হলে এটা কোনভাবেই সম্ভব হতে পারে না। স্বামীর কাছে যথারীতি কি যে সারাদিন আজগুবি সব ভাবো “, এইসব পিত্তিজ্বলা বাণী শুনে চুপ করে রইলো । একদিন তার অসহ্য দাঁতের ব্যথা , যথারীতি বর টি বাড়ি নেই । মেয়েটি যন্ত্রণায় ঝিমিয়ে পড়েছে মাথা নিচু করে । এমন সময় তার মাথার চুল শক্ত মুঠি করে ধরে কে যেন তাকে তুলে ধরছে । মেয়েটি ভাবল তার বর বোধহয় রসিকতা করে এই কাণ্ড করছে । সে ভয়ানক ঝামটা দিয়ে ,দেখছ না ব্যাথায় মরে যাচ্ছি , আর উনি এলেন ইয়ার্কি মারতে ,কিন্তু কথাটা শেষ করতে পারল না । দেখল ঘরে কেউ নেই , অদৃশ্য দুটো হাত তার চুল ধরে তাকে তুলে ধরছে । মেয়েটি এইটা বুঝেই ঘামতে ঘামতে দে ছুট ।
জঙ্গলে ভুতের গপ্পো বাবার কাছেও অনেক শুনেছি । 
পঞ্চায়েত জিলাপরিষদ অডিটে একবার নদীয়া গেছি । সার্কিট হাউসে রাত্রিবাস । ঘরটা গোড়া থেকেই ভালো লাগছিল না । একটু কেমন যেন , এগুলো আবার ঠিক ভাষায় বুঝিয়ে লেখা বা বলা যায় না । আমার মনে হল ঘরে যেন অনেক লোক আছে । রাতের খাওয়া হয়ে যাবার পর বুঝলাম ত্রি সীমানায় কেউ থাকছে না । আমি টিভি টা চালিয়ে রাখলাম । কিছুতেই ঘুম আসে না । আবার মনে হচ্ছে ঘরে অনেক লোক । হঠাত পিঠের ওপর কে যেন আঙুল চালাল , কি অসভ্য রে বাবা ! এ দিকে কাউকে দেখাও যাচ্ছে না যে দুটো গাল দেবো ।
 
সল্ট লেকের বাড়িতে দু একবার মাত্র মনে হয়েছিল ,ঠিক যখন প্রদীপ জ্বালানো হল , ধূপ জ্বলে উঠলো , ঘণ্টা বাজছে , মনে হল পেছনে দু তিনজন দাঁড়িয়ে ।
তবে সোমা গুহর ঘরে অনেক দিন ধরেই কেউ নিশ্চিত বসত করে । 
সে চলতে ফিরতে বেশ বুঝতে পারে । রান্না করার সময় ঘাড়ের কাছে প্রায় নিঃশ্বাস ফেলে । গা শিরশির করে । পুজো করার সময় সোমা গুহ টের পায় সে বেশ খাটের ওপর গুছিয়ে বসেছে । পুজো শেষ হলে আবার এসেছিলে তবু আসো নাই এর মতো করে চলে যায় । বোধহয় কোন শাশুড়ি ভূত হবে । সোমা গুহর সাফ কথা , থাকছ থাকো , কোন ঝামেলা পাকাবে না বলে দিচ্ছি ।
 
তবে সত্যি কথা বলতে কি , আমার মেসোমশাই , মানে সোমা গুহর বাবা খুব জবরদস্ত ভাবেই আছেন , যেভাবে তিনি আগে ছিলেন , জীবনকে , মানুষকে , সকলকে ভালোবেসে ।সদাতৃপ্ত , কোনদিন কারুর নিন্দা করেন নি । তবে হ্যাঁ , খুব মিতব্যয়ী ছিলেন । ব্যাপারটা হল , সোমা গুহদের একই ফ্লোরে দুটো পাশাপাশি ফ্ল্যাট ।
 
একটাতে মেসো থাকতেন । তিনি চলে যাবার পর , মাঝে মাঝেই বারান্দার রকিং চেয়ারে সবুজ লুঙ্গি পরে সন্ধে বেলা বসে থাকেন , অস্ফুট স্বরে প্রিয়জনদের ডাকেন । ওনার হালকা কাশির শব্দও ভেসে আসে । আর আলো পাখা নেভাতে ভুলে গেলে তিনি নিজেই বন্ধ করে দেন । আগে ওরা বুঝতে পারতো না , ভাবত ফিউজ হয়ে গেছে , বাল্ব কেটে গেছে । কিন্তু না , তা নয় । মিতব্যয়ী ছিলেন তো তাই এইসব বে আক্কেলে কাজ কারবার তাকেই এখনো দেখতে হয় ।
আমার বন্ধু মনীষা , তার মাকে ওইরকম পাট পাট করে শাড়ি পরা কোমরে তিনকোনা করে রুমাল গুঁজে সোফায় বসে থাকতে দেখে । আমি বলি ,কি রকম 
শা ড়ি রে ? ওই যেটা পরে চলে গেলো , সেটাই ।
 
মনীষা ওর বাবার পায়ের কাছে ঘূর্ণির মতো কী একটা ঘুরপাক খাচ্ছে দেখতে পায় । তখনো মায়ের বিদায় শেষ হয় নি । তিনি ফুলসাজ নিয়ে শুয়ে আছেন । বেশ কিছু ক্ষণ সেই ঘূর্ণি মনীষা লক্ষ করে , তখন প্রায় সন্ধে নামছে , উঠোনে বেরিয়ে মনীষা দেখে উঠোনের মধ্যে একটা গাছ , তার মাথার কাছাকাছি বুক পর্যন্ত ভেসে উঠেছে তার দাদু দিদিমা । তারা বলছেন মনীষার মায়ের নাম ধরে , প্রীতি , সুবোধকে এবার ছেড়ে দাও । ঘরে ফিরে মনীষা আর সেই ঘূর্ণি টা দেখতে পায় নি । তবে মায়ের অস্তিত্ব টের পেয়েছে বহু বহু বার ।
 
বাবা বলতেন , পুজোয় বসার আগে আসন কিছুক্ষণ পেতে রেখো । কোন পুণ্যাত্মা নাকি এসে বসতে পারেন । আলো আর সুগন্ধ ছড়িয়ে কেউ বা রেখে যায় তাদের স্পর্শ । ছোট্ট মৌটুসি পাখি অজান্তে কখন খাটে এসে বসে । সে উড়ে গেলে বাবার পাণ্ডুলিপির ভেতর থেকে মৌটুসির কবিতা হাতে উঠে আসে ।
ফেবু বন্ধু সুজাতা রায় Sujata Roy তো হুমায়ুনের সমাধিতে ভর দুক্কুরবেলা বিজলি হানা সুর্মা পরা দুখানি ইরানি চোখ দেখে প্রায় মুচ্ছো যাচ্ছিলেন , সে আবার অদৃশ্য হবার আগে একটু মুচকি হেসেও ছিল ।
তবে আমি আরও একটু দুঃসাহসী হয়ে জিন দেখতে চাই । মাঝরাতে মল্ল কৌষিক রাগ গাওয়া হবে , কড়া তামাকের ভুরভুরে গন্ধ যেই না উঠবে তখন আমি আর দিলীপ ঘোষ দাDilip Ghoshকি করব সেই টাই দেখার জন্য আমি কতদিন অপেক্ষা রয়েছি । তাই আপাতত ঠিক সুর লাগাবার নিদারুন চেষ্টা করে যাচ্ছি
সা গ ম ধ নি সা / সা নি ধ ম গ , ম গ সা । 
গ ধ নি কোমল করে মোলাম করে লাগাতে হবে ।
Top of Form

2 comments: