মাইট পোকা খালি চোখে দেখা যায়
না । এরা আণুবীক্ষণিক । সারা গায়ে রোঁয়া রোঁয়া , পাঁচ ছটা শুঁড়,বিকট দর্শন ।
জামাকাপড়ের ভাঁজে , পুরনো বইপত্রের খাঁজে বিছানা বালিশে চাদরে ঘরের ধুলোর মধ্যে
মাইট পোকারা লুটোপুটি খায় আর গান গায়, আয়
তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি নাচিবি ঘিরিঘিরি গাহিবি গান । হাতের কাছে
মাইক্রোস্কোপ থাকলে হয়তো ওদের নাচন কোঁদন দেখতে
পেতাম। এদের ছোঁয়াচ
লাগলেই প্রথমেই একটা বড় হ্যাঁচ্চো । মাইটদের সঙ্গে আমার একসময়ে বিরাট ফাইট হত । আমি
পরাস্ত হতাম অচিরেই । ভয়ানক ভাবে । অবস্থা হত একেবারে দি হাব্বারফ্লুয়াস
ইন্ফ্যাচুফুয়েশন অব আকবর
ডর্বেণ্ডিক্যালি ল্যাসেরটাইজট্ দি গর্ব্যাণ্ডিজম্ অফ হুমায়ুনের মতো। আমার মা তার দুবলা মেয়েকে বাঁচাবার জন্য সারাদিন অদৃশ্য
মাইটদের সঙ্গে লড়াই করতেন । তখন ইন্টারনেটের সুবিধে ছিল না আর মা কোনদিনই টেক
স্যাভি ছিল না । মেডিক্যাল জার্নাল ঘেঁটে ঘেঁটে মা মাইটদের সম্মন্ধে বিস্তর জ্ঞান
লাভ করেছিল । আম্মো ধীরে ধীরে মাতঙ্গিনী
হাজরার মত লড়াই করে ওদের হারিয়ে দিয়েছি অনেকগুলো বছর । ইদানীং দেখছি ওরা একটু আধটু
প্রতিশোধ তুলছে , সফলও হচ্ছে । এখন তো মা
নেই । থাকলেও কোন অতলে তলিয়ে যাওয়া মন আর অশক্ত শরীর দিয়ে মাইটদের রাইট কেড়ে নিতে
পারতো না । তবে মন্দের যেমন ভালো থাকে, অন্ধকারের যেমন আলো , তেমনি মাইটরাও কিছু
ব্রাইট জিনিশ রেখে যায় । পুরনো বইপত্রের ভেতর থেকে প্রায় হলুদ এই পাতা টা
মাইক্রোস্কোপে দেখলে দেখা যেত মাইটদের গোলটেবিল বৈঠক চলছে । আর হাঁচতে হাঁচতে আমি
দেখছিলাম সারি সারি খুদি খুদি লেখা । বাবার একটা কবিতার লাইন ছিল- এখখুনি বৃষ্টি
হয়ে গেল/কবিতায় থাকে ভিজে ঘাস ।
সেই রকমই ওই খুদি খুদি অক্ষরে বাঁধা পড়ে আছে পুরো একটা সময় , তার উষ্ণতা ,
শৈত্য , গলার কাছে চিনচিন , বুকের মধ্যে তোলপাড় , পাথরের গায়ে ভিজে ফার্ন ,
স্লেটের ছাদে বৃষ্টি , আলোর ডোমে বসে থাকা মথ , বাড়ির টান । কবিতাটা দিলাম । তবে শশধর বাবুর নজরে পড়লে হয় ।
ওখানে রয়েছে
বাড়ি,মা রয়েছে,রয়ে গেছে প্রেমের মানুষ
আর তার পিছনেই সূর্য ওঠে প্রতিদিন ভোরে
ওখানে পাথরগুলো বৃষ্টিপাতে নড়েচড়ে উঠে
হয়ে ওঠে এখনও সবুজ
ওখানে কখন যাবি,ভালো করে ভেবে নিয়ে বল
নিয়ে যেতে হবে কিন্তু ভিতরের যত লীনতাপ
ছেড়ে যেতে হবে সব সম্পন্ন কলার ছেঁড়া কোট
খুলে ঝেড়ে নিস কিন্তু যত পয়সা উল্টে পকেট
কেন রে পয়সা দিয়ে কি হবে রে ওখানে তো দিগন্ত বাগান
মা ভেজে রেখেছে মুড়ি, দেওয়ালে নুনের কারুকাজ
না হয় ভুলেই যেতি ওটা তোরই কান্নার দেওয়াল
আমি খাবো দু-পয়সার তিনখানা ঠান্ডাজলকাঠি
আমিও তাহলে যাব বড় মাঠে বাদাম কুড়োতে
ওখানে রয়েছে বাড়ি, ভাই আছে, বাদামের গাছে
লটকে আছে ঘুড়ি আর চাঁদ
একটাও পকেটমার
নেই ।।
কবিতা ঃ যশো ধরা রায়চৌধুরী
অক্ষরে সময় ধরা পড়ে সত্যিই ।
ReplyDeletethik
ReplyDelete