Thursday 5 January 2017

দিল্লি দাস্তান ৮


Jamali Kamali calling
জামালি কামালি ডাকলে তো না গিয়ে উপায় নেই । তারা তো আর মোবাইল বাজাবে না,  দু ছত্তর লিখবে না বা কাউকে পাঠিয়ে তলব করবে না । তারা হল গিয়ে সাধু সন্ত । নানা রকম হিশেব বহির্ভূত তরঙ্গ , কম্পন হৃদয় মস্তিষ্ক নিউরোন ইত্যাদির ভেতর দিয়ে নানান বোতাম টিপে কলকাঠি নাড়ে । তার ওপর সন্ধে নামলেই পুরো ব্যাপারটা আবার জিনদের দখলে চলে যায় । আগেরবার  আরকিওলজিক্যাল দপ্তরের পাহারাদারদের অনেক ভুজুং ভাজুং দিয়েও জামালি এবং কামালির সমাধিঘরের দরজা খোলাতে পারিনি । তাই এবার আটঘাট বেঁধেই মাঠে  নেমেছি শুনেছিলাম ছোট চারকোনা সমাধিঘরের দরজা খুলে গেলেই সেটা নাকি বেগম সাহেবার গয়নার বাক্স হয়ে যায় । কেমন করে ? ম্যাজিক!
গিয়ে দেখলাম সেই জাদুঘরের দরজা আগে থেকেই আধখোলা , আশ্বিনের রোদে  ভেসে যাচ্ছে মস্ত খোলা প্রাঙ্গন । আমরা ঢুকলাম । জাফরি জানালা দিয়ে চৌখুপি কেটে আলো ঢুকছে ঘরে । মসৃণ পালিশ করে দুটো সাদা পাথরের সমাধি । আর ছাদে , খিলানে , দেওয়ালে চোখ জুড়নো নকশা , নীল লাল আর সাদা । যারা একেবারে গম্বুজের মাথায় উঠে নিজেদের নাম খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে লেখে , আবার শতাব্দীর পর শতাব্দী কোনমতে জেগে থাকা বুড়ো শরীর টাকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে হৃদয় পদ্ম খোদাই করে ,সেইসব কুলতিলকদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এই অতুলনীয় রূপময় শিল্পরস একটু অধরা মাধুরী গোছের করে রাখা হয়েছে ।
একজন কর্মী আমাদের জানালেন দিনের মধ্যে একবার তিনি এখানে আসবেনই কারণ অদ্ভুত শান্তি এখানে । এখানে এলে মন ভালো হয়ে যায়, শরীরটা অনেকটা ভালো মনে হয় , একটা ফিল গুড ফ্যাক্টার কাজ করে । হয়তো তাই । জামালি খুব বড় সুফি সাধক এবং কবি ছিলেন । সেই ইব্রাহিম লোদির আমল থেকেই তার কাহিনি শুরু । সিকান্দার লোদি, নিজের  শের শায়েরি , জামালিকে দিয়ে কারেকশন করিয়ে নিতেন । বাবর এবং হুমায়ুনও খুব সম্মানের সঙ্গে জামালির কথা বলে গেছেন । তিনি খুব প্রভাবশালী কবি ছিলেন এবং নানান কাজে তাঁকে নানান দেশে  প্রচুর ঘোরাঘুরি করতে হত । কিন্তু কামালি কে ? অনেকে বলে কামালি তার অভিন্ন হৃদয় এক বন্ধু । অথবা স্ত্রী । অথবা  ভাই অথবা কেউ নয় । কামালি স্রেফ একটা শব্দ ঝঙ্কার , কামাল কথাটার মধ্যে একটা চমৎকারিত্ব লুকিয়ে আছে । আবার হয়তো তাঁর প্রেমিক । সুরা আর সাকির , সাকি তো একজন কোমল বালক । রুমি হাফিজের অনেক কবিতায় সেই পুরুষ সৌন্দর্যের গুণকীর্তন। ফার্সি শায়েরির মাসুক , মেহবুব , হাবিব,  মানে প্রিয় বোঝায় যা যা শব্দ দিয়ে সে সবই পুরুষ বাচক । জামালির একখানা কবিতা নিয়ে সেই ঝিম ধরা সকালবেলায় গাছের তলায় বসলাম  কি সব কবিতা ! কি সব ভাষা ! কি বলব একে? ষোড়শ শতকের চূড়ান্ত আধুনিক কবি? কবিতায় উঠে আসা এক অদ্ভুত রহস্যময় সম্পর্ক নেশার মতো বুঁদ করে রাখল সেদিন।

















2 comments: