Tuesday 19 March 2019

উড়ো কথা


দেশের কথা খুব মনে পড়ছিল বলেই ওই অর্বাচীন পটুয়াকে ডেকেছিলেন। দরজার ওপর একটি আঙুর পাতা , শুধু এইটুকুই । সে ব‍্যাটা আঁকলো একটা তিন্তিড়ী পাতা। তাও ঠিক মতো না।
গঙ্গা রিডি দেখার খুব ইচ্ছে । মহামহিম সম্রাট বিপাশা নদীর পুবদিকে আর এলেন ই না। গঙ্গারিডির রাজাদের বিপুল প্রতাপ, সম্রাট কে বিচলিত করেছিল বৈকি! তাই তার এই অঞ্চল টি দেখার বড় সাধ।তিনি তাই সেলুকাসের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। যাত্রাপথে একটি মশা মাছি ও দুর্গন্ধ যুক্ত কর্দমাক্ত জনপদে কিঞ্চিত অসুস্থ হয়ে পড়েন । আমাশয় আর অম্বলে । একটি গৃহে বেশ কিছু দিন বাধ্য হয়ে কোনমতে বাস করেন। সেই সময় পত্র পেটিকায় গ্ৰিক বর্ণ মালায় তার নামের প্রথম অক্ষর টি অঙ্গার চূর্ণ আর বিল্ব ফলের আঠা মিশিয়ে লিখে দেন। সেই সময় তাঁর মায়ের হাতের আঙুর পাতায় মোড়া দোলমার কথাও তীব্র ভাবে মনে হত ।এরপর সুস্থ হয়ে যাত্রা পুনরায় শুরু করার সময় সেই যে দরজায় তালা ঝুলিয়ে উধাও হলেন মেগাস্থিনিস, আর প্রত্যাবর্তন করলেন না।



2
স্যান্দ্রোকোট্টাসের কী অদ্ভুত ভাইগ্য ! সবসময় চরম শত্রুর মেয়েকে বিয়ে করতে হয় ! নন্দ রাজার মেয়ে ধুরধরা । তাঁর প্রিয় পত্নী হয়ে গেলেন । সুখেই ছিলেন । কিন্তু ভূতে কিলোতে কতক্ষণ ? ইদিকে আলেকজান্দারের মারা যাবার পর তাঁর পুব দিকের রাজত্বের ভার নিলেন সেলুকাস । খ্রিস্টের জন্মের তিনশ বছর আগে । গ্রিক হিদেন সব মিলেজুলেই চলছিল । এর মধ্যে বয়সে প্রায় চল্লিশের স্যান্দ্রাকোটাস ঝিলাম নদীর ধারে হেলেনাকে দেখে ফেললেন । হেলেনা তখন একটা গ্রিক গান গাইছিল । ডো রে মি লা , ওরকম কিছু একটা হবে । স্যান্দ্রা তাঁর পায়রার পায়ে বেঁধে চিঠি পাঠাতে শুরু করলেন । হেলেনাও খুব একচোট প্রশ্রয় দিলেন । কিন্তু তার বাপ সেলুকাস চটে একেবারে গরম লাল মুসাকা হয়ে গেলেন । স্যান্দ্রা হিদেনের ছেলে ! লাগল যুদ্ধ । সেলুকাস হেরেও গেলেন । সন্ধি হিশেবে মেয়েকে সেই হিদেনের হাতেই তুলে দিলেন । সেই মেয়ে গ্রিক ছেড়ে সংস্কৃত শিখল , এদেশের নাচ শিখল । এর মধ্যে স্যান্দ্রা জৈন ধর্ম নিয়ে গৃহত্যাগ করলেন । সাঁচি স্তূপের ভিজে দুপুর সেই সব কথা ফিরিয়ে আনল । স্তূপ গঠনে কত গ্রিক ছাপ । ব্রাহ্মী খরোষ্ঠী লিপিতে স্তূপ বানানোর জন্য বিভিন্ন দাতাদের নাম লেখা । উর্দুর মত ডান দিক থেকে বাম দিকে পড়তে হয় । পেটমোটা যক্ষ মূর্তি , দেখলেই মনে হয় লাফিং বুদ্ধা । ভারতবর্ষ একটা উমদা খিচুড়ি । এটা নিয়ে ঝগড়া না করে উপভোগ
করাই বুদ্ধিমানের কাজ । তাই আলেকজান্দার বলেছিলেন , সত্য সেলুকাস। কি বিচিত্র এই দেশ !







3
সারনাথের মৃগদাবে তথাগত ধর্ম প্রচার করেন। প্রথম বার। হরিণের বন। ধর্ম প্রচারের সময় দুটি হরিণ তার দুপাশে শান্ত হয়ে বসেছিল। সঙ্ঘের চারপাশে তারা ঘুরঘুর করতো সবসময়। গোতমচন্দ্রমা স্নেহ করে তাদের নাম দিয়েছিলেন অভিলিখ আর অনিমিখ।

এই তথ্য অন‍্য কোথাও পাওয়া যায় না। রাঢ়দেশীয় ভিক্ষুনী সুপ্পন্না একটি ক্ষীণ কায় পুঁথি তে লিপিবদ্ধ করেছিল। মৃগদাব থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বারানসী তে এক ভাঙা মন্দিরে সেই পুঁথি আবিষ্কার করা গেলে ও মালদা যাবার পথে অনুরাধা নাম্নী এক গবেষকের ঝোলা থেকে সেটি লোপাট হয়েছে।



4
অদিতি ব্যাগের চেইন খুলে ঝপ করে দুটো কথার ফালি ভেতরে ঢুকিয়ে মুখটা সাঁ করে টেনে দিল।খুব ধারালো কথা।মিহিন ছুরি। ঝিরিঝিরি একমুঠো ফাজলামি আলগোছে ছোট পকেটে ছুঁড়ে মারে।পাতলা করে কাটা চারটে গোপন তেরছা কথা ভেতরের ছোট খোপে রাখা আছে।রাখা আছে বনের ছায়া র আচ্ছাদনের মতো তার ব্যাগের মধ্যে কিছু খুচরো অভিমান। এভাবে অদিতি ওর ব্যাগ টার মধ্যে খন্ড খন্ড টুকরো টুকরো ফালি ফালি মিহি মিহি নানান সাইজের ঝাল মিষ্টি তিতকুটে কষা ব্যঙ্গ শ্লেষ রাগ রসিকতা বিরক্তি দুষ্টুমি খুনসুটি ভরে ভরে রাখে। সারাদিন ধরে। এবার হলো কি, ব্যাগ টার ও তো ভার বইবার একটা লিমিট আছে। গেল ফেটে একদিন ফটাস করে।আর যত কথা র দঙ্গল জানালা দিয়ে বাথরুমের নালি দিয়ে বেরিয়ে পড়তে চাইছে। পর্দা বেয়ে নেমে এসে খাটের তলায় সেঁধিয়ে যাচ্ছে। বেগতিক দেখে অদিতি পড়িমরি করে একটা নতুন ব্যাগ কিনতে ছুটলো। কিন্তু যে সে ব্যাগের কম্মো তো এটা নয়। একমাত্র সুরুল শ্রীনিকেতনের ব্যাগ ই তার কথাগুলো কে আঁটসাঁট করে ধরে রাখতে পারে। তেমনি একটা ব্যাগ পাওয়া গেল । নতুন ব্যাগ। অনেক খোপ।কথাগুলো ও যে যার খোপে ঢুকে যাবে।
অদিতি মহসিনের গলায় তখন বাজছে" খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি আমার ব্যাগের ভিতরে...."
মারবেন না। পষ্ট শুনলাম।

No comments:

Post a Comment