গাড়িটা দাঁড় করানো হয়েছিল কালভারটের ওপর । কারণ হাতি নাকি কাল ভারটে উঠতে পারেনা। গহিন বন । রাতে জঙ্গল আরো রহস্যময় । অন্ধকারেরও একটা ভাষা আছে । সে ভাষা খুব জোরালো । বলা হল,গাড়িতেই বসে থাকো। কি দরকার অন্ধকারে বিপদ ডেকে আনার? হেডলাইট বন্ধ। নিকষ কালো অন্ধকার সঙ্গে নিয়ে এল বুনো গন্ধ,শিরশিরে হাওয়া আর ঝিঁঝিঁর ডাক ।
কারা যেন চারপাশে ফিসফাস এসে বলল বেরিয়ে এসো। এসেই দেখোনা। সাবধানী মন নেমে এলো বাইরে। হঠাৎ দেখলাম অন্ধকারের মধ্যে আলোর ঝলক । একরাশ টর্চ যেন জ্বলে উঠলো একসঙ্গে । বন্ধ হয়ে গেল, আবার জ্বলে উঠল। জ্বলছে, নিভছে। জ্বলছে, নিভছে। একসঙ্গে ,একতালে । এতো টুকু ছন্দ ভাঙছে না ।
জানতে পারলাম ওগুলো জোনাকি ।রাশি রাশি, ঝাঁক ঝাঁক ,অজস্র, অগুনতি । জ্বলছে, নিভছে। জ্বলছে, নিভছে। কার জন্য? কার বিনোদনে?
গরুমারা এলাকার খুনিয়ার জঙ্গলে আমি এক অপার্থিব দৃশ্যের বিস্মিত সাক্ষী হয়ে রইলাম সেই রাতে ।
সেদিন হঠাৎ আলো চলে গিয়েছিল । অনেক রাত তখন । ঘরে শুধু আমি আর অন্ধকার । দম আটকানো অন্ধকার যেন বুকের ওপর চেপে বসছে । আমি ভয় পেয়েছিলাম ।ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছিলাম । যদি চৌকিদারের দেখা পাওয়া যায় ! যদি একটা মোমবাতি পাওয়া যায় !অনেকটা লম্বা অন্ধকার পেরিয়ে হোঁচট খেয়ে ধাক্কা খেয়ে দরজা খুলে বাইরে এলাম । নিশ্চুপ রাত,নিশ্ছিদ্র অন্ধকার।কেউ কোথাও আছেন...বলে ডাক ছাড়তে যাব চোখে পড়ল ঘন অন্ধকারে চাঁদ নেই,তারা নেই, শুধু ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য আলোর ফুলকি । তিস্তা নদীর ধারে জলপাইগুড়ি সার্কিট হাউসের দোতলার বারান্দায় কে যেন আমার পা দুটোকে আটকে রেখে দিল ।আমি অন্ধকারের আকাশে জোনাকির আলোয় নক্ষত্রের সংকেত দেখতে থাকলাম ।
এইদুটি ঘটনাই অনেকদিনের পুরোনো । আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনি ওই দুই রাতকে । পেছন ফিরে তাকালে যে লম্বা জীবনটা পরে থাকে তাতে এইকরম ই অজস্র জোনাকির মেলা । আমার এই অকিঞ্চন জীবনে সেই সব সুখ দুঃখ সেই সব ভাললাগা গুলোকে নিয়ে এই জোনাকিমেলা । কোটি কোটি ব্লগের মধ্যে আরো একটি নগন্য সংযোজন । জোনাকিমেলা নাম টা নিয়েছি আমার বাবার কবিতা https://www.facebook.com/basudeb.deb.sansad?fref=ts থেকে ।“কবিতা বদল হবে জোনাকিমেলায়”। তবে তার মানে হয়ত অন্য ছিল ।
মাথার মধ্যে বাবা বলে উঠল “আর কিছু কথা” কবিতার বইটা নিয়ে শেষ কবিতাটা দেখ ।তাই ই করলাম। বইটা নিয়ে শেষ পাতা টা খুললাম। তবে এটা দিয়েই হোক জোনাকি মেলার সূচনা ।
আরো কিছু কথা আমাদের
জোনাকির মতো রয়ে যায়
প্রকৃতির গোপন ভাঁড়ারে
বৃষ্টির ফোঁটার মতো ঘাসে
বারে বারে তারা ফিরে আসে
আমরা তো থাকব না কেউ
মানুষের চির স্বপ্নে
তবু তুমি,রয়ে যাবে সোনা
সেই সব ভুলের মাধুরী আর হারানো ঠিকানা
চুরি করে হানা দেবে একাকী বিষাদ
কবে কোন বনপথে হঠাত লাফিয়ে পড়েছিল
বাঘিনী ও চাঁদ
এক ঝাঁক অবৈধ বৃষ্টির চুমু দুর্লভ দুপুরে
থাক তারা থাক
ক্রমশই সুন্দর রহস্যময় হতে থাক তারা
কেবল তাদের জন্য
ভালোবেসে দুঃখ পায় যারা
No comments:
Post a Comment