Saturday 28 June 2014

নামে কী এসে যায় ?

মাদের বাড়িতে ইলেকট্রিকের যাবতীয় কাজ করত জগা । এখনও করে । হামেশাই তার আবির্ভাব ঘটে আমাদের বাড়িতে । বাবা  একদিন তাকে জিগ্যেস করেন ,হ্যাঁরে জগা ? তোর কোন ভাল নাম নেই? 
হ্যাঁ জ্যাঠামশাই ,আছে।  আমার নাম আসলে জগন্নাথ 
একদিন জগা মন দিয়ে  বারান্দায় দেওয়ালির টুনি বাল্ব লাগাচ্ছে মায়ের ফরমাইশ মতো। বাবা জগন্নাথ জগন্নাথ বলে ডাকছে ,জগা সাড়া দিচ্ছে না । বাবা কাছে গিয়ে খুব জোরে ডাকায় জগা খুব লজ্জা পেয়ে বলেছিল “আসলে ওই নামটা শোনার তেমন ওব্যেস নেই তো । আপনি আমার পাড়াতে গিয়ে ওই নামে খোঁজ করলে কেউ কিচ্ছু বুঝতেই পারবে না।

 আমাদের চারপাশের লোকজনদের অনেকের নাম আমরা অনেক সময় জানতেই পারি না বা জানার চেষ্টাও বড় একটা করি না  যেমন কেউ  হয়ত সারাজীবন মুখারজিদা,মুখারজি বাবু, ওহে মুখুজ্জে এইসব শুনেই কাটিয়ে দেয়। কিন্তু তার যে একটা কিংশুকবরণ বা অমিতকিরণ গোছের সুমধুর নাম থাকতে পারে সেটা আর কেই বা ভেবে দেখছে? সে রকমই মেয়েদের ক্ষেত্রে মিস বা মিসেস । আবার অমুকের মা তমুকের মা বলে ডাকবার রেওয়াজ আছে । অথবা  আবার কিছু কিছু পেশা যেমন ড্রাইভার, দারোয়ান যাদের সঙ্গে  প্রায় প্রতিদিনের সম্পর্ক, তাদেরও নাম অনেকে জানেই না  বা জানতেও চায় না    মোট কথা  যাদের সঙ্গে প্রতিদিনের লেনদেন তাদের তার নাম না ধরে ডাকার ব্যাপারটা আমার বাবা পছন্দ করতেন না।

সে যাই হোক না কেন , বাবার এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভাল লাগত।  কারুর আসল নাম খোঁজার মধ্যে যেন তার অস্তিত্ব, তার সত্তা টুকু কে খুঁজে নেবার চেষ্টা । আমি নকল করতে চাইতাম এবং নাকালও  হতাম অনেকসময় ।
একবার আমাদের আপিসে আমার এক সহকর্মীর গাড়িটা আমার দরকার হয়েছিল । ফিরে এসে  তাকে জানিয়ে দিই , “বিট্টুকে ছেড়ে দিয়েছি।

কে?  বিট্টুটা আবার কে? তাকে তুমি ছাড়তেই বা গেলে কেন? আর তাতে আমিই বা কী করতে পারি?”

বললাম, “তোমার ড্রাইভারটাকে ছেড়ে দিয়েছি ।আমার কাজ হয়ে গেছে।

ওঃ তাই বল ! তা ওর নাম বিট্টু নাকি?”

ভুবনেশ্বরে বদলির সময় বাবা সঙ্গে গেছিলেন  বাড়ি পেতে কিছুটা দেরি হবে। আমরা গেস্ট হাউসে আছি আপিসের লোকেরা বলে গেছে এখানকার কেয়ারটেকার কাম কুক কাম চৌকিদার ঘড়াই আপনার দেখভাল করবে। আমি কাজ টাজ বুঝে নিয়ে গেস্ট হাউসে ফিরে বুঝতে পারলাম বাবা এর মধ্যে ঘড়াই এর আর্থ সামাজিক অবস্থানের একটা হিশেব নিয়ে ফেলেছেন অর্থাৎ বাড়িতে কে কে আছে? কটি ছেলে মেয়ে? তারা পড়াশুনো করে কিনা ? স্ত্রীর ঠিকমতো যত্ন সে নেয় কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি । কিন্তু আমাকে দেখেই বাবার প্রথম কথা হল জানিস ওর একটা ভাল নাম আছে । যোগিন্দর মানে যোগীন্দ্র আর কি!
আমরা ওকে যোগিন্দর বলে ডাকা শুরু করলাম । প্রবল মুখচোরা যোগিন্দর একদিন জানাল রান্নাঘরে কয়েকটা জিনিশ না কিনলেই নয় , আমি যেন অফিসে একটু বলে দিই ।
ঠিক আছে ।বলে দেওয়া যাবে।

আমি বড় বাবুকে ডেকে বলি শুনুন,যোগিন্দর বলছিল কতগুলো জিনিশ তাড়াতাড়ি কিনতে হবে।

যোগিন্দর? গেস্ট হাউসে?  ম্যাডাম আপনি নতুন এসেছেন,কার সঙ্গে কথা বলেছেন কি জানি? একা একা 


থাকেন। অজানা অচেনা লোকের সঙ্গে এত কথা বলবেন না । ওখানে যোগিন্দর বলে কেউ থাকে না । 



ওখানে ঘড়াই থাকে ,ঘড়াই।


বাড়ি পাবার পর আমার   সাহায্যকারী হিসেবে পেলাম রেড্ডিকে ।  আশ্চর্য ! এরও আসল নাম কেউ জানে না । ওকে সব্বাই রেড্ডি বলেই জানে । রেড্ডি কর্মপটুত্বে নয়, হৃদয় গুণে আমাদের সকলের মন জয় করেছিল। বাবা পরে বেড়াতে এসে জেনে নিয়ে ছিলেন ওর নাম পি কৃষ্ণ মোহন রেড্ডি । বাবা যখন কৃষ্ণ মোওও হঅন বলে দূর থেকে লম্বা ডাক দিতেন আমি পষ্ট দেখছি রেড্ডির বডি ল্যাঙ্গুএজ বদলে যেত ।তার চোখদুটো চকচক করে উঠত, কান পর্যন্ত  টানা হাসি নিয়ে সে দৌড়ে চলে যেত বাবার কাছে ।

বাবা  আমাদের ছেড়ে চলে যাবার পর টেলিফোনের ওপাশ থেকে কান্না মাখা গলায় রেড্ডি বলেছিল ,’সাবজি মুঝে কৃষ্ণ মোহন বুলাতে থে । অ্যায়সা কোই নহি বুলায়া আজ তক

2 comments: