সেটা ছিল
দুঃস্বপ্নের রাত । দুর্যোগ আর দুর্ভাগ্য । ইসফাহানের (পারস্য) সাফাভি রাজবংশ
ছারখার করে দিল নাদির শাহ । এই রাজপরিবারের ছেলে মির্জা নজফ কাউকে বাঁচাতে পারেন
নি ঠিকই ,কিন্তু তার ছিল রাজপরিবারের রক্ত,
যোদ্ধার রক্ত ।সে জন্ম যোদ্ধা । থামতে সে শেখেনি ।
পারস্য থেকে তাকে তাড়িয়ে দিল নাদির শাহ । রাতভোর জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে একরাশ
অনিশ্চিতি মাথায় নিয়ে সাফাভি রাজ সন্তান পৌঁছলেন বালুচিস্তান । সেখান থেকে আওয়াধ ।
তুখোড় বুদ্ধির জোরে অনেক অনেক ওপরে উঠলেন । আওয়াধ তখন রমরমিয়ে চলছে । দিল্লির ওপরে তার খুব প্রভাব ।
দিল্লিতে এলেন মির্জা নাজাফ । ১৭৬৪ সনে বক্সার
যুদ্ধে তাকে দেখা গেলো । তখনও তিনি আওয়াধের ,তবে
লড়াই করেছিলেন মোঘল পতাকার সম্মানে। মোঘল সাম্রাজ্য তখন ধ্বসে পড়ছে ক্রমশ । মির্জা
নজফ হলেন মোঘল সেনাবাহিনীর প্রধান । কমান্ডার ইন চিফ । ৯০ হাজার সুদক্ষ সেনা আর
২৫০ টা কামান তার দখলে । দ্বিতীয় শাহ আলম তখন সম্রাট। নজফের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল
ভেঙে পড়া মহলের ফায়দা লুঠতে চান নি । কলাটা মুলোটা রত্নটা পোখরাজটা জায়গিরটা না
হাতিয়ে তিনি সেনাবাহিনীতে নানান কলা কৌশল এনেছিলেন । অনেকটাই ইওরোপিয়ান ধাঁচে ।
বন্দুক গোলাগুলি এইসব নিয়ে । তখন ব্রিটিশদের থেকেও বড় শত্রু ছিল ঘরে । রোহিলা জাঠ
আর শিখ । নজফ যতদিন বেঁচেছিলেন শাহজাহানাবাদের গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দেন নি ।
এদের উৎপাত থেকে রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে তিনি শাহজাহানাবাদের কিছু দূরে নজফগড়
দুর্গ তৈরি করেন । এখন অবশ্য সে সব ভেঙ্গেচুরে গেছে । সাম্রাজ্য ঝুরঝুরে হয়ে
যাচ্ছে । বিপদ ঘাড়ের ওপর ঝুঁকে পড়ছে । সেনাবাহিনীর মনোবল যাতে না ভেঙে পড়ে ,
তারা যাতে বিদ্রোহী না হয়ে ওঠে মির্জা নজফ তার
জন্য খুব সচেতন থাকতেন ।
মির্জা নজফ বালোচ , মোঘলদের শেষ প্রতাপশালী কমান্ডার ইন চিফ ।
কী নিরাভরণ তার মকবারা । অনেকে বলেন তখন ভাঁড়ে মা ভবানী । কাজেই অত ইলাহী কাজকারবার করা সম্ভব ছিল না ।
কী নিরাভরণ তার মকবারা । অনেকে বলেন তখন ভাঁড়ে মা ভবানী । কাজেই অত ইলাহী কাজকারবার করা সম্ভব ছিল না ।
প্রশস্ত চারকোনা মকবারা । কোন মিনার নেই , গম্বুজ নেই । সবুজ সবুজে মাখা মাঠে দোল খাচ্ছে অজস্র মরসুমি ফুল । কাঠবেড়ালি । ছোট সিমেন্টের বসার জায়গা কানের মধ্যে ফিসফিসিয়ে বলছে, বোসো । যারা ভিড়ভাট্টা পছন্দ করেন না , তারা আসুন না এখানে । কি নিরালা , কি শান্ত । মির্জা নজফ বালোচ যেন বলছেন , অনেক যুদ্ধ করেছি অনেক রক্ত ঝরেছে । সেই সুদূর ইস্ফাহানের ঘর ছেড়ে কতো পথ ঘুরে বড় ক্লান্ত । এখন ঘুমুব ।
“কতো
মানুষের কান্না হাহাকার পরাজয় আর অপমান
আহা কতকাল ঘুমোয়নি সে
আজ সে ঘুমুবে ,আমার মোমবাতি”
আহা কতকাল ঘুমোয়নি সে
আজ সে ঘুমুবে ,আমার মোমবাতি”
কবিতা বাসুদেব দেব
No comments:
Post a Comment