ঘুম্মি কাবাবের নাম
শুনেছেন? এমা শোনেন নি ? আমিও
কোনদিন শুনিনি । তবে কথাটা ঘুম্মি কাবাব নয় , কথাটা
ঘুম্মি কাবাবি মানে ঘুম্মি নামক একজন কাবাব বানানেওয়ালা মানে খেটে খাওয়া কোনরকমে দিন গুজরান করা আম আদমি ।
এ আমাদের ঘনাদা টেনিদা ফেলুদা এদের মতো একটা চরিত্র । চরিত্রটির
স্রষ্টা আশরাফ সুবুহি দেহেলভি । ইনি একজন স্কেচ রাইটার । আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন
। আমি কিন্তু জানতাম না ।এনার চরিত্ররা সবাই খুব
সাধারণ মানুষ, কসাই , নাপিত, কাবাবওয়ালা, এইসব। ঘুম্মি ,জামা
মসজিদের সিঁড়িতে বসে কাবাব বিক্রি করে । ঘুম্মিকে সব্বাই চেনে তার জিভে জল আনা
কাবাবের জন্য। ঘুম্মি মাংসে মশল্লা মেশায়, পেঁয়াজ কাটে,পুদিনা
পাতা কুচোয়। ঘুম্মির কথার ধার ওই কাবাব
বানানোর শিকের মতই । একেবারে চোখা চোখা। আর কায়দাটা ওইখানেই । প্রচুর হিউমার
মেশানো কথাবার্তা চলে ঘুম্মি এবং তার খদ্দেরদের মধ্যে। যেমন লম্বা লাইনের শেষে দাঁড়ানো একটা লোক
চেঁচিয়ে বলল , অ্যাই ঘুম্মি , মেরা
কাবাব তো দে দে । তুখখুনি ঘুম্মি কটাং করে একটা জুতসই জবাব দেবে । একবার আশরফ
সাহাব আলিগড়ের একদল মুরুব্বির জন্য ঘুম্মিকে কাবাব বানাতে নিয়ে গেলেন । এই শুরু হল কথাবার্তার চমকানি । কথাবার্তার এই মারপ্যাঁচ নিয়েই দিল্লিতে
রমরমিয়ে চলে দাস্তানগোই । ব্যাপারটা এমনিতে
দেখতে বেশ মনোরম । একটা চারপাই শাদা চাদর দিয়ে টানটান করে রাখা থাকবে । দুপাশে খুব কায়দা করে
বেশ বড় বড় দুটো মোমবাতি ,কাঠের মোমদানের ওপর রাখা থাকবে । গল্প বলা শুরু
হলে ওগুলো জ্বালানোও হবে অবিশ্যি । এছাড়া গ্লাসের বদলে থাকবে দুটো বেশ
জামবাটি সাইজের রুপুলি রঙের রেকাবি । জল খাবার জন্য।
একজন মহিলা এবং একজন পুরুষ দাস্তানগো লখনৌ চিকনের কাজ করা শাদা জোব্বা জাব্বা
টুপি সারারা ঘারারা পরে তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে
বসে গল্প বলতে শুরু করবে । ওই পুরোনো দিল্লি , তার
গলিঘুঁজি , তার কাবাব পান ,তার
মধ্যেই ঘুরপাক খেতে খেতে বিস্তর উর্দু বলতে থাকবে ।আর মাঝে মাঝে ওই জামবাটি থেকে
জল খাবে । আমি তো বাঁশবনে ডোমকানা ।ঘুম্মি কাবাবির শ্লেষ বিদ্রূপ রঙ্গ
রসিকতা সবই মাথার ওপর দিয়ে শনশন বয়ে চলে গেলো । শ্রোতারা সবাই কী ভীষণ খুশি হল ।
কতো কতো তালিয়া আর ওয়াহ ওয়াহ । আমিও মুখটা খুব হাসি হাসি করে বসে রইলাম ।মহিলা
দাস্তানগো ফৌজিয়া বার কতক আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে নেড়ে নানান রসের কথা বলে গেলো ।আমিও মাথা নাড়লুম
।এখন যে বাংলা জানে না তার সামনে যদি কেউ হ য ব র ল বা কমলাকান্তের দপ্তর পড়তে
থাকে তার যেমন অবস্থা হবে আমারো তাই।
শিখিপাখা মিশিপাখা আকাশের
কানে কানে/শিশি বোতল ছিপি ঢাকা সরু সরু গানে গানে, ন্যাড়া
বলল এই গানটা আজকাল সে গায় না , বেশ শক্ত তো । ছাগল
ব্যাকরণ সিং বলে উঠলো কই শক্ত? আমার তো ওই শিশি
বোতলের জায়গাটা ছাড়া আর কোথাও শক্ত লাগলো না !
আমার সামনে আবার একপট মশলা
চা , ইলাইচির গন্ধে ভুরভুর , এক্সট্রা মালাই মারকে । কি জ্বালাতন!
তবু ভালো একগাদা ভ্যারেন্ডা রেখে গেছে কে বা কারা ! তাই ভাজলাম । আর
বাবার আচাভুয়াকে মনেমনে ভক্তি ভরে পেন্নাম
ঠুকলাম ।
No comments:
Post a Comment